ইক্যুইটির বাজার অস্থির। অস্থির অবস্থার কারণে প্রফিট বুকিং করছেন কিছু ইনভেস্টর, অন্যরা পরিস্থিতি যাচাই করছেন এখনও। এই সময় কি নতুন টাকা লগ্নি করে স্টকের দাম কমে আসার সুবিধা পেতে পারবেন? তাতে কি পরবর্তীকালে লাভবান হবেন না আপনি? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছেন মান্না ক্যাপিটাল কর্ণধার নিখিল কুমার মান্না। উত্তর রইল নিচে, তাঁরই বয়ানে।
হ্যাঁ, আমি মনে করি পরিস্থিতির উপর নজর না সরিয়ে, নতুন উদ্যমে লগ্নি করার মানসিক প্রস্তুতি নেওয়া উচিত হবে। ভ্যালুয়েশন যে কমেছে, তা তো বোঝাই যাচ্ছে। মিড ক্যাপ এবং অবশ্যই স্মল ক্যাপে তা যথেষ্ট উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। তবে মধ্যমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগকারীর অসুবিধা হবে না। বরং দাম কমে আসার সন্ধিক্ষণে ভালো স্টক (এবং ফান্ড) আবার আয়ত্তে চলে এল, এমন ধারণাই পোষণ করা দরকার। তাহলে অ্যাভারেজ প্রাইস আরও আকর্ষণীয় হবে, নতুন লগ্নিকারীর পক্ষে তা হবে অতি প্রয়োজনীয়। এই প্রসঙ্গে প্রাথমিকভাবে কয়েকটি পয়েন্ট তুলছি। পড়ুন, সংক্ষেপে লিখছি।
১. এক, যদি বিশেষ কিছু স্টক বা ফান্ড আপনার পোর্টফোলিওতে ইতিমধ্যেই থাকে, এবং সেগুলো ফের কিনতে চান, তাহলে এই-ই আপনার সুযোগ।
২. দুই, নতুন বিনিয়োগ সবটা একসঙ্গে করবেন না। উদ্বৃত্ত যা হাতে আছে, তা ধীরে ধীরে সিস্টেম্যাটিক পদ্ধতিতে আংশিকভাবে লগ্নি করুন।
৩. তিন, পরিস্থিতির উপর নজর রাখতেই হবে। সজাগ থাকুন, ভালো দাম পেলে তা উৎসাহের অভাবে হাতছাড়া যেন না হয়ে যায়।
যদি প্ল্যানমাফিক লগ্নি করতে চান কিন্তু পুরোপুরি ঝুঁকি সমেত ইক্যুইটি এড়িয়েও চলতে চান, তাহলে আমি তিনটি বিশেষ ধরনের পোর্টফোলিওর কথা বলব। এখানেও রিস্ক থাকবে অবশ্যই, কিন্তু পুরোমাত্রায় স্মল ক্যাপ বা একশোভাগ মিডক্যাপ হবে না। যে তিনটি নির্দিষ্ট অ্যালোকেশনের কথা বলছি, সেগুলো হল :
ক. ব্যালেন্সড অ্যাডভান্টেজ ফান্ড
খ. মাল্টি অ্যাসেট ফান্ড
গ. লার্জ ক্যাপ ফান্ড, বিশেষত নিফটি ৫০ জাতীয় ইনডেক্স-ভিত্তিক ফান্ড
প্রথম অ্যালোকেশন : ব্যালেন্সড অ্যাডভান্টেজ ফান্ড
দুই ধরনের অ্যাসেট থাকে। ইক্যুইটির সঙ্গে ডেটের মিশ্রণ। ফান্ড ম্যানেজার ডাইনামিক পদ্ধতিতে অ্যালোকেশন বদলাতে পারেন, বাজারের পরিস্থিতি বুঝে।
দ্বিতীয় অ্যালোকেশন : মাল্টি অ্যাসেট ফান্ড
এখানে আরও ডাইভারসিফিকেশন সম্ভব, কারণ ডেটের সঙ্গে থাকে গোল্ড, সিলভার, রিয়েল এস্টেট জাতীয় অন্য অ্যাসেট ক্লাস। অবশ্য ইকু্যইটিও থাকে।
তৃতীয় অ্যালোকেশন : লার্জ ক্যাপ ইনডেক্স ফান্ড
নিফটি ৫০ বা সেনসেক্স ধরনের সূচক থাকলে লগ্নি হয় বৃহৎ মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশন যুক্ত সংস্থার স্টকে। মিড ক্যাপ বা স্মল ক্যাপের ভোলাটিলিটি পাবেন না এখানে। তবে আলাদা করে ইনডেক্স ফান্ড নিয়ে বিশদে জেনে নিতে অনুরোধ করব পাঠককে।
সর্বশেষ থেকে শুরু করি। একটু বিশদে দেখলে বুঝবেন, লার্জ ক্যাপ প্রথম একশোটি (মার্কেট ক্যাপ র্যাঙ্কিংস অনুযায়ী) স্টক এখানে প্রাসঙ্গিক। তাই ভোলাটিলিটি বেশ কম। অবস্থা যদি কারাপ হয়, তাহলে কিন্তু ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে লার্জ ক্যাপের জুড়ি নেই। এছাড়া লার্জ ক্যাপ সংস্থাগুলোর ডিভিডেন্ড দেওয়ার ক্ষমতাও দেখুন। সব মিলিয়ে নির্ভরযোগ্য। উদাহরণ হিসাবে এলআইসি মিউচুয়াল ফান্ডের ডিভিডেন্ড ইল্ড ফান্ড সম্বন্ধে বলতে পারি। এই ফান্ডের গড় রিটার্ন বেঞ্চমার্কের থেকে এগিয়ে।
এবার আসি মাল্টি অ্যাসেটের কথায়। ইদানিং কালে চর্চিত এক শ্রেণি–একাধিক অ্যাসেট ক্লাসের সম্মিলন। ডাইভারসিফিকেশনের সুযোগ যথেষ্ট, অস্থিরতাও নিচুর দিকে। আমার উদাহরণ ইউটিআই মাল্টি অ্যাসেট অ্যালোকেশন ফান্ড। গত দুবছরে বেশ ভালো ফল দেখিয়েছে। পাঠকরা উৎসাহী হলে ফান্ডের পোর্টফোলিওর বিন্যাসটি দেখে নিতে পারেন, ভালভাবে বিষয়টি উপলব্ধি করতে পারবেন।
একইভাবে ব্যালেন্সড অ্যাডভান্টেজও বিশেষভাবে উল্লেখ্য। হাইব্রিড শ্রেণির প্রকল্প, বোঝাই যাচ্ছে। সাধারণত ইক্যুইটির মাত্রা বেশি থাকলেও ফিক্সড ইনকামের কিন্তু সুরক্ষা সংক্রান্ত তফাত গড়ে দিতে পারে। এছাড়াও অবশ্য আছে অ্যাগ্রেসিভ হাইব্রিড ফান্ড। নিজের রিস্ক নেওয়ার ক্ষমতা যাচাই করে, বিভিন্ন হাইব্রিড প্রকল্পের কথা ভাবতে পারেন লগ্নিকারী।
এখানে আবার ইউটিআই অ্যাগ্রেসিভ হাইব্রিড ফান্ডের দৃষ্টান্ত দেখাতে পারি। প্রায় ৭০ শতাংশ ভারতীয় ইক্যুইটি, তার মধ্যে প্রধানত লার্জ ক্যাপ শ্রেণির স্টক। বাকিটা মিড এবং স্মল ক্যাপে বিনিয়োগ করা। অবশ্য ডেটের অংশ প্রায় ২৪ শতাংশ অ্যাসেটে আছে, যার মধ্যে সব থেকে বড় ভূমিকায় আছে গর্ভমেন্ট সিকিউরিটিজ। এছাড়াও অন্যান্য লো-রিস্ক ডেটও আছে।
বলাই বাহুল্য, ইক্যুইটি এবং ডেটের মিশ্রণই এখানে মূলমন্ত্র। তাই স্বল্প ভোলাটিলিটি তথা স্টেবল রিটার্ন যাঁদের কাম্য, তাঁরা অবশ্যই পরখ করে দেখতে পারেন। সব শেষে বলি, নির্দিষ্ট কিছু ফান্ডের কথা। প্রায় সব কটিই এখানে লার্জ ক্যাপ শ্রেণিভুক্ত। আমার তালিকায় রয়েছে নিপ্পন ইন্ডিয়া লার্জ ক্যাপ, এসবিআই ব্লুচিপ, আইসিআইসিআই ভ্যালু ডিসকভারি, আদিত্য বিড়লা সান লাইফ ফ্রন্টলাইন ইক্যুইটি। আশা করি, পাঠকরা নিজেরা একটু জেনে নেওয়ার চেষ্টা করবেন, এই ধরনের ফান্ডের উপযোগিতা সম্বন্ধে।