গৌতম ব্রহ্ম : বাঙালির ঘুম কমছে! মোবাইল থাবা বসাচ্ছে ঘুমের আঙিনায়। ঘুমকাতুরে বাঙালিকে ‘বিশ্ব ঘুম দিবস’-এর আগেভাগেই সতর্ক করেছেন চিকিৎসকরা। জানিয়ে দিয়েছেন, সভ্যতার অগ্রগতির সঙ্গে ঘুমের ভাঁড়ারে এই যে ভাটার টান, তা জন্ম দিচ্ছে ডায়াবেটিস, স্থূলতা, মেটাবলিক সিনড্রোম, নার্ভ, হার্টের সমস্যাকে। বিছানায় মোবাইলের সঙ্গে সহবাস বারোটা বাজিয়ে দিচ্ছে ঘুমের।
ঘুম নিয়ে সল্টলেকে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল ‘ইনস্টিটিউট অফ স্লিপ সায়েন্স।’ ইএনটি সার্জন ও ঘুম বিশেষজ্ঞ ডা. দীপঙ্কর দত্ত সেখানে জানান, অনিদ্রা ও অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া (ওএসএ) মহামারির আকার নিচ্ছে। নাক থেকে গলা অর্থাৎ শ্বাসনালি পর্যন্ত যে ‘আপার এয়ারওয়ে প্যাসাজ,’ তাতে বাধা থাকলে বাতাস স্বাভাবিক ছন্দে ফুসফুসে পৌঁছতে পারে না। এটাই স্লিপ অ্যাপনিয়া। এই সমস্যা হলে নাক ডাকবে। দিনের বেলা ক্লান্তি গ্রাস করবে। এবং স্লিপ অ্যাপনিয়ার নেপথ্যে অনেক কারণ থাকতে পারে। নাকের হাড় সোজা না থাকলে, কোনও পলিপ থাকলে, গলার পিছনে টনসিল বা অ্যাডিনা গ্লান্ড বড় থাকলে, ছোট চোয়ালের মতো ‘স্ট্রাকচারাল ব্লক’-এর সুবাদে স্লিপ অ্যাপনিয়া থাবা বসাতে পারে। সে ক্ষেত্রে আচমকা ঘুম ভেঙে যায়। ঘুম হয় পাতলা, মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়। শরীরে মেদ জমতে থাকে। হজমশক্তি হ্রাস পায়। বিপাকীয় সমস্যা দেখা দেয়। সুরাহা কী?
[আরও পড়ুন : করোনা আতঙ্ক: মারণ ভাইরাস সম্পর্কে এই তথ্যগুলি জানলে উদ্বেগ বাড়বে]
ডাক্তারবাবুরা জানাচ্ছেন, চিকিৎসার প্রথম ধাপ হল, রোগীকে ঘুম পাড়িয়ে স্লিপ স্টাডির মাধ্যমে স্লিপ অ্যাপনিয়ার কারণ ও চরিত্র বোঝার চেষ্টা। যাচাই করা, ঘুমের মধ্যে অক্সিজেনের কতটা ঘাটতি হচ্ছে, হাত পা নড়ছে কি না। দুঃস্বপ্ন হানা দিচ্ছে কি? এ সবই পরীক্ষার মাধ্যমে ধরা পড়ে। রিপোর্ট হাতে নিয়ে চিকিৎসার পালা। নাকের বিকৃত হাড়ের মতো স্থায়ী ‘ব্লক’গুলির পাশাপাশি কোনও অস্থায়ী ব্লক বাতাসের পথে বাধা হচ্ছে কি না, তা স্লিপ এন্ডোস্কোপির মাধ্যমে নির্ণয় করা যেতে পারে। স্লিপ অ্যাপনিয়ার রোগীরা সিপ্যাপ মেশিন বা ‘কন্টিনিউয়াস পজিটিভ এয়ারওয়ে প্রেশার’ মেশিন ব্যবহার করতে পারেন। এক্ষেত্রে দমকলের হোসপাইপের মতো জোর করে ফুসফুসে বাতাস পাঠানো হয়। কিন্তু বিশ্বের ৬০-৬৫ শতাংশ মানুষ সিপ্যাপ নিতে চান না। কারণ এমন যন্ত্রনির্ভর নিদ্রা অনেকেরই পছন্দ নয়। তখন মাইক্রো সার্জারি করে ব্লকগুলি সরানো যেতে পারে। ওজন কমানোটাও চিকিৎসার অন্যতম একটি পদক্ষেপ।
[আরও পড়ুন : স্মার্টফোনে আসক্তরা মাথাব্যথায় খাচ্ছেন বেশি পেন কিলার, সমীক্ষায় উঠে এল চাঞ্চল্যকর তথ্য]
তবে অনেক রোগী ভারতীয় ‘ওএসএ’-তে ভোগেন। আসলে শারীরিক গঠনের কারণেই ১০ শতাংশ ভারতীয় এই রোগের শিকার। “এক্ষেত্রে মায়োফাংশনাল থেরাপি কার্যকর। গলার পেশীগুলি কিছু অনুশীলনের মাধ্যমে সবল করা যেতে পারে। কিছু মানুষকে ‘পজিশনাল থেরাপি’ করে সুস্থ করা যায়। অর্থাৎ একটা পাশ ফিরে ঘুমোনোর অভ্যাস করানো।” জানালেন বক্ষরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. অরূপ হালদার। তাঁর মত, রাতে ঘুমোনোর তিন-চার ঘণ্টা আগে খাওয়াদাওয়া সেরে নেওয়া ভাল। সন্ধের পর চা-কফি এড়িয়ে চলা উচিত। সর্বোপরি, সুখনিদ্রার স্বার্থে ঘুমের দু’ঘণ্টা আগে থেকে মোবাইল এড়িয়ে চলাটা যে অতীব জরুরি, চিকিৎসকরা বারবার তা মনে করিয়ে দিচ্ছেন।
The post ঘুমের বারোটা বাজাচ্ছে স্মার্টফোন, বিশ্ব নিদ্রা দিবসে সাবধানবাণী চিকিৎসকদের appeared first on Sangbad Pratidin.