দুলাল দে: চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছে, এরকম কথা এখনই বলার জায়গায় আসেনি। বরং বলা যেতে পারে এই মহান প্রক্রিয়াটা শুরু হয়েছে। আর তাতে মোহনবাগানের (Mohun Bagan) পালকে আরও একটা মণিমুক্ত যোগ হওয়ার অপেক্ষা। মণিমুক্তই বটে। কারণ, মোহনবাগানের যুব দলের সঙ্গে বার্সেলোনার (Barcelona) যুব দলের চুক্তির সম্ভাবনাটা অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছে। সব কিছু ঠিক ঠাক হলে হয়তো চূড়ান্ত চুক্তিটা হয়েও যাবে। তবে আবার বলছি, চুক্তি হচ্ছেই এরকমটা এখনই জোর দিয়ে বলা সম্ভব হচ্ছে না। তবে এই ঐতিহাসিক চুক্তির প্রক্রিয়া একদম ঠিক ঠাক পথেই চলছে।
করোনা আবহে বেশ কয়েক বছর ধরে মোহনবাগানের জুনিয়র ডেভলভপমেন্ট প্রোগ্রাম ঠিক ঠাক হতে পারেনি। ফলে ভাল সিনিয়র দল গড়ার পাশাপাশি এখন থেকে জুনিয়র ডেভলপমেন্ট প্রোগ্রামের উপরেও জোর দিতে চাইছে মোহনবাগান। আর এক্ষেত্রে বিনিয়োগকারী সংস্থার সঙ্গে ক্লাব কর্তারাও যৌথভাবে হাতে হাত মিলিয়ে চাইছে ক্লাবের জুনিয়র ডেভলপমেন্ট প্রোগ্রাম দারুণ ভাবে হোক। সেক্ষেত্রে বার্সেলোনার মতো ক্লাবের সঙ্গে মৌ চুক্তি করে জুনিয়র ডেভলপমেন্টের কাজ এগিয়ে নিয়ে যেতে পারলে, তার থেকে আর ভাল কিছুই হবে না।
[আরও পড়ুন: গিলের মহাকাব্যিক ইনিংসে স্বপ্নভঙ্গ রোহিতের, ফের আইপিএল ফাইনালে গুজরাট]
তখনও মোহনবাগানের সামনে থেকে ‘এটিকে’ নামক শব্দটা উঠে যায়নি। ক্লাব সচিব দেবাশিস দত্ত বারবার বলতেন, ‘ক্লাবের বিনিয়োগকারী সংস্থার সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে, জুনিয়র ডেভলপমেন্ট প্রোগ্রামের উপর জোর দেওয়ার পরিকল্পনা চলছে।’ সবাই মিলে জুনিয়র ডেভলপমেন্ট প্রোগ্রামের উপর জোর দেওয়ার পিছনে একটাই কারণ, নিজেদের ফুটবলার তৈরি করা। এতে প্রত্যেক মরশুমে ফুটবলার পাওয়ার জন্য আর অন্য কোনও দলের দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে না। একই সঙ্গে নিজেদের তৈরি করা কিছু ফুটবলারকে অন্য ক্লাবে বিক্রি করেও প্রচুর টাকার আমদানী হবে। আর সেই টাকাতেই সিনিয়র দলের পাশাপাশি জুনিয়র ডেভলপমেন্ট প্রোগ্রামের কাজ আরও ভাল ভাবে হবে।অন্তত উন্নত ফুটবল লিগের বিশ্বখ্যাত ফুটবল ক্লাবগুলিতে এই উদ্দেশ্যেই জুনিয়র ফুটবল ডেভলপমেন্টের উপরে জোর দেওয়া হয়।
এটিকে নামক শব্দটি সরে যাওয়ার পর মোহনবাগানে এখন সুখের সময়। তার উপর আইএসএলেও চ্যাম্পিয়ন। ফলে ফুটবল দলকে ঘিরে সমর্থকদের মধ্যে কোথাও কোনও বিক্ষোভ নেই। আর মোহনবাগান এসজির চেয়ারম্যান সঞ্জীব গোয়েঙ্কাকেও সবরকম ভাবে সমর্থন করছেন সবুজ-মেরুন সমর্থকরা। ‘এটিকে’ সরে যাওয়ার পর ফুটবল দলের সব কিছুই যখন ঠিক ঠাক চলছে, তখন সঞ্জীব গোয়েঙ্কার পরবর্তী পদক্ষেপ জুনিয়র ডেভলপমেন্ট প্রোগ্রামকে আরও শক্তিশালী করা। যার সঙ্গে ক্লাবকেও ভালভাবে জড়ানোর পরিকল্পনা হয়েছে। আর সেই সূত্রেই বার্সেলোনার মতো বিশ্বখ্যাত দলের সঙ্গে চুক্তির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
ক্লাবের জুনিয়র ডেভপমেন্ট প্রোগ্রাম নিয়ে পরিকল্পনা করতে বসে প্রথমেই আলোচনা হয়, কোন ক্লাবের জুনিয়র ডেভলপমেন্ট প্রোগ্রামকে ফলো করা উচিত। মেসি, জাভি, ইনিয়েস্তার মতো ফুটবলাররা যে ক্লাবের জুনিয়র ডেভলপমেন্ট প্রোগ্রামের ফসল, সেই বার্সোলানার জুনিয়র ডেভলপমেন্ট প্রোগ্রাম নিয়ে কারও কোনও সন্দেহই থাকা উচিত নয়। ফলে তখনই ঠিক হয়, তাহলে জুনিয়র ডেভলপমেন্ট প্রোগ্রাম তৈরি করতে হলে বার্সেলোনা মডেলকেই ফলো করা উচিত। কোচ থেকে যাবতীয় টেকনিক্যাল সাহায্য নেওয়া উচিত বার্সোলোনা থেকেই। স্প্যানিশ ক্লাবটির বিশেষজ্ঞরা কলকাতায় এসে সাজিয়ে দিয়ে যাবেন মোহনবাগানের জুনিয়র ডেভলপমেন্ট প্রোগ্রাম। এভাবেই মোহনবাগান এবং বার্সেলোনার মধ্যে চুক্তি নিয়ে কথা বার্তা শুরু হয়ে গিয়েছে।
শোনা যাচ্ছে ফেডারেশনের শীর্ষ কর্তারাও না কি মোহনবাগান এবং বার্সেলোনার মধ্যে চুক্তির এই প্রক্রিয়া নিয়ে কিছুটা ওয়াকিবহাল। সর্বেশেষ পরিস্থিতি হল, মোহনবাগানের পাশাপাশি বার্সেলোনাও রাজি এই চুক্তির জন্য। তবে এই চুক্তি সম্পন্ন করার জন্য বেশ কিছু শর্ত দিয়েছে স্প্যানিশ ক্লাবটি। যার মধ্যে কিছু আর্থিক শর্তও রয়েছে। যেদিকটাও যথেষ্ট ভাবনার বিষয়। যে কারণে, এখনই বলা যাচ্ছে না, মোহনবাগান এবং বার্সেলোনার মধ্যে জুনিয়র ডেভলপমেন্ট প্রোগ্রাম নিয়ে চুক্তি হচ্ছেই। শুধু এটুকু বলা যায়, চুক্তির প্রক্রিয়াটা শুরু হয়েছে। দেখা যাক, শেষ পর্যন্ত মোহনবাগান সমর্থকরা আরও একটি সুখবর পান কি না।