নব্যেন্দু হাজরা: বাংলা তথা বাঙালির প্রাণের 'ঠাকুর', বিশ্ববরেণ্য রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সৃষ্টির মধ্যে দিয়েই বাংলা সংস্কৃতি বহমান। রাজ্যের স্বকীয়তা বজায় রাখতে জাতীয় সঙ্গীতের মতো বাংলার রাজ্য সঙ্গীত চালু করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর প্রস্তাব অনুযায়ী, কবিগুরুর 'বাংলার মাটি বাংলা জল' গানটি রাজ্য সঙ্গীতের মর্যাদা পেয়েছে। তবে গানের একটি শব্দ বদলের পক্ষে ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। 'বাঙালি'র বদলে শব্দটি 'বাংলা' হোক, তা চেয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তা নিয়ে বিতর্ক কম হয়নি। টানাপোড়েনও ছিল। এবার সেসবে ইতি পড়ল। নবান্নের তরফে বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানানো হল, কোনও বদল নয়। বিশ্বকবির গানে যেখানে যা শব্দ ছিল, তাই থাকবে। অর্থাৎ 'বাঙালি' শব্দ রেখেই শেষপর্যন্ত রাজ্য সঙ্গীত গাওয়া হবে। কোন স্তবকটি গাওয়া হবে, তাও জানানো হয়েছে।
নবান্নের নয়া বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, রাজ্য সঙ্গীত সম্পূর্ণ করার জন্য এক মিনিট সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। রাজ্য সঙ্গীত হিসাবে গাওয়া হবে, ‘‘বাংলার মাটি, বাংলার জল, বাংলার বায়ু, বাংলার ফল - পুণ্য হউক, পুণ্য হউক, পুণ্য হউক হে ভগবান/ বাঙালির প্রাণ, বাঙালির মন, বাঙালির ঘরে যত ভাই বোন — এক হউক, এক হউক, এক হউক হে ভগবান।’’এই সঙ্গীত চলাকালীন উঠে দাঁড়ানো আবশ্যক নয়, তবে কাম্য। এমনই লেখা মুখ্যসচিবের দেওয়া বিজ্ঞপ্তিতে।
২০২৩ সালে 'রাজ্য সঙ্গীত' এবং 'পশ্চিমবঙ্গ দিবস' নিয়ে তাৎপর্যপূর্ণ সিদ্ধান্ত কার্যকর করে রাজ্য সরকার। বিধানসভায় পাশ হয় জোড়া প্রস্তাব। প্রথমত পয়লা বৈশাখকে ‘রাজ্য দিবস’ হিসাবে পালন করা হবে। দ্বিতীয়ত, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ‘বাংলার মাটি বাংলার জল’ গানটি হবে পশ্চিমবঙ্গের ‘রাজ্য সঙ্গীত’। এনিয়ে শিক্ষা-সংস্কৃতি জগতের বিশিষ্টদের সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে গানের একটি লাইন - 'বাঙালির ঘরে যত ভাইবোন' এ 'বাঙালি' শব্দকে 'বাংলা' করে দেওয়ার প্রস্তাব দেন তিনি। যুক্তি ছিল, বাংলার ঘরের সব ভাইবোন 'বাঙালি' নাও হতে পারে। সেক্ষেত্রে 'বাংলা' শব্দটি আনাই ঠিক হবে। যদিও মুখ্যমন্ত্রীর এই প্রস্তাবে রাজি ছিলেন না বিশিষ্টদের একাংশ। পরে আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে রবীন্দ্রসঙ্গীতের শব্দ অপরিবর্তিত রাখা হয়। সেই নির্দেশিকাই জারি হল মঙ্গলবার।
