সুলয়া সিংহ: বছর ২৫ পর আবারও তালিবানি তাণ্ডবে (Taliban terror) রক্তাক্ত আফগানিস্তান। জঙ্গিদের বন্দুকের নলের চোখরাঙানি থেকে রক্ষা পেতে ভয়ে-আতঙ্কে ঘরছাড়া বহু মানুষ। কোথায় যাবে, কী করবে, কিছুই জানা নেই। শুধু প্রাণ বাঁচানোর তাগিদেই অন্ধকার অজানা ভবিষ্যতের পথে হেঁটে চলা। ছোটবেলার স্মৃতি, আপনজনের স্নেহ, নদী-মাঠ, ঘাসফুল, দোলনা- সবকিছু পিছনে ফেলে অনিশ্চিয়তার পথে পা বাড়ানো। রাগ, অভিমান, ভালবাসা, আনন্দ কুলুঙ্গিতে তুলে রেখে ভিনদেশে শূন্য থেকে শুরু করা। এ বছর পুজোয় এই যন্ত্রণার কাহিনিই ফুটিয়ে তুলবে নাকতলা উদয়ন সংঘ।
দক্ষিণ কলকাতার (South Kolkata) অতি পরিচিত, অতি জনপ্রিয় পুজোর এবারের থিম ‘চল্ চিত্র’। আরও খোলসা করে বললে, মুলুক বদলে ভিনদেশে পাড়ি দেওয়া মানুষদের চলমান ছবিই এবার নাকতলায় ফুটিয়ে তুলবেন শিল্পী প্রদীপ দাস। তবে শুধু তো বর্তমান আফগানিস্তানের পরিস্থিতি নয়, যুগযুগান্ত ধরে এ যন্ত্রণার সাক্ষী বিশ্ব। ইতিহাসের পাতায় এমন বহু উদাহরণ রয়েছে। সাতচল্লিশের দেশভাগ হোক কিংবা একাত্তরের বিধ্বস্ত বাংলাদেশ- সর্বত্রই ভিটে-মাটি ছাড়ার হাহাকার। তালিবানি সন্ত্রাসের আমলে নতুন করে যে যন্ত্রণার কাহিনি নতুন করে উসকে গিয়েছে।
[আরও পড়ুন: Durga Puja 2021: পরিবেশবান্ধব প্রতিমা নির্মাণে আগ্রহ বাড়ছে, কুমোরটুলিতে সীসাহীন রঙের ব্যবহার]
রূপান্তরিত হতে হতে অজান্তেই জীবনে বদল ঘটে যায়। এদেশ থেকে ওদেশ, মুলুক বদলে পাঁচিল পড়ে যায় এক একটা জীবনের মাঝে। কিন্তু জীবনীশক্তিতে ভর করেই পাহাড় প্রমাণ সে সীমানা পেরনোর সাহস পায় মানুষ। তখন আর পিছন ফিরে তাকানোর উপায় থাকে না। দেশ বদলে হিসেব করতে হয় কোনটা ভাল? এপারটা নাকি ফেলে আসা ওপারটা। শিল্পী প্রদীপ দাস বলছিলেন, ”সময়ের সঙ্গে সঙ্গে হয়তো ওপর ওপর সবটা সয়ে যায়। কিন্তু নিজের দেশত্যাগের ঘা অন্তরের অন্তঃস্থলে যেন চিরকাল দগদগে হয়ে থাকে।” এবার পুজোয় (Durga Puja 2021) তাদের কথাই মনে করাবেন শিল্পী। তাঁর সৃষ্টিশীল এই ভাবনা পূর্ণতা পাবে প্রবাদপ্রতিম শিল্পী ভবতোষ সুতারের তৈরি প্রতিমাতে। পরিযায়ীদের গুটিয়ে যাওয়া মনের কথা শুনবেন দেবী দুর্গা।
তবে শুধু থিমেই নয়, এবার নাকতলার পুজো আয়োজনের নেপথ্য কাহিনিও বেশ চমকপ্রদ। করোনা কালে প্রথমে ঠিক হয়েছিল ক্লাবের ভিতর নমো নমো করেই হবে পুজো। তবে নির্বাচন কমিশন উপনির্বাচনের দিন ঘোষণা করতেই সিদ্ধান্ত বদলায়। ঠিক হয়, করোনাবিধি মেনে জাঁকজমক করেই দেবীদুর্গাকে আরাধনা করা হবে। সেই মতোই শহরের দুই অতি পরিচিত শিল্পী প্রদীপ দাস ও ভবতোষ সুতারকে সৃজনের দায়িত্ব দেন উদ্যোক্তারা। দায়িত্ব পেয়েই কোমর বেঁধে কাজে নেমে পড়েছেন তাঁরা। সময় অল্প আর প্রত্যাশার চাপ অনেকখানি। তবে প্রদীপ বিশ্বাস বলে দিচ্ছেন, “মাথার মধ্যে পুজোটাই ভাবা আছে। এবার শুধু ফুটিয়ে তোলার পালা।”