পারমিতা পাল: বাড়িতে মা-বউ-দুই মেয়ে। পাঁচ-পাঁচটা পেট চালাতে ভরসা একমাত্র বাড়ির ছেলের রোজগার। পরিবারের একমাত্র রোজগেরে সদস্য গ্রামেই ১০০ দিনের প্রকল্পের কাজ করে পরিবারের পেট চালাতেন। কিন্তু কেন্দ্রের বঞ্চনায় রোজগারের সেই রাস্তাও বন্ধ হয়ে যায়। কাজ করার পরেও এক বছর ধরে মনরেগা প্রকল্পের টাকা মেলেনি। কিন্তু খরচ বেড়েছে লাফিয়ে। তাই অগত্যা সংসার চালাতে মিস্ত্রির কাজ নিয়ে ভিনরাজ্যে পাড়ি দেন নবদ্বীপের মোহন সিং। অন্যান্যবারের মতো গত শুক্রবারও কেরলের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিলেন তিনি। তারপরই ঘটে যায় মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। বালেশ্বরে বাহানাগা স্টেশনে দুর্ঘটনার মুখে পড়ে করমণ্ডল এক্সপ্রেস।
এক্সপ্রেসের সংরক্ষিত কামরায় থাকার জন্য প্রাণে বেঁচে গিয়েছেন। কিন্তু আতঙ্ক এখনও তাড়া করে বেড়াচ্ছে মোহন সিংকে। বুকে প্রচণ্ড ব্যথা। ট্রেন দেখলেই আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন। এখনও তাড়া করে বেড়াচ্ছে ‘ব্ল্যাক ফ্রাই ডে’-র স্মৃতি। একইসঙ্গে তাঁর আক্ষেপ, ১০০ দিনের কাজ থাকলে তো আর বাইরে যেতে হত না। এখানেই টেনেটুনে সংসার চালিয়ে দিতে পারতাম। নদিয়ার মোহন সিং-ই যেমন বলছেন, “এ রাজ্যেই তো কাজ করতাম। কিন্তু ১০০ দিনের প্রকল্পের টাকা মেলেনি। প্রায় ১ বছর টাকা পাইনি। গ্রামে প্রধানকে বললে বলছেন, কেন্দ্র টাকা দেয়নি। তাই মিস্ত্রির কাজ নিয়ে কেরলে যেতে হল।” একইসঙ্গে তাঁর আরজি, “কেন্দ্রকে বলুন না টাকা দিতে, তাহলে তো বাইরে যেতে হয় না।”
[আরও পড়ুন: রবিবারই বৃষ্টিতে ভিজবে কলকাতা! আবহাওয়া বদলের ইঙ্গিত বাকি জেলাগুলিতেও]
শুধু মোহন সিং কেন, একই কথা বলছেন বর্ধমানের সুখলাল সরদারও। রাজ্যে কাজ নেই। ১০০ দিনের কাজ করেও টাকা মেলেনি। তাই অগত্যা ছেলেকে নিয়ে কেরলে কাজে যাচ্ছিলেন। কিন্তু সেই রাতের দুর্ঘটনা কেড়ে নিয়েছে ছেলেকে। “ছেলে নেই, আর কাজের জন্য বাইরে যাব না”, সাফ জানাচ্ছেন সুখলাল।
দুর্ঘটনা এড়িয়ে বাড়ি ফিরেছেন হাওড়ার প্রভুলাল ঘড়ুই। তাঁর মা মঞ্জুরা ঘড়ুই বলছেন, “যেভাবে হোক সংসার চলবে। ছেলেকে আর যেতে দেব না।” কাছের মানুষের প্রাণ কেড়েছে রেল দুর্ঘটনা। কাউকে আবার চোট আঘাতে জর্জরিত করেছে এই দুর্ঘটনা। তাই পেট চলুক না চলুক, ভিন রাজ্যে আর কাজে যেতে দেবেন না। তাই হাতজোর করে কেন্দ্রের কাছে তাঁদের আরজি, “কেন্দ্রকে বলুন না টাকা দিতে, তাহলে তো বাইরে যেতে হয় না।”