সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ভাল চালকের পরীক্ষা হয় দুর্গম রাস্তায়। বিশ্বে এমন বহু রাস্তা রয়েছে, যে পথে গাড়ি নিয়ে বেরোনোর আগে দু’বার ভাবেন একজন দক্ষ চালকও। পাহাড়ি উপত্যকার গা বেয়ে চলা সেই সব রাস্তা প্রকৃতই বিপজ্জনক। একদিকে খাদ, অন্যদিকে ধস নামার ভয়। সেইসঙ্গে সমুদ্রপৃষ্ট থেকে অনেক উঁচুতে থাকে হাওয়ার প্রাবাল্য। পদে পদে মৃত্যু ডিঙিয়ে পাড়ি দিতে হয় গন্তব্যে। বিশ্বের সেইসব বিপজ্জনক রাস্তাগুলির অন্যতম চিন (China) থেকে পাকিস্তান (Pakistan) অবধি বিস্তৃত কারাকোরাম হাইওয়ে (Karakoram Highway)। এপথের কথা বললে বাঙালির মনে পড়বে সৈয়দ মুজতবা আলি, ‘দেশে বিদেশে’। আর যাঁরা ওই ভয়ংকর রাস্তা ডিঙিয়েছেন, তাঁদের মতে কারাকোরাম হল বিপজ্জনকতম। কেন?
১৩০০ কিলোমিটার দীর্ঘ কারাকোরাম হাইওয়ে। এই পথের যাত্রা শুরু পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের হাসান আবদাল থেকে। শাহবাজ শরিফের দেশে যা শেষ হয় গিলঘিট-বালতিসতানের খুঞ্জেরাবে। এরপর তা আন্তর্জাতিক সীমান্ত পেরিয়ে চিনের ঢুকে পড়ে। শি জিনপিংয়ের দেশের ৩১৪ নম্বর জাতীয় সড়ক হয়ে যায়। উল্লেখ্য, কারাকোলাম পর্বতমালার গড় উচ্চতা ১৫ হাজার ফুট। উচ্চতম শৃঙ্গ ১৫৪৬৬ ফুট। এই উচ্চতাকেই সরু চুলের ফিতের মতো জড়িয়ে-পেঁচিয়ে এগিয়ে যায় পাকিস্তানের পার্বত্য উপত্যকার অপার সৌন্দর্যে ভরা জাতীয় সড়কটি। যে চূড়ান্ত ভয়ংকরও বটে!
[আরও পড়ুন: দেনার দায়ে বাড়ি বিক্রির ২ ঘণ্টা আগে বদলাল ভাগ্য! কোটি টাকার লটারি জিতলেন প্রৌঢ়]
১৯৭৮ সালে উদ্বোধন হয় কারাকোলাম হাইওয়ের। গত ৪৪ বছরে ওই রাস্তায় মৃত্যু হয়েছে অসংখ্য মানুষের। বহু দুর্ঘটনা নথিভুক্তই হয়নি। সেসব বাদ দিয়েও একটি পরিসংখ্যান বলছে- চার দশকে মৃত্যু হয়েছে ১০০০-এর বেশি মানুষের। এই যে এত মৃত্যু তার কারণ ভৌগলিক অবস্থান ও বিপজ্জনক আবহাওয়া। লাগাতার তুষারপাতে রাস্তা ভিজে পিচ্ছিল হয়ে যায়। মুহূর্তের অসতর্কতায় পিছলে গভীর খাদে পড়ে গাড়ি। এইসঙ্গে ক্রমাগত ধস বিপদ ঢেকে আনে। বড় পাথরের চাই হুড়মুড় করে নেমে আসে গাড়ির উপরে। তারপর যা হওয়ার তাই হয়! এছাড়াও অন্ধ বাঁকে দু’টি গাড়ির মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনাও বিরল নয়।
[আরও পড়ুন: ‘বিচারপতিদের আক্রমণের একটা সীমা আছে’, সংবাদমাধ্যমকে ভর্ৎসনা সুপ্রিম কোর্টের]
এইসব কারণেই অতি দক্ষ চালক ছাড়া এপথে চাকা গড়ান না কেউ। কে আর মৃত্যুকে আমন্ত্রণ দিতে চায় স্বেচ্ছায়! উল্লেখ্য, কুড়ি বছর সময় লেগেছিল এই মহাসড়ক গড়তে। যা ছিল কঠিনতম চ্যালেঞ্জের কাজ। বেসরকারি সূত্রের দাবি, কারাকোরাম হাইওয়ে নির্মাণেই মৃত্যু হয়েছিল ৮১০ জন পাকিস্তানি ও ২০০ চিনা শ্রমিকের। অর্থাৎ এপথে মোট মৃত্যুর সংখ্যা দুই হাজারেরও বেশি। এমনি কী আর কারাকোরাম হাইওয়েকে বিশ্বের অষ্টম আশ্চর্য বলা হয়! সেই ভয়ংকর সুন্দর আশ্চর্যকে চাখতে আসেন দেশ-বিদশের কিছু অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমী পর্যটক। জন্ম চেখে দেখেন তাঁরা, সাক্ষাৎ মৃত্যুর বিনিময়ে!