সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: সাহিত্য থেকে সংস্কৃতি। হস্তশিল্প থেকে বিজ্ঞান। সামাজিক সমস্যা থেকে খেলাধুলো। সমস্ত ক্ষেত্রে অসামান্য সাফল্যের জন্য ৬ আদিবাসী গুণীজনকে সম্মাননা প্রদান করল রাজ্য সরকার। শুক্রবার বিরসা মুন্ডার ১৫০ তম জন্মবার্ষিকীতে কলকাতার নিউটাউনে আদিবাসী ভবনে এই ৬ জনকে 'আদিবাসী গুণীজন অ্যাওয়ার্ড' দিল রাজ্যের অনগ্রসর শ্রেণি ও আদিবাসী উন্নয়ন বিভাগ। তাঁদের হাতে স্মারক তুলে দেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
পুরুলিয়ার এই চারজন পেলেন রাজ্য সরকারের গুণীজন সম্মাননা। নিজস্ব ছবি।
সম্মানিত ৬ গুণীজনের মধ্যে চারজন জঙ্গলমহলের। তাঁরা সকলেই পুরুলিয়ার। বাকি ২ জন উত্তরবঙ্গের লেপচা জনজাতির প্রতিনিধি। রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন বিভাগের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত রাষ্ট্রমন্ত্রী তথা আদিবাসী গুণীজন সংবর্ধনার চেয়ারম্যান সন্ধ্যারানি টুডু বলেন, "যে সকল গুণী মানুষ মুখ্যমন্ত্রীর হাত ধরে এই সম্মাননা পেলেন, তাঁরা নিজ নিজ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য কাজ করেছেন। তাঁদের কাজের ভিত্তিতেই আমরা সম্মাননা প্রদান করে সমৃদ্ধ হলাম।"
'আদিবাসী গুণীজন অ্যাওয়ার্ড' প্রাপ্তদের মধ্যে রয়েছেন পুরুলিয়ার মানবাজার ২ নম্বর ব্লকের পিটিদিরি গ্রামের সঞ্জয়কুমার টুডু, কাশীপুরের পাবড়ার বিপন টুডু, পুরুলিয়ার পুঞ্চা ব্লকের কুদা গ্রামের জলধর শবর ও পুরুলিয়ার জঙ্গলমহল বলরামপুরের ঘাটবেড়ার ফুলচাঁদ হেমব্রম। রয়েছেন উত্তরবঙ্গের কালিম্পং জেলার লাভা ব্লকের গীতডাবলিঙের লোয়ার বিয়ঙের জোয়াকিম লেপচা ও ওই জেলারই নিমবঙ্গ খাসমহলের খারেল গাঁওয়ের রেন টেন তেসরিং লেপচা। সাহিত্যের জন্য পুরস্কৃত করা হয় সঞ্জয়কুমার টুডুকে। ২০০৩ সাল থেকে লেখালেখির জগতে রয়েছেন তিনি। তাঁর প্রথম বই প্রকাশ পায় ২০১৭ সালে করম নিয়ে। বইয়ের নাম জাওয়া-কারাম। এখনও পর্যন্ত তাঁর সাতটি বই প্রকাশিত হয়েছে।
সাহিত্যকর্মের জন্য পুরস্কৃত সঞ্জয়কুমার টুডু। নিজস্ব ছবি।
জোয়াকিম লেপচার হস্তশিল্প নজর কেড়েছে বাংলায়। তিনি বাঁশ ও বেত দিয়ে শামোক তৈরি করেন। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করা এই শিল্পী ২০০৬ সাল থেকে এই শিল্পকলায় যুক্ত। রেনটেনও ক্লাস এইট পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন। ১৫ বছর বয়স থেকে লেপচা গানের সঙ্গে জড়িত তিনি লেপচা সঙ্গীত যেন তাঁর শরীর-মনের সঙ্গে মিশে রয়েছে। পেশায় তিনি একজন কৃষক।
কাশীপুরের বিপন টুডু বর্তমানে কলকাতার বাসিন্দা। দক্ষিণেশ্বর এলাকায় থাকেন। তিনি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্সট্রুমেন্টেশন এন্ড ইলেকট্রনিক্সের অধ্যাপক। চায়ের গুণগত মান কেমন হবে, সেই যন্ত্র উদ্ভাবনের নেপথ্যে তাঁর ভূমিকা রয়েছে। পুরুলিয়ার সোনাথলিতে তাঁর প্রাথমিক পাঠ। সামাজিক সমস্যা সমাধানে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিয়েছেন জলধর শবর। এই জনজাতিকে সমাজের মূল স্রোতে নিয়ে আসার অন্যতম কারিগর তিনি। সেই কারণেই রাজ্য তাঁকে এই সম্মাননা প্রদান করে। শবর জনজাতিকে 'জন্মগত অপরাধী জনজাতি' হিসাবে আখ্যা দেওয়া হয়েছিল। সেখান থেকে তাদেরকে সমাজের মূল স্রোতে কিভাবে ফিরিয়ে আনা যায় তার দিশা দেখিয়েছিলেন। পশ্চিমবঙ্গ খেড়িয়া শবর কল্যাণ সমিতির সম্পাদক পদে রয়েছেন জলধরবাবু। শবর সম্প্রদায়ের উন্নতির জন্য অক্লান্ত পরিশ্রমের আরেক নাম জলধর শবর। তাঁর কথায়, " এত বড় সম্মান আমি আগে কখনও পাইনি।
খুবই ভালো লাগছে। তবে এখনও অনেক কাজ বাকি।"
শবর জনজাতিকে সমাজের মূল স্রোতে নিয়ে আসার অন্য়তম কারিগর জলধর শবর। নিজস্ব ছবি।
খেলাধূলায় এই সম্মাননা পেলেন ফুলচাঁদ হেমব্রম। নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও তিনি মহামেডান, টালিগঞ্জ, ডায়মন্ড হারবার, পিয়ারলেসে ফুটবল খেলে নজর কাড়েন। সাইড ব্যাক ও মিডফিল্ড তাঁর পারফরম্যান্স ছিল চোখে পড়ার মত।
'আদিবাসী গুণীজন অ্যাওয়ার্ড' প্রাপ্ত ফুটবলার ফুলচাঁদ হেমব্রম। নিজস্ব ছবি।