অর্ণব আইচ: ছোট বসতিতে দশ বাই আট ফুটের ঘরে বসে কোটি কোটি টাকার লেনদেন। আগেও ওই ঘরে হানা দিয়েছিল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। তৃতীয়বারের জন্য ইডি হানা দেওয়ার আগেই ‘মানসিকভাবে অসুস্থ’ হয়ে পড়লেন অভিযুক্ত অঙ্কিত সাউ। মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হওয়ার কারণে তাঁকে হাসপাতালেও ভরতি করতে হয়েছে। এই ব্যাপারটি নিয়ে প্রশ্নও তুলেছে ইডি। অঙ্কিতের শারীরিক অবস্থা জানতে ইডি বাঙ্গুর ইন্সটিটিউট অফ নিউরোলজির সঙ্গেও যোগাযোগ করছে।
ই-নাগেটস অ্যাপ প্রতারণা কাণ্ডে একবালপুরের ব্যবসায়ী আমির খানের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছিল ১৩ কোটি টাকা। ক্রমে আমিরের এজেন্ট উল্টোডাঙার ব্যবসায়ী রোমেন আগরওয়ালের কাছ থেকেও উদ্ধার হয় ৬ কোটি টাকা। তদন্ত করে ইডি-র গোয়েন্দারা জানতে পারেন যে, প্রায় দু’শো কোটি টাকা ক্রিপ্টোকারেন্সিতে পাঠানো হয়েছে বিদেশে। কলকাতা পুলিশ প্রথমে আমিরকে গ্রেপ্তার করে। এরপর তাঁকে হেফাজতে নেয় ইডি। তাঁর অ্যাকাউন্ট পরীক্ষা করেই ইডি আধিকারিকরা জানতে পারেন যে, একাধিক যুবককে কাজে লাগিয়ে আমির তাঁদের অ্যাকাউন্ট ভাড়া নিয়েছিলেন। ওই অ্যাকাউন্টগুলির মাধ্যমেই কলকাতা থেকে বিদেশের ক্রিপ্টোকারেন্সি অ্যাকাউন্টে পাচার হয় কোটি কোটি টাকা। সেই তদন্তের জেরেই সন্ধান মেলে দক্ষিণ কলকাতার কালীঘাট থানা এলাকার শম্ভুনাথ পন্ডিত স্ট্রিট লাগোয়া টার্ফ রোডের বাসিন্দা অঙ্কিত সাউয়ের।
[আরও পড়ুন: বিচ্ছেদ হতে না হতেই ফের বিয়ের পিঁড়িতে সুজাতা মণ্ডল! ভিডিওতে দিলেন ইঙ্গিত]
মঙ্গলবার তৃতীয়বারের জন্য অঙ্কিতের বাড়িতে ইডি হানা দেয়। ইডি আধিকারিকরা ওই যুবকের বাড়ি থেকে একাধিক ব্যাংক অ্যাকাউন্টের নথি উদ্ধার করেন। আমিরের নির্দেশে অঙ্কিত নিজের নামে ছাড়াও তাঁর মা, বোন, বাবার নামেও অ্যাকাউন্ট খোলেন বলে জানা গিয়েছে। এদিন সাত ঘণ্টা অঙ্কিতের ঘরে ইডি তল্লাশি চালায়। অঙ্কিতের মা ও বোনকে ইডি জেরা করে।
শম্ভুনাথ পন্ডিত স্ট্রিটে পাশাপাশি দু’টি ছোট ঘরের মধ্যে একটিতে থাকেন মনোজ সাউ, তাঁর ছেলে অঙ্কিত, স্ত্রী ও মেয়ে। পাশের ঘরে মনোজের মা অনিতা সাউ ও বাবা যুগল সাউ। অঙ্কিতের পিসি ওই বাড়িতে না থাকলেও তিনি দক্ষিণ কলকাতার একটি থানায় কর্মরত। যুগলও আংশিক মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। গ্র্যাজুয়েট হওয়ার পর অঙ্কিত পার্ক স্ট্রিটের একটি কল সেন্টারে কাজ করতেন। কালীঘাট ও খিদিরপুরের কয়েকজন যুবকের সঙ্গে মেশার সুবাদেই যোগাযোগ আমির খানের চক্রের সঙ্গে। ইডির অভিযোগ, ই নাগেটস অ্যাপ প্রতারণা চক্রের টাকা আমির বিদেশে পাঠাতেই ব্যবহার করতেন অঙ্কিত ও তাঁর পরিবারের লোকেদের অ্যাকাউন্ট। কয়েক মাস আগে থেকেই ইডি হানা দিতে শুরু করে অঙ্কিতের বাড়িতে। তাঁর একটি ফোনও ইডি নিয়ে গিয়েছে বলে তিনি কালীঘাট থানায় গিয়ে দাবি জানিয়ে আসেন। তার উপর কল সেন্টারে সমস্যা হওয়ায় বিক্রি করে দেন নিজের স্কুটি। পরিবার জানিয়েছে, দিন দশেক আগে খুইয়ে ফেলেন রূপোর হার। বন্ধুরা তাঁকে মাদকজাতীয় কিছু খাওয়ায়। দিন সাতেক আগে থেকেই অঙ্কিত অস্বাভাবিক আচরণ করতে শুরু করেন।