গৌতম ব্রহ্ম: অফিসের মহিলা সহকর্মীকে নিয়ে ডায়মন্ড হারবারের একটি হোটেলে গিয়েছিলেন একটি প্রযোজনা সংস্থার বড়বাবু৷ স্ত্রীর প্রতি ‘সৎ’ থাকতে ওই সহকর্মীর সঙ্গে কোনও শারীরিক সম্পর্ক করেননি৷ তবে, নীল ছবি দেখতে দেখতে প্রাণভরে মুখমৈথুন করেছেন এবং করিয়েছেন৷
ওই ‘উইকএন্ড ট্রিপ’ থেকে ফিরেই বড়বাবুর শুরু হয়ে যায় নানারকম সমস্যা৷ ঠোঁটের দু’পাশ ফেটে গিয়ে বিশ্রী ঘা হয়৷ খাওয়া-দাওয়া করতেও সমস্যা হচ্ছিল৷ গলার ভিতরেও ছড়ায় ভয়ঙ্কর সংক্রমণ৷ একই সমস্যা হয়েছে এক গবেষক ছাত্রীর৷ শান্তিনিকেতনে একটি প্রোজেক্ট করতে গিয়ে এক অধ্যাপকের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক হয় তাঁর৷ শারীরিক সম্পর্ক নিরাপদ হলেও মুখমৈথুনের ব্যাপারে কোনও সতর্কতা ছিল না৷
এমন অনেক ঘটনাই ইদানীং প্রকাশ্যে আসছে৷ মুখের রোগ নিয়ে প্রচুর রোগী আসছেন ডাক্তারদের চেম্বারে৷ ঘা পরীক্ষা করে চমকে উঠছেন ডাক্তাররা৷ বুঝতে পারছেন, যে ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসের জন্য ঘা হয়েছে তা যৌনাঙ্গ থেকে বাহিত হয়েছে মুখে৷ অর্থাত্ ‘সেক্সুয়ালি ট্রান্সমিটেড ইনফেকশন’৷
উৎস খুঁজতে গিয়ে বেরিয়ে আসছে ‘কেউটে’৷ এই মুখমৈথুনেই সিঁদুরে মেঘ দেখছেন চিকিৎসকরা৷ হারপিস, সিফিলিস, গনোরিয়া তো বটেই, এডসের মতো মারণ রোগও নাকি ডেকে আনতে পারে মুখমৈথুন৷ সম্প্রতি কয়েকটি সমীক্ষাতেও এমন চাঞ্চল্যকর কিছু তথ্য উঠে এসেছে৷ জানা গিয়েছে, নীল ছবির দৌলতে ১৮-৪৪ বছর বয়সিদের মধ্যে ৮০ শতাংশ মানুষ এখন শারীরিক সম্পর্কের আগে মুখমৈথুন করেন৷ শুনলে অবাক হবেন, আমেরিকায় ৪৫ শতাংশ টিনএজার মুখমৈথুনে অভ্যস্ত৷ আমাদের দেশের টিনএজারদের মধ্যেও এই প্রবণতা বাড়ছে৷
বিষয়টি নিয়ে চিকিৎসকরা যারপরনাই উদ্বিগ্ন৷ উদ্বেগ এতটাই বেড়েছে যে ১ ডিসেম্বর বিশ্ব এডস দিবসে আর জি কর হাসপাতাল-সহ বেশ কয়েকটি মেডিক্যাল কলেজ অনুষ্ঠান করে এডস-সহ মুখমৈথুন নিয়েও মানুষকে সচেতন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ এমনটাই জানালেন আরজি কর হাসপাতালের ‘কমিউনিটি মেডিসিন’-এর চিকিৎসক অধ্যাপক সুকোমল বিষয়ী৷ জানালেন, “মুখমৈথুনে এডস হওয়ার সম্ভবনা কম৷ তবে একদম নেই তা বলা যাবে না৷ মুখের ভিতরে ক্ষত থাকলে, ঠোঁট ফাটা থাকলে যৌনাঙ্গ থেকে ব্যাকটেরিয়া-ভাইরাস মুখে সংক্রামিত হতেই পারে৷”
এডস ঠেকাতে সোনাগাছির যৌনকর্মীদের এখন ‘প্রেপ’ ট্যাবলেট খাওয়াচ্ছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন দুর্বার৷ দুর্বারের তরফে ডা. স্মরজিত্ জানা অবশ্য জানিয়েছেন, “আমাদের মুখের লালা জীবাণুনাশক৷ ‘ভাইরাল লোড’ বা ‘ব্যাকটেরিয়াল লোড’ অল্প হলে চিন্তা নেই৷ বেশি হলেই গনোরিয়া, সিফিলিস, হারপিসের মতো রোগ হতে পারে৷ সুতরাং যৌনরোগে আক্রান্ত মানুষের সঙ্গে সতর্কতার সঙ্গেই মুখমৈথুন করা উচিত৷”
ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. অর্ঘ্য মৈত্র জানিয়েছেন, দাঁত ব্রাশ করার দু’ঘণ্টার মধ্যে মুখমৈথুন করবেন না৷ মুখে-গলায় ঘা থাকলে বা ঠোঁট ফাটা থাকলে নৈব নৈব চ৷ নুন জল দিয়ে কুলকুচির পর জ্বালা করলে ঘা-এর উপস্থিতি টের পেয়ে যাবেন৷
The post মুখমেহন থেকেও হতে পারে এডস! appeared first on Sangbad Pratidin.