সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনে টানটান নাটক। এখনও পর্যন্ত ফলাফল স্পষ্ট না হলেও ভোটে জয়ের দাবি করেছেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ। শুক্রবার তাঁর দাবি, পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) নির্বাচনে সবচেয়ে বড় দল হিসাবে অলিখিত স্বীকৃতি পেয়ে গিয়েছে। দেশে জোট সরকার গড়তে সমমনস্ক দলগুলির সঙ্গে আলোচনাও শুরু করে দিয়েছেন। গতকাল লাহোরে পাকিস্তান পিপল পার্টির (পিপিপি) প্রধান আসিফ আলি জারদারির সঙ্গে বৈঠক করেছেন শরিফ বলেও খবর। তবে, শেষ পাওয়া তথ্য মোতাবেক, দেশটির জেলবন্দি প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) সমর্থিত নির্দল প্রার্থীরা জোর লড়াই করছে। ফলে, নওয়াজের লন্ডন প্ল্যান কি ব্যর্থ? উঠছে এমন প্রশ্নই।
কী এই লন্ডন প্ল্যান? মসনদ থেকে বিতাড়িত ইমরান খান গত বছর দাবি করেন, তাঁর স্ত্রী বুশরা বিবিকে জেলে পুরতে সমস্ত সম্ভব কূট অস্ত্র প্রয়োগ করছেন নওয়াজ ও তাঁর ভাই তথা পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ। শুধু তাই নয়, রাজনীতি থেকে তাঁকে অন্তত ১০ বছর দূরে রাখতে দেশদ্রোহ আইনকে হাতিয়ারের মতো প্রয়োগ করছে নওয়াজের। কোনওভাবেই যাতে নির্বাচনে পিটিআই ও ইমরান লড়াই করতে না পারে লন্ডনে বসে সেই ছক কষেছেন শাহবাজ ও নওয়াজ।
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার (৮ অক্টোবর) পাক সংসদের নিম্নকক্ষ ন্যাশনল অ্যাসেম্বলির ২৬৫ আসনে ভোট হয়। বলে রাখা ভালো, ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির মোট আসন সংখ্যা ৩৩৬। এর মধ্যে ৬০টি সিট মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত। ১০টি আসন রাখা হয়েছে সংখ্যালঘু অ-মুসলিমদের জন্য। ম্যাজিক ফিগার ১৬৯। ফলে সরকার গড়তে ২৬৫ মধ্যে ১৩৩টি আসনে জয়লাভ করতে হবে।
শুক্রবার সকাল থেকে ভোটগোনার পর্ব শুরু হলেও সন্ধে পর্যন্ত স্পষ্ট হয়নি ঠিক কে বসতে চলেছে ইসলামাবাদের মসনদে। তবে শেষ পাওয়া হিসাব বলছে, নেতা গরাদের ওপারে থাকলেও ইমরান খানের দল পিটিআই সমর্থিত নির্দলরাই রয়েছে সবার আগে। যদিও একক দল হিসাবে সবচেয়ে বেশি আসন পেয়ে সরকার গড়ার দাবি জানিয়েছে নওয়াজ শরিফের পিএমএল-এন। আর কোনওই দাগ কাটতে পারেনি হাফিজ সইদের দল মারকাজি মুসলিম লিগ। শেষ পাওয়া খবরে ইমরানের পাক তেহরিক ই ইনসাফ সমর্থিত নির্দলরাই সবার আগে। তাদের দখলে রয়েছে ৬২টি আসন। যদিও একক দল হিসাবে নওয়াজ শরিফের পিএমএল-এন পেয়েছে ৪৩টি আসন। বিলাওয়াল ভুট্টোর দল পিপিপি পেয়েছে ৩৬টি আসন।
[আরও পড়ুন: ঝুলিতে ৯৭.৬ শতাংশ ভোট! মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীর দৌড়ে অদম্য ট্রাম্প]
শুক্রবার রাতেই দলীয় সমর্থকদের উদ্দেশে তাঁদের দলই জিতেছে এমন ‘দাবি’ করে জয়সূচক ভাষণও দিয়ে দেন বহুদিন পর দেশে ফেরা প্রাক্তন পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ। ঠিক কতগুলি আসন তাঁদের দল পেয়েছে তা স্পষ্ট না করেই শরিফ সকলকে ধন্যবাদ জানান, তাঁদের উপর ভরসা করার জন্য। অন্যদিকে, বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারির সঙ্গে জোট করেও তাঁরা সরকার গঠন করতে পারেন এমন তথ্যও মিলছে। অন্যদিকে, শনিবার জেল থেকেই সমর্থকদের বিজয়বার্তা দেন ইমরান। এআই কণ্ঠে তাঁকে বলতে শোনা যায়, “আপনারা বিপুল সংখ্যায় ভোট দিয়ে নওয়াজ শরিফের লন্ডল প্ল্যান ব্যর্থ করে দিয়েছেন।”
বৃহস্পতিবার থেকেই দেশজুড়ে মোবাইল পরিষেবা বন্ধ রেখেছিল প্রশাসন। ক্রমাগত হিংসার জেরে নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার দাবি উঠেছিল একাধিক শিবিরের তরফে। সেই নিয়ে নিরাপত্তা আধিকারিকদের সঙ্গে জরুরি বৈঠকে বসে পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন। সীমান্তের প্রদেশগুলোতে লাগাতার হিংসা সত্ত্বেও নির্বাচন পিছোতে নারাজ ছিল কমিশন। কিন্তু পিটিআইয়ের দাবি, সন্ত্রাসের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করেই ভোট দিয়েছেন সাধারণ মানুষ।