মণিশংকর চৌধুরী, ভাঙড়: ফাঁকা জমিতে পাওয়ার গ্রিড নয়। জমি, জীবিকা, বাস্তুতন্ত্র ও পরিবেশ রক্ষা কমিটির সেই আন্দোলন ঘিরে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল কলকাতা লাগোয়া দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড় (Bhangar)। ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে তা গ্রামবাংলার রাজনীতিতে যথেষ্ট বড় একটা ইস্যু হিসেবে সামনে এসেছিল। এবার ফের একটা পঞ্চায়েত ভোট (Panchayat Election)। গত ৫ বছরে গোটা রাজ্য রাজনীতিই অনেক পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে গিয়েছে। আজ সেই পাওয়ার গ্রিড আন্দোলনে একদা তপ্ত ভাঙড়ের আন্দোলনকারীদের ভূমিকা ঠিক কী? ভোটের দিন সরেজমিনে দেখে এল ‘সংবাদ প্রতিদিন’।
কংগ্রেস, বাম, তৃণমূল – একটার পর একটা রাজনৈতিক দলের হাত ছুঁয়ে ভাঙড়ের রাজনীতির রাশ এখন অনেকটাই আইএসএফের (ISF) হাতে। নওশাদ সিদ্দিকি (Nawsad Siddique) এখন ভাঙড়ের বিধায়ক। বিজেপি বাদে বিরোধীদের একমাত্র শিবরাত্রির সলতে। তাঁকে কেন্দ্র করে ভাঙড়ে পায়ের তলার মাটি শক্ত করছেন ধর্মভিত্তিক একটি রাজনৈতিক দল। কিন্তু কেন আচমকা দক্ষিণ ২৪ পরগনার রাজনীতিতে ঝড় তোলা পাওয়ার গ্রিড আন্দোলনের বাঁক এই পথে? জমি-জীবিকা বাঁচানোর তাগিদে পাওয়ার গ্রিড তৈরির বিরোধিতায় শাসকদলকে রুখে দেওয়া আন্দোলনকারীরা কেন নিজেদের হাতে তৈরি জমি ধীরে ধীরে আইএসএফের মতো ধর্মীয় দলের চারণভূমি করে তুলতে সাহায্য করল?
[আরও পড়ুন: তৃণমূল বিঁধছে বাহিনীকে, বাহিনীর তোপ কমিশনকে, রাজ্যকে দুষছেন রাজীব, দায় কার?]
এবারের পঞ্চায়েত ভোটে ভাঙড়ের পাওয়ার গ্রিড এলাকা ঘুরতে ঘুরতে দেখা হয়ে গেল আন্দোলনকারী মির্জা হাসানের সঙ্গে। বছর ৫, ৬ আগে তিনিও জমি-জীবিকা-বাস্তুতন্ত্র ও পরিবেশ রক্ষা কমিটির হয়ে তিনিও জান লড়িয়ে দিয়েছিলেন ভাঙড়ের কৃষিজমিতে যাতে পাওয়ার গ্রিড (Power Grid) তৈরি না হয়। যোগ ছিল সিপিএমএল (রেড স্টার), যারা মাওবাদী সমতুল্য বলে মনে করে প্রশাসন। সেসময় এই আন্দোলনের নেপথ্যে মাওবাদীদের সরাসরি যোগ থাকার অভিযোগ তুলেছিলেন। তা কতটা সত্য, সময়ই তার বিচার করবে। তবে মির্জা হাসানের দাবি, শাসকদলের প্রবণতাই এমন। অর্থাৎ যে কোনও বিষয় নিজেরা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে মাওবাদী-নকশাল তকমা দিয়ে মানুষের নজর ঘোরানোর চেষ্টা করে। ফলে আজ ভাঙড়ের মাটিতে দাঁড়িয়ে তৃণমূল-সহ একদা সেখানকার ক্ষমতায় থাকা রাজনৈতিক দলগুলির সঙ্গে দূরত্ব আরও বেড়েছে। আর তলে তলে তাঁদের সমর্থনের পাল্লা ভারী হচ্ছে আইএসএফের দিকে।
[আরও পড়ুন: সীমান্ত লাগোয়া জেলায় ফের খুন, বাংলাদেশি দুষ্কৃতীদের তাণ্ডবে উত্তপ্ত বাগদা!]
কিন্তু জমিরক্ষা কমিটির এহেন রাজনৈতিক অবস্থানে উঠছে হাজারও প্রশ্ন। ৫ বছর আগে যে জমিরক্ষা কমিটির প্রার্থীরা পঞ্চায়েত ভোটে লড়াই করে জিতেছেন, সেখানে আজ কেন নিজেদের ইস্যু নিয়ে ফের ঝাঁপালেন না? কেনই বা ধীরে ধীরে আইএসএফকে জায়গা ছেড়ে দিচ্ছেন? তবে কি বঙ্গ রাজনীতির মোড় ঘোরানো এই জেলার একটি অংশে ধর্মের ভিত্তিতেই গুরুত্বপূ্র্ণ হয়ে উঠবে একটি রাজনৈতিক দল? তা বাংলার ক্ষেত্রে কতটা প্রাসঙ্গিক, তা তো সময়ই বলবে।