shono
Advertisement

এই মন্দিরে মানুষের আগে পুজো দেন প্রেতাত্মারা!

নৈবেদ্যে, অর্ঘ্যে শারদা মাতার পূজা সেরে আলো ফোটার আগেই তাঁরা ফিরে যান প্রেতলোকে। The post এই মন্দিরে মানুষের আগে পুজো দেন প্রেতাত্মারা! appeared first on Sangbad Pratidin.
Posted: 03:55 AM Jun 03, 2016Updated: 10:25 PM Jun 02, 2016

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: মা কি সন্তানের ধর্ম-বর্ণ-গোত্র বিচার করেন?

Advertisement

জানা কথা, উত্তরটা না-ই আসবে! এমনকী, মৃত্যুও মা আর সন্তানের স্নেহের বাঁধন ছিন্ন করতে পারে না। মায়ের মৃত্যুর পরে সন্তান তাকে মনে রাখুক বা না-ই রাখুক, মা কিন্তু অপেক্ষা করে চলেন মৃত সন্তানের জন্য। এই আশা নিয়ে, একদিন ঠিক তাঁর সন্তান তাঁর কাছে ফিরে আসবে।
মৃত্যুর বাঁধন উপেক্ষা করে সন্তান ফিরে আসে না ঠিকই! কিন্তু, সে তো মানুষের জগতে। মা যেখানে স্বয়ং জগদীশ্বরী শারদা, সেখানে এই সব নিয়ম খাটে না। মধ্য প্রদেশের মাইহারে শারদা মাতার মন্দিরে তাই প্রতি ব্রাহ্মমুহূর্তে সমাবেত হন মৃত সন্তানরা!
কেন, সে বৃত্তান্তে আসার আগে মাইহারের ইতিহাসে একবার চোখ রাখা যাক! ফিরে যাওয়া যাক পুরাণ-কথায়!
যে দিনের কথা, সেই দিনটা শিব এবং তাঁর প্রথম স্ত্রী সতী- কারও পক্ষেই ভাল ছিল না। সকাল থেকেই শুরু হয়েছিল বিবাদ। সতী দেখেছিলেন, কৈলাসের পথে তাঁর দিদিরা সেজেগুজে বিচিত্র সব রথে চলেছেন কোথাও একটা!
সতী দৌড়ে যান দিদিদের কাছে। জানতে চান, তাঁরা কোথায় যাচ্ছেন!


দিদিরা অবাক হন! প্রজাপতি দক্ষ আয়োজন করেছেন মহাযজ্ঞের, সারা পৃথিবী সেই যজ্ঞে আমন্ত্রিত। আর দক্ষের সব চেয়ে আদরের মেয়ে সতীই সে কথা জানেন না!
সতীর জানার কথাও নয়। দেবসভায় দক্ষকে দেখে উঠে সম্মান জানাননি শিব! তাই দক্ষও যজ্ঞে শিবকে আমন্ত্রণ না জানিয়ে অপমান করেছেন। সেই সঙ্গে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন সতীর থেকেও!
সতীর ম্লান মুখ দেখে খারাপ লাগে দিদিদের। তাঁরা প্রস্তাব দেন, সতীও তাঁদের সঙ্গেই চলুন!
প্রথমটায় সতী যেতে চাননি! কিন্তু, দিদিরা যখন বলেন বাপের বাড়ি যেতে মেয়েদের আমন্ত্রণের প্রয়োজন হয় না, তখন কথাটা তাঁর মনে দাগ কেটে যায়। দিদিদের বলেন এগিয়ে যেতে, তিনিও স্বামীর অনুমতি নিয়ে রওনা হবেন।
শিব কিন্তু সম্মতি দেননি! বুঝিয়ে বলেন ওখানে গেলে কেবল অপমানই প্রাপ্য হবে সতীর!
নাছোড়বান্দা সতী তার পর দশটি উগ্র রূপ ধরে ভয় দেখান শিবকে। শিবকে যে দিকেই যান, ভয়ানক রূপে তাঁর পথরোধ করেন সতী। বিব্রত হয়ে অবশেষে সম্মতি দেন শিব। ফুলের গয়নায় সেজে, নন্দীর পিঠে সওয়ার হয়ে যাত্রা করেন যজ্ঞস্থলের দিকে।
শিব কিন্তু যা বলেছিলেন, তাই হয়! দক্ষ সতীকে দেখে খুশি হননি একটুও! বরং তীব্র নিন্দা করেন মেয়ে-জামাইয়ের। অভিযোগ তোলেন, ভিখারি শিব দুটো ভাল খাদ্য-বস্ত্রের জন্য আমন্ত্রণ না পেয়েও পাঠিয়েছেন স্ত্রীকে।
স্বামীর সেই অপমান সহ্য করতে না পেরে প্রাণ বিসর্জন দেন সতী! খবর পেয়ে দক্ষের যজ্ঞ পণ্ড করেন শিব এবং তাঁর দলবল।
কিন্তু, শোক শিবকে মূহ্যমান করে তোলে। সতীর মৃতদেহ কাঁধে নিয়ে তিনি উন্মাদের মতো বেরিয়ে পড়েন আকাশমার্গে।
বিপাক দেখে তখন এগিয়ে আসেন বিষ্ণু। সুদর্শন চক্রে ছিন্নভিন্ন করে দেন সতীর শরীর। সেই শরীরের একেকটি অংশ যেখানে যেখানে পড়ে, জন্ম নেয় শক্তিপীঠ। সতীর গয়নাও যেখানে পড়ে, তা মর্যাদা পায় উপ-শক্তিপীঠের।


মাইহার সেই উপ-শক্তিপীঠের অন্তর্গত। পুরাণ বলে, এখানে মায়ের কণ্ঠহার নিক্ষিপ্ত হয়েছিল। মাই কা হার, সেখান থেকেই মাইহার। দেবী এখানে অবস্থান করেন শারদা রূপে।
তবে, মন্দিরে কিন্তু শারদা দেবী একা বিরাজ করেন না। প্রথামাফিক সঙ্গে থাকেন তাঁর ভৈরব বা শিবের রূপ।
এছাড়াও এই মন্দিরে শারদা দেবীর পায়ের কাছে দেখা যায় একটি প্রস্তরফলক। সেখানে খোদাই করা রয়েছে দুই বীর যোদ্ধার মূর্তি। এই দুই বীর ভাইয়ের নাম আলহা আর উদল।
আলহা আরক উদলের জয়গান আজও গায় মধ্য প্রদেশ। প্রবল পরাক্রমশালী এই দুই ভাইয়ের সৌজন্যে একাধিকবার শত্রুর আক্রমণ থেকে রক্ষা পেয়েছে মাইহার। পৃথ্বীরাজ চৌহানের মতো অমিতবিক্রম যোদ্ধাও পরাজয় বরণ করেছিলেন আলহা-উদলের কাছে।
কাহিনি বলে, আলহা আর উদলের শক্তির উৎস ছিলেন স্বয়ং দেবী শারদা। দেবীর পুজো না করে কখনই যুদ্ধে যেতেন না আলহা-উদল। বিশেষ করে আলহা!
দেবীও তুষ্ট হয়েছিলেন আলহার এই ভক্তিতে। শোনা যায়, দেবীর বরে আলহা পেয়েছিলেন ১২ বছরের অমরত্ব। সেই ১২টি বছরে তিনি ছিলেন সবার ধরা-ছোঁয়ার ঊর্ধ্বে।
তবে, মানুষকে একদিন পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতেই হয়। সেই নিয়মেই মৃত্যু আলহা-উদলেরও!
কিন্তু, তাঁরা প্রাণপ্রিয় মাইহার এবং শারদা মাতার মন্দির ছেড়ে কোথাও যেতে পারেননি! প্রতি ব্রাহ্মমুহূর্তে তাঁরা মন্দিরে এসে পুজো দিয়ে যান শারদা মাতার। ঠিক যেমনটা তাঁরা করতেন জীবদ্দশায়।
চিত্রকূট পর্বতের পাদদেশে শারদা দেবীর মন্দিরের ঠিক নিচেই রয়েছে এক পবিত্র হ্রদ। আলহার নামে তার নাম রাখা হয়েছে আলহা কুণ্ড। স্থানীয়রা বলেন, রোজ ব্রাহ্মমুহূর্তে আলহা আর উদল সেই কুণ্ডে স্নান সেরে প্রবেশ করেন মন্দিরে।


সেই জন্যই রাত ২টো থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত বন্ধ থাকে মন্দিরের দ্বার। এই সময়ে কাউকে মন্দিরে ঢুকতে দেওয়া হয় না। এমনকী, পুরোহিতরাও অপেক্ষা করেন মন্দিরের বাইরেই!
ওই সময়েই যে প্রেতলোক থেকে নিত্যপূজা সম্পন্ন করতে আসেন আলহা আর উদল। তাঁরা প্রাণপ্রিয় শারদা মাতার পূজায় বিন্দুমাত্র ব্যাঘাত সহ্য করতে পারেন না। অন্যের উপস্থিতিতেও বিঘ্ন ঘটে তাঁদের মনঃসংযোগে। নৈবেদ্যে, অর্ঘ্যে শারদা মাতার পূজা সেরে আলো ফোটার আগেই তাঁরা ফিরে যান প্রেতলোকে।
নানা সময়ে অনেকেই বিশ্বাস করতে চাননি এই কাহিনি। জোর করে কিছু পুরোহিত একবার ওই সময়ে লুকিয়ে ছিলেন মন্দিরের গর্ভগৃহে। রক্তাক্ত অবস্থায় পরে তাঁর মৃতদেহ উদ্ধার হয়। এরকম ঘটনা মাঝেমাঝেই ঘটেছে। প্রাণ হারিয়েছেন অবিশ্বাসীরা। তাই এখন আর কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না এই সময়টায় মন্দিরে।
প্রশ্ন উঠতেই পারে, আলহা আর উদল কেন কারও উপস্থিতি সহ্য করতে পারেন না? কেউ বিরক্ত না করলে তো অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।
আসলে, এখন কেবল ভক্তিটুকুই এই পৃথিবীর সঙ্গে বেঁধে রেখেছে তাঁদের। কালের প্রকোপে হারিয়ে গিয়েছে তাঁদের সব কিছুই! পড়ে রয়েছে শুধু শারদা মাতার মন্দিরটুকুই! এটাই কেবল তাঁদের একমাত্র জায়গা, যেখানে তাঁরা এক সময়ের অভ্যেসমতো বেঁচে ওঠার আস্বাদ পান!
সেটুকুতেও কেউ বাধা দিলে কি রাগ হওয়ার কথা নয়?

The post এই মন্দিরে মানুষের আগে পুজো দেন প্রেতাত্মারা! appeared first on Sangbad Pratidin.

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement