শিলাজিৎ সরকার: বছর দশেক আগের কথা। হরিয়ানার আর পাঁচজন কিশোরীর মতোই বক্সিং আর মার্শাল আর্টের প্রতি ভালোবাসায় বিভোর ছিলেন স্কুল পড়ুয়া মনু ভাকের। সঙ্গে চলত টুকটাক টেনিস খেলাও। তবে নতুন নতুন বিষয় শেখার প্রতি মেয়ের আগ্রহের কথা অজানা ছিল না মনুর বাবা রামকিষন ভাকেরের। তাই একদিন এর আত্মীয়ের সূত্রে মেয়েকে নিয়ে হাজির হয়েছিলেন শুটিং রেঞ্জে। মনুর হাতে তুলে দিয়েছিলেন এয়ার পিস্তল।
এরপর আর সেই পিস্তল হাত থেকে নামাননি মনু। বিভিন্ন খেলার প্রতি প্রেমটা যেন কেন্দ্রীভূত হল শুটিং রেঞ্জ আর বুলস আই-এর কেন্দ্রস্থলে। ঝাঝরে বসে নেওয়া রামকিষনের সেদিনের পদক্ষেপ যেন পূর্ণতা পেল রবিবার, শ্যাঁতাউয়ের শুটিং রেঞ্জে। যে রেঞ্জে দেশের প্রথম মহিলা শুটার হিসাবে অলিম্পিক (Paris Olympics 2024) পদক জিতলেন মনু। ১০ মিটার এয়ার পিস্তলে ব্রোঞ্জ পেয়ে কাটালেন শুটিংয়ে এক যুগের পদক-খরা। যে সাফল্যের পর শুভেচ্ছার বন্যায় ভেসে গিয়েছে পুরো ভাকের পরিবার। বেশ কয়েকবারের চেষ্টায় ফোনে পাওয়ার পর রামকিষন বলছিলেন, “একটার পর একটা ফোন এসেই চলেছে। সবাই শুভেচ্ছা জানাচ্ছে। আমরা খুব খুশি। মনু (Manu Bhaker) যেভাবে গত কয়েক বছর পরিশ্রম করেছে, এই পদক ওর প্রাপ্য ছিল।”
[আরও পড়ুন: মণিপুর সামলানোর রূপরেখা! দিল্লিতে মোদি-বিরেন বৈঠক ঘিরে জল্পনা]
অন্যান্য প্রতিযোগিতার সময় মেয়ের শুটিং রেঞ্জে উপস্থিত থাকতে দেখা গিয়েছে রামকিষনকে। কিন্তু মনুর ইতিহাস গড়ার মুহূর্তটা রেঞ্জে বসে নয়, বাড়ি থেকেই দেখেছেন তিনি। কেন? রামকিষন বলছিলেন, “আসলে মেয়ে এবার আমাদের বারণ করেছিল প্যারিস যেতে। তাই আমি আর আমার স্ত্রী, সুমেধা বাড়িতে বসেই ওর পারফরম্যান্স দেখলাম।” টোকিওর ব্যর্থতার পর মনুকে রীতিমতো আগলে রেখেছিলেন রামকিষন। এমনকী কোনও অনুষ্ঠানে গিয়ে মনু সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হলেও পাশে দাঁড়িয়ে থাকতেন তিনি। তবে এবার দূর থেকেই মেয়েকে আশীর্বাদ করছেন রামকিষন, “সবে একটা ইভেন্ট শেষ হল। আরও দু’টো পদক জয়ের সুযোগ আছে মনুর। আশা করছি এবার ওর পদকের রংটা বদলে যাবে।” সত্যিই, মনুর গলায় সোনালী পদকটাই তো দেখতে চায় আসমুদ্রহিমাচল।