জ্যোতি চক্রবর্তী, বনগাঁ: বাগানে কলার মোচা কাটতে গিয়ে মহিলাকে দংশন করেছিল সাপ (Snake)৷ হাসপাতালে নিয়ে না গিয়ে পরিবারের লোকজন তাঁকে পাশের গ্রামে ওঝার বাড়ি নিয়ে যায়। আর তাতেই বিপত্তি যা হওয়ার, হল। ঝাড়ফুঁক আর বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু হল ওই মহিলার। বৃহস্পতিবার সকালে ঘটনাটি ঘটেছে বনগাঁ থানার পুরাতন বনগাঁ জোড়া ব্রিজ এলাকার। এই ঘটনায় আবার সাপের কামড়ে কুসংস্কারে (Superstition)বলির ঘটনা প্রকাশ্যে এল৷ এ বিষয়ে নানা সময়ে সচেতনতামূলক প্রচার সত্বেও এ ধরনের ঘটনা যে গ্রামবাংলায় ঘটেই চলেছে, তা ফের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল এই ঘটনা।
পুলিশ সূত্রে খবর, মৃত গৃহবধূর নাম সুষমা রায়। ঘটনা পরম্পরা খানিকটা এরকম। মৃত সুষমা তাঁর স্বামীকে নিয়ে বনগাঁর (Bongaon)জোড়া ব্রিজ এলাকায় বাপের বাড়িতে থাকেন। ঠাকুরনগর বাজারে তিনি দৈনিক শাক-সবজি বিক্রি করেন। বৃহস্পতিবার সকালে বিক্রি করতে বাজারে নিয়ে যাবেন বলে বাড়ির পাশের বাগানের মধ্যে কলাগাছ থেকে মোচা কাটতে গিয়েছিলেন। তাঁর মা মিলনবালা দূরে দাঁড়িয়েছিল। এই সময়েই ঘটে যায় বিপত্তি। হঠাৎই তাঁর পায়ে কিছু কামড়েছে (Bite), তা জানিয়ে চিৎকার করতে থাকেন সুষমা।
[আরও পড়ুন: ‘সব বদলে দিচ্ছে, দেশের পরিস্থিতি জরুরি অবস্থার চেয়েও খারাপ’, কেন্দ্রকে তোপ অভিষেকের]
মা মিলনবালা দেবী বলেন, “ওকে সাপে কামড়েছে, বুঝতে পেরে আমি প্রতিবেশীদের ডেকে নিয়ে দ্রুত পাশের গ্রামের মধু ওঝার কাছে যাই। সেখানে তিনি মেয়েকে দেখে বলেন, বিষধর সাপে কামড়ায়নি। তারপর ওষুধপত্র দেন৷ মেয়েকে বাড়িতে আনার পরেই মৃত্যু হয়।” সুষমার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই সাপে কাটা রোগীকে নিয়ে আগে হাসপাতালে না গিয়ে ওঝার বাড়িতে যাওয়া ও তার চিকিৎসা করা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এলাকার মানুষজন।
[আরও পড়ুন: কয়লা পাচার কাণ্ড: CBI হেফাজতে ধৃত ECL কর্তারা, তদন্তের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন অভিষেকের]
এ নিয়ে বিজ্ঞান মঞ্চের রাজ্য সম্পাদক প্রদীপ সরকার বলেন, “আমরা নিয়মিত বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে ওঝা-গুনিনদের বিরুদ্ধে, কুসংস্কারের বিরুদ্ধে প্রচার করি। কিন্তু তাতে কাজ হয়নি। প্রশাসনকে আরও বেশি সক্রিয় হয়ে প্রচার করতে হবে এবং হাসপাতালের উন্নয়ন ঘটিয়ে মানুষকে হাসপাতালমুখী করতে হবে।” সুষমা দেবীর মৃত্যুর খবর শুনে মধু ওঝার দাবি, শরীরে অন্য কোন রোগ ছিল তাঁর। সে কারণেই মৃত্যু হয়েছে। ওঝার আরও দাবি, ওই গৃহবধূকে জলঢোঁড়া সাপে কামড়েছিল। ওষুধপত্র খাইয়ে তাঁকে হাসপাতালে যাওয়ার কথা বলেছিলেন তিনি। কিন্তু তা না করে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়াতেই মৃত্যুমুখে পড়তে হল। তবে অভিযোগ, দাবি – যাইই থাকুক, স্রেফ কুসংস্কারের জেরে প্রাণহানির ঘটনা সত্যিই অনভিপ্রেত।