লগ্নিকারীদের জন্য রোডম্যাপ এঁকে দিলেন ইউনিয়ন অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির চিফ মার্কেটিং অফিসার শ্রী সৌরভ জৈন। নিচে নীলাঞ্জন দে’র সঙ্গে তাঁর কথোপকথনের নির্যাস।
ইদানিং ইক্য়ুইটির বাজারে অনেক ছোট সাধারণ ইনভেস্টর এসেই বড় প্রফিটের সন্ধান করছেন। সবসময় তাঁদের উদ্দেশ্য সফল হচ্ছে না। আপনি কীভাবে বিষয়টি দেখছেন?
ঠিকই বলেছেন। চটজলদি লাভ যে প্রতিবার হবেই, এই ধারণাটি ভুল এবং অবশ্যই খুব বিভ্রান্তিকর। ইক্য়ুইটির সম্ভাবনা প্রবল বটে, তবে তা পরিষ্কারভাবে বোঝা যায়, যদি লগ্নিকারী যথেষ্ট সময় দিতে রাজি থাকেন। তা না হলে, কেবল শর্ট টার্মে মুনাফা করার জন্য মার্কেটে পা রাখার অভ্যাস খুব বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। আমাদের দেশে সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে, এই অতি স্বল্প সময়ে লাভ গুছিয়ে নেওয়ার মানসিকতা বেড়েছে। বাজারে হালে এসেছেন অথচ গোড়াতেই এই জাতীয় ধারণা মনে পুষে রাখছেন, এমন অনেকেই রয়েছেন। এঁদের মধ্য়ে এক বিরাট অংশ যে আশাহত হবেন, তা আর দ্বিতীয়বার বলার দরকার পড়ে না। আমি বিশেষ করে স্টক মার্কেটের লগ্নিকারীদের কথা বলছি। পরিসংখ্যান থেকেই বোঝা যাচ্ছে যে, বাজারের একাংশ রিস্ক সম্বন্ধে বিশদ না জেনেই বিনিয়োগ করেছেন।
রিস্ক না থাকলে রিটার্ন আসবে কীভাবে?
দেখুন, রিস্ক এবং রিটার্ন সম্বন্ধে নানা “মিথ” কাজ করে। পরিস্থিতি বুঝে ঝুঁকি নিতেই পারেন সংশ্লিষ্ট লগ্নিকারী, তাতে দীর্ঘকালীন রিটার্ন পাওয়া অসম্ভব কোনও ব্যাপার নয়। তবে ঝুঁকির সম্ভব্য ফলাফলের জন্য তৈরি থাকা দরকার। এর সঙ্গে কয়েকটি সাধারণ নিয়মও মেনে চলতে বলি আমি। যেমন ধরুন ডাইভারসিফিকেশন। যদি যথেষ্ট ডাইভারসিফাই না করেন, এবং সময়মতো নিজের পোর্টফোলিও রিব্যালেন্সিং না করেন, তাহলে মুশকিলে পড়বেন ইনভেস্টর। কেবল একটি-দুটি অ্যাসেট ক্লাসে সীমিত রাখার দরকার নেই – এই কথাটি বিলক্ষণ বুঝতে হবে। এই মুহূর্তে গোল্ড বা সিলভারের মতো সক্রিয় অ্যাসেট উপস্থিত, এবং ইক্য়ুইটি ও ডেটেও লগ্নির হার বাড়ছে। সাধারণ মানুষের ইনভেস্টমেন্টের অভ্যাস বদলে যাচ্ছে, তা বেশ ইতিবাচক। সেই সূত্রেই বলি, সামান্য কয়েকটি কার্যকলাপ বড় তফাৎ গড়ে দিতে পারে। নিয়মিত লগ্নি করুন, যদি মিউচুয়াল ফান্ডের মাধ্যমে তা করতে পারেন, ভালো হয়। এমনিই সিপের ব্যবহার বাড়ছে, ধারাবাহিক লগ্নির সুবিধা বুঝতে পারছেন ইউনিট হোল্ডাররা। সব থেকে ভালো কথা হল, আধুনিক প্রজন্মের মধ্য়েও নতুন অভ্যাস গড়ে উঠছে। এর ফল সুদূরপ্রসারী হবে।
ইউনিয়ন মিউচুয়াল ফান্ডের মারফত কোন ধরনের বিনিয়োগ সম্ভব?
আমাদের বেশ কয়েক রকমের প্রকল্প ইতিমধ্য়েই ইনভেস্টরদের পছন্দসই হয়েছে। ইক্য়ুইটি তো বটেই, ডেটও আজ বড় ভূমিকা নিয়েছে বলে বোঝা যাচ্ছে। হাইব্রিড শ্রেণীর ফান্ড নিয়ে বিশেষভাবে বলতে চাই আমি। ইক্য়ুইটি এবং ডেটের বিভিন্ন অনুপাতে সুযোগ নিতে চান বেশ কিছু ইনভেস্টর। ইদানীং গোল্ডে লগ্নির যে প্রবণতা দেখেছি (তার কারণও আছে) তার জন্য মাল্টি অ্যাসেট অ্যালোকেশন ফান্ডও আছে আমাদের কাছে। এছাড়াও মনে রাখতে হবে যে বিকল্পের তালিকায় চিলড্রেন্স ফান্ড এবং রিটায়ারমেন্ট ফান্ড, দুই-ই। উন্নতমানের প্রকল্পের মধ্য়ে আমি “ইনোভেশন অ্যান্ড অপরচুনিটিজ” আলাদাভাবে উল্লেখ করতে চাই। এবং একইভাবে অ্যাক্টিভ মোমেন্টাম বেশ ব্যতিক্রমী একটি প্রকল্প হিসাবে গণ্য করা যেতে পারে। খেয়াল করুন, এই জাতীয় বিশেষ ফান্ড “স্যাটেলাইট” হিসাবে পরখ করতে পারেন লগ্নিকারীরা। এটি “কোর” হোল্ডিংয়ের অংশ করবেন না, এ-ও জানিয়ে রাখা উচিত।
বিকল্পের ভিড় এড়িয়ে অ্যাসেট অ্যালোকেশন করা যাবে কী করে?
দেখুন, অ্যাসেট অ্যালোকেশনই ঠিক এবং শেষ কথা। এখানে ভুল করলে, বিনিয়োগের উদ্দেশ্য সফল হবে না, রিটার্নেও খামতি দেখবেন ইনভেস্টররা। রিস্ক প্রোফাইল বদলালে, অ্যালোকেশনের কৌশলেও পরিবর্তন আনা উচিত। রিটার্নের ধারাবাহিকতা এনে দেওয়া নিঃসন্দেহে আজ এক বড় চ্যালেঞ্জ। যদি “কনসিসটেন্সি” নিশ্চিত করা যায়, তাহলে ইনভেস্টররা অবশ্যই সে দিকে ঝুঁকবেন। আমি বলছি না যে লাভের তালিকায় এক নম্বরে সবসময়ই কোনও পেশাদার ফান্ড ম্যানেজার থাকতে পারবেন।
তা সম্ভব নয়, কারণ বিগত দিনের রিটার্ন আগামীতে নিশ্চিত করা যায় না। তবে হ্যাঁ, “কনসিসটেন্সির” নিরিখে যে ক্রমাগত কেউ উপরের স্তরে – প্রথম পঁচিশ শতাংশের মধ্য়ে – থাকতে পারে, তাহলে তার উপর বাজারের নজর পড়বে বৈকি। প্রকল্পের সংখ্যা বাড়ছে। যেখানে নতুন পেশাদার পরিচালকরা যেখানে আসছেন, সেখানে এমন চ্যালেঞ্জ নিশ্চয়ই পাব আমরা। এর পরিপ্রেক্ষিতে আমার তিনটি সূত্র লগ্নিকারীদের সঙ্গে শেয়ার করতে চাই –
ক। বিচ্ছিন্নভাবে বিনিয়োগ করবেন না, সরল প্রক্রিয়া যত শীঘ্র পারেন আরম্ভ করুন।
খ। ডাইভারসিফিকেশন সহ কিছু সাধারণ নিয়ম মানুন।
গ। রিব্যালেন্স করুন প্রয়োজন বুঝে।