shono
Advertisement

শেয়ার কেনার আগেই বিক্রি করে মুনাফার সুযোগ, কী এই শর্ট সেলিং?

শর্ট সেলিংয়ের মাধ্যমে মুনাফা পাবেন কীভাবে?
Posted: 05:37 PM May 02, 2023Updated: 05:37 PM May 02, 2023

শেয়ার কেনার আগেই বিক্রি করে দেওয়া যায়। জানতেন কি? এই প্রক্রিয়াকে বলে শর্ট সেলিং। যার হাত ধরে লগ্নির বাজারে লাভের মুখ দেখা সম্ভব। বর্ণনায় শান্তনু কে গাঙ্গুলি

Advertisement

শেয়ার বাজারে দুটি চর্চিত শব্দ হচ্ছে ‘লং’ (long) আর ‘শর্ট’ (short)। সহজ কথায়, ‘লং’ মানে কেনা আর শর্ট মানে ‘বেচা’। আপনি TCS-এর শেয়ার ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩-এ ৩৫০০ টাকায় কিনলেন। এর মানে আপনার অবস্থান (position) এই শেয়ারের পরিপ্রেক্ষিতে ‘লং’। ১৬ই ফেব্রুয়ারি আপনি ওই শেয়ার ৩৫৫০ টাকায় বেচে ৫০ টাকা শেয়ার প্রতি লাভ ঘরে তুললেন। অর্থাৎ আপনি TCS-এর শেয়ার লং পজিশন নিয়ে পরে শর্ট করলেন। প্রথমে কিনে পরে বেচলেন। এইভাবে লাভ করা তখনই সম্ভব, যখন শেয়ারের দাম বাড়ে। শেয়ার বাজার থেকে মুনাফা করার এটাই প্রচলিত পদ্ধতি।

কিন্তু এমন কী হতে পারে, যার ফলে লাভ করা সম্ভব যখন শেয়ারের দাম কমছে? উত্তর-সম্ভব। ধরুন Tata Steel-এর শেয়ার প্রতি দর ১১০ টাকা এবং আপনি মনে করছেন এই মূল্য অত্যধিক এবং এর দাম কমবে। আপনি শেয়ারটি বেচে দিলেন ১১০ টাকা দরে। প্রশ্ন হল, আপনি ১০০ শেয়ার পাবেন কোথা থেকে? এখানে ১০০ শেয়ার ধার দিল কেউ (ব্রোকার)। শর্তসাপেক্ষে NSE-র Security lending and borrowing (SLB) প্ল‌্যাটফর্ম ব্যবহার করা যায় শেয়ার ধার করার জন্য। এক্ষেত্রে শেয়ার borrower-কে ১০০% margin জমা রাখতে হবে। এবার আপনার ধারণা অনুযায়ী, শেয়ার বাজার দর কমে হল ১০০ টাকা, আপনি বাজার দরে শেয়ার কিনে ধার করা ১০০ শেয়ার ফেরত দিয়ে দিলেন। অর্থাৎ আপনার লাভ হল শেয়ার পিছু ১০ টাকা-সর্বমোট ১০০ X ১০ (১১০-১০০)= ১০০০ টাকা। শেয়ার কেনার আগেই শেয়ার বিক্রি (short) করাকে ‘শর্ট সেলিং’ বলে। এইভাবে ‘শর্ট সেলিং’ দ্বারা মুনাফা করা সম্ভব পড়তি বাজারে। বৃহত্তর অর্থে শর্ট সেলিং ভাল না খারাপ?

[আরও পড়ুন: বকেয়া DA-র দাবিতে মিছিলের অনুমতি দিল হাই কোর্ট, কড়া প্রশ্নের মুখে রাজ্য]

এই নিয়ে দ্বিমত আছে। যখন অর্থনীতিতে মন্দার আভাস দেখা যায়, অর্থাৎ বিভিন্ন কারণে মনে করা হয় কোম্পানিগুলির মোট রোজগার, মুনাফা, নগদ প্রবাহ (Operational cash flow) কম হবে, তখন এর প্রভাবে এমনিতেই শেয়ার মার্কেট নিম্নগামী হবে, এবার যদি শর্ট সেলিংয়ের ব্যাপারে কোনও বাধা না থাকে, তাহলে মন্দা আরও ত্বরান্বিত হবে। শেয়ারের মূল্য স্থিতিশীলতাতে চরম বিঘ্ন ঘটাবে। ২০০৮ সালে অর্থনৈতিক মন্দার কারণে আমেরিকাতে শর্ট সেলিংয়ের ওপর বেশ কিছুদিনের জন্য নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল। কিন্তু এর বিপরীত মতও আছে যা গুরুত্বপূর্ণ। বাজার যখন অতিরিক্ত ঊর্ধ্বমুখী হয়, শেয়ার দর এমন একটা পর্যায়ে উঠে যায়, যা কোম্পানির অর্থনেতিক বাস্তবতার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়, তখন শর্ট সেলাররা শেয়ার বিক্রি শুরু করেন যাতে শেয়ারের দাম কমতে শুরু করে এবং শেয়ার দর কোম্পানির বাস্তব অর্থনৈতিক অবস্থার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়। অর্থাৎ শর্ট সেলিং সঠিক মূল্য নির্ধারণের (price discovery) ক্ষেত্রে সহায়ক হয়–শেয়ার দর কমে এবং শর্ট সেলার কমদামি শেয়ার কিনে মুনাফা ঘরে তোলেন। গবেষণা জানাচ্ছে, শর্ট সেলিং-এর ওপর নিষেধাজ্ঞা মূল্য স্থিতিশীলতাতে কোনও সাহায্য তো করেই না, বরং লিকুইডিটি বিঘ্নিত করে সঠিক দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে।

[আরও পড়ুন: ম্যাচের পরেই তুমুল বাকবিতণ্ডা বিরাট-গম্ভীরের, মোটা অঙ্কের জরিমানা দুই তারকার]

ভারতবর্ষের শেয়ার বাজারে শর্ট সেলিং-এর অবস্থা ঠিক কী রকম?
স্টক মার্কেটে প্রথাগত দুটি বিভাগ আছে–ক্যাশ সেগমেন্ট এবং ডেরিভেটিভ সেগমেন্ট। এছাড়া আছে ডে ট্রেডিং। ক্যাশ সেগমেন্ট, যাকে প্রচলিত অর্থে স্পট মার্কেট বলা হয়, সেখানে সম্প্রতি T+1 পদ্ধতি চালু হয়েছে। অর্থাৎ শেয়ার যেদিন বিক্রি করা হবে তার পরদিন অবশ্যই ডেলিভারি দিতে হবে-এই নিয়ম স্পট মার্কেটে শর্ট সেলিং-এর সুযোগ খুব সীমিত করে দেয়। এবার আসা যাক ডে ট্রেডিং-এর কথায়। ডে ট্রেডিং-এর ক্ষেত্রে দিনের বেচা-কেনা দিনের ভেতর সম্পন্ন করতে হয়। অর্থাৎ আপনি শেয়ার কিনলে সেদিনেই বিক্রি করে লাভ/ক্ষতি ঘরে তুলতে হবে। একইভাবে আপনি শেয়ার আগে বিক্রি করলে দিনের ভেতর শেয়ার কিনে আপনার অবস্থান (position) ক্লোজ করতে হবে। ধরুন আপনি দেখলেন, সকালে HUL শেয়ারের দর অত্যাধিক বাড়ছে এবং আপনার মনে হল, বাজার HUL-এর শেয়ার ওভার প্রাইসিং করছে। দিনের শেষে এই দাম পড়বে। আপনি ২৫০০ টাকায় ১০০ HUL শেয়ার বিক্রি করলেন। আপনার অনুমান সত্যি হল, দিনের শেষে শেয়ার দর দাঁড়াল ২৪৯০ টাক। আপনি শেয়ার কিনে নিলেন এবং ১০ টাকা শেয়ার প্রতি অর্থাৎ ১০০০ টাকা (১০ X ১০০) ঘরে তুললেন। কিন্তু দেখা গেল দিনের শেষে শেয়ার-এর দর না কমে বেড়ে গিয়ে দাঁড়াল ২৫০৫ টাকায়। আপনাকে ২৫০৫ টাকাতেই শেয়ার কিনতে হবে আপনার পজিশন close করার জন্য। এক্ষেত্রে আপনি শেয়ার পিছু পাঁচ টাকা লোকসান করবেন। আপনি যদি আপনার পজিশন close না করেন, তাহলে T+1 নিয়ম অনুযায়ী আপনাকে শেয়ার ডেলিভারি করতে হবে পরের দিন। ডেলিভারি না দিতে পারলে আইন অনুযায়ী আপনাকে ‘পেনাল্টি’ দিতে হবে।

তাহলে যা দাঁড়াচ্ছে-স্পট মার্কেটে যদিও কোনও সরাসরি বাধা নিষেধ নেই শর্ট সেলিং-এর ব্যাপারে, কিন্তু ডেলিভারির শর্ত ট্রেডারদের একরকম বাধ্য করে শেয়ার হাতে নিয়েই বিক্রি করতে। কিন্তু ডেরিভেটিভ কন্ট্রাক্ট (ফিউচার আর অপশন)-এর ক্ষেত্রে শর্ট সেলিং সম্ভব। ধরা যাক, উপরোক্ত HUL-এর মার্চ ২০২৩ শেয়ার ফিউচার মার্চ ৭,২০২৩-এর দর ২৪৯৫ টাকা। মেয়াদ শেষের তারিখ মার্চ ২৯/০৩/২০২৩। আপনার মনে হল, দর বেশি। আপনি ২৪৯৫ দরে HUL শেয়ার ফিউচার বেচে দিলেন বা শর্ট করলেন। দেখা গেল, উক্ত শেয়ার ফিউচার-এর দর ১৫/০৩/২০২৩ তারিখে ২৪৯০ টাকা। আপনি ফিউচার কিনে নিলেন বা লং পজিশন নিয়ে কন্ট্রাক্ট ক্লোজ করলেন এবং পাঁচ টাকা লাভ করলেন। এ ধরনের ফিউচার কন্ট্রাক্ট-এ শেয়ার ডেলিভারির কোনও প্রশ্ন নেই, যদি মেয়াদ শেষের আগে পজিশন ক্লোজ করা হয়। বিক্রয় আর কেনার দামের তফাত বিক্রেতা পায় (লোকসান হলে-দেয়) বর্তমান শেয়ার দর অতিরিক্ত বেশি হয়ে গেলে শেয়ার ট্রেডার, যাঁদের কাজ হল mispriced শেয়ার খুঁজে বের করা (পোশাকি নাম arbitrageur), ফিউচার মার্কেটে ক্রমাগত শর্ট পজিশন নিতে থাকে-যা নাকি একটা সময় বর্তমান (স্পট) শেয়ার দর কমিয়ে সঠিক মূল্য নির্ধারণে সাহায্য করে। প্রখ্যাত ফিনান্স পণ্ডিত জেনসেন বলেছিলেন, কর্পোরেট গভর্নেন্সের অন্তিম উপমা হচ্ছে, যখন শেয়ারের দাম এতটাই বাড়ে যা কোম্পানির অর্থনেতিক বাস্তবতার প্রতিফলন ঘটায় না, এবং ম্যানেজমেন্ট বিনিয়োগকারীকে শর্ট সেলের পরামর্শ দেয় শেয়ারের বাস্তব মূল্য নির্ধারণের জন্য।

লেখক ফিনান্সের অধ্যাপক

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement