একটু পরিসংখ্যান দিলে আমানতকারীরা (এবং নতুন আগ্রহীরাও) বুঝতে পারবেন এই বাজার ঠিক কতখানি বিস্তৃত। জানুয়ারি ২০২৩-এর একটি তথ্য অনুযায়ী, ব্যাংক ডিপোজিট ছিল ১৮৬ লক্ষ কোটি টাকা। বলা বাহুল্য, ব্যাংক ছাড়া নানা ধরনের কর্পোরেট সংস্থা ফিক্সড ডিপোজিট প্রকল্প চালান আজ। আলোচনায় সর্বাণী সাধু দাস, ব্রিশাঙ্ক ফিনান্সিয়াল সার্ভিসেসের কো-ফাউন্ডার। তাঁর কলমেই এবারের এই বিশেষ লেখা।
‘সঞ্চয়’-এর উদে্যাগ দেখে ভাল লাগল। হ্যাঁ, ফিক্সড ডিপোজিট নিয়ে নতুনভাবে আগ্রহ তৈরি হয়েছে। ইদানীং রেট অফ ইন্টারেস্ট বেশি হওয়ায় অনেকেই ডিপোজিটে লগ্নির বিষয়ে ভাবনা-চিন্তা করছেন।
দেখুন, ডিপোজিট নিয়ে যখন আলোচনা করবেন, দুটি প্রসঙ্গ এড়াতে পারবেন না। এক, সুদের হার এখানে আগে থেকে জানা। দুই, টার্ম বা টেনিউর, সেটাও জানা থাকে। কাজেই, এই দুই শর্ত যখন একত্রিত হয়, বিশ্বাসযোগ্যতা স্বাভাবিকভাবেই বেড়ে যায়। ‘ভেরিয়েবল রিটার্ন’ দেয় এমন প্রোডাক্ট তো কত রকম আছে, বিনিয়োগের দুনিয়ায় তো বিকল্পের অভাব নেই-তবুও ডিপোজিটের এক সাবেকি আবেদন থেকে গেছে আজও। ভারতীয় লগ্নির বাজারে তো ফিক্সড-ইনকামের চাহিদা সেই কোন কাল থেকেই রয়েছে।
একটু পরিসংখ্যান দিলে আমানতকারীরা (এবং নতুন আগ্রহীরাও) বুঝতে পারবেন এই বাজার ঠিক কতখানি বিস্তৃত। জানুয়ারি ২০২৩-এর একটি তথ্য অনুযায়ী, ব্যাংক ডিপোজিট ছিল ১৮৬ লক্ষ কোটি টাকা। বলা বাহুল্য, ব্যাংক ছাড়া নানা ধরনের কর্পোরেট সংস্থা ফিক্সড ডিপোজিট প্রকল্প চালান আজ। তাদের মধ্যে NBFC-এর (নন-ব্যাংকিং ফিনান্সিয়াল সার্ভিসেস কোম্পানিগুলির) ভূমিকা বেশ উল্লেখযোগ্য। সব মিলিয়ে মোট হাউসহোল্ড সেভিংসের একটি বিরাট অংশ আজ ডিপোজিটে লগ্নি করা রয়েছে। তার তুলনায় লাইফ ইনসিওরেন্স, কারেন্সি বা মিউচুয়াল ফান্ডের ভূমিকা বা অংশীদারি অনেকটাই কম।
সাম্প্রতিক এক সমীক্ষার ফল জানাচ্ছে ভারতীয়রা অনেকেই বেশ ‘risk-averse’-মানে, ঝুঁকি এড়িয়ে চলতে পছন্দ করেন। তাঁরা চান বাজারের অনিশ্চয়তা, বা ভোলাটিলিটি থেকে মুক্তি। একাংশ চান, সম্ভাব্য এমার্জেন্সির সময় ডিপোজিট ভাঙিয়ে তাৎক্ষণিক প্রয়োজন মেটাতে। আবার অন্য অংশ এক থেকে তিন বছরের টাকা ফিক্সড ডিপোজিট প্রকল্পে রাখতেই পছন্দ করেন। সব কিছু খুঁটিয়ে দেখলে, ডিপোজিট মার্কেটের জন্য এই বিষয়গুলি খুব ইতিবাচক।
এছাড়াও দেখুন, ডিপোজিট মূলত সোজাসাপ্টা, কোনও মার্কেট-নির্ভর জটিলতা হওয়ার সুযোগই নেই সেখানে। নিজের পোর্টফোলিও ডিপোজিট ধরে রাখতে ‘আমার বিনিয়োগের অন্তত একটি অংশ যেন থাকে সুরক্ষিত’ -এই ভাবনা যাঁদের বেশি, তাঁদের অনেকেই চান এই কারণে। ‘শর্ট টার্ম গোলস’ যাতে পূরণ করা যায়, তাও নিশ্চিত করতে চান তাঁরা। তাই ডিপোজিট প্রকল্পে লগ্নি করার সুবিধা খোঁজেন তাঁরা।
[আরও পড়ুন: দেশের সবচেয়ে বড় ৩০টি শেয়ারে লগ্নি করতে ইচ্ছুক? জেনে নিন ফান্ডা]
এই প্রসঙ্গে কয়েকটি বৈশিষ্ঠ্যের কথা তুলে ধরছি। আশা করি, আপনিও এর সঙ্গে সহমত হবেন।
# লিকুইডিটি নিয়ে চিন্তা নেই, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সামান্য শর্ত মানলেই ‘উইথড্রয়াল’ করা যায় বেশ তাড়াতাড়ি।
# কোনও ফ্রিকোয়েন্সিতে সুদ হাতে পেতে চান?
মান্থলি যেমন সম্ভব, তেমনই সম্ভব বছরে একবার সুদ পাওয়া। অর্থাৎ, আমার বক্তব্য-আপনি প্রয়োজন বুঝে ফ্রিকোয়েন্সির বিষয়টি ঠিক করে নিতে পারবেন। সেই স্বাধীনতা আপনার।
# আমানত প্রকল্পে সাধারণভাবে সুদের হার বেড়েছে, তাই ঋণপত্র-ভিত্তিক ডেট ফান্ডের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারছে এগুলি। মনে রাখুন, লং টার্ম ক্যাপিটাল গেনসের নিয়মে পরিবর্তন এসেছে, ট্যাক্স-পেয়ারদের জন্য ডিপোজিট এক আকর্ষণীয় প্রস্তাব।
# তবুও বলি, এখন কর্পোরেট বা ফিনান্স কোম্পানির প্রকল্প যখন চোখে পড়বে, চট করে দেখে নেবেন সেটির ক্রেডিট রেটিং। সর্বোচ্চ রেটিং (অর্থাৎ ট্রিপল-এ) থাকলে তো নিশ্চয়তা অনেকটাই বেশি।
পরিশেষে বলতে হয়, যে কোনও আমানতের সার্থকতা সবথেকে ভাল বোঝা যায় সেটির বৈশিষ্টগুলি দেখলে। পোর্টফোলিও রিস্ক কমাতে ডিপোজিটের কৌশলী প্রয়োগ করুন, সুফল পাবেন।