সুকুমার সরকার, ঢাকা: বাংলাকে মাতৃভাষা দাবিতে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের ঢাকায় মিছিল বের করেছিল দামাল ছেলেরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশেই ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের সামনে ওই মিছিলে গুলি চালিয়েছিল দখলদার পাকিস্তানের পুলিশ। সালাম, বরকতসহ বেশ কয়েকজন ছাত্র-জনতা এতে হতাহত হয়েছিলেন। ভাষা শহীদদের নিয়ে কবিতা লিখে খ্যাতি কুড়িয়েছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবদুল গফ্ফর চৌধুরী। ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারী ‘ আজও প্রতিটি বাঙালীর মন-মননে অমর কবিতা হয়ে আছে।
এবার দুই বাংলায় বহুল আলোচিত চলচ্চিত্র অভিনেত্রী পরীমণিকে (Pori Moni) নিয়ে কবিতা লিখলেন ভাষা শহীদের কবি গফ্ফর চৌধুরী। অর্থাৎ ঢাকাই সিনেমার হালের বহুল আলোচিত নায়িকা পরীমণি মাদক মামলায় গ্রেপ্তার হওয়ার পর যে ক’জন তার পাশে দাঁড়িয়েছিলেন, তার মধ্যে বরেণ্য লেখক, সাংবাদিক ও কলামিস্ট আবদুল গফ্ফর চৌধুরী একজন। পরীমণির মুক্তি জন্য সরব ছিলেন তিনি। ঢাকার শাহবাগ, প্রেসক্লাবসহ যেখানে পরীমণির জন্য মানববন্ধন হয়েছে, সেখানেই লন্ডন থেকে তিনি মোবাইল ফোনে বক্তব্য দিয়েছেন। পরীর মুক্তির দাবি জানিয়েছেন। শুধু তাই নয়, পরীমনির মুক্তি চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদনও করেন গফ্ফর চৌধুরী।
[আরও পড়ুন: জিতের সঙ্গে বড়পর্দায় জুটি বাঁঁধতে মুখিয়ে রয়েছেন, একান্ত সাক্ষাৎকারে জানালেন অঙ্কুশ]
আবদুল গফ্ফর চৌধুরী এবার পরীমণিকে নিয়ে কবিতা লিখেছেন। একটি জাতীয় দৈনিকের সাহিত্য সাময়িকীতে শুক্রবার সেই কবিতাটি প্রকাশিত হয়েছে। কবিতার শিরোনাম- ‘পরীমণি, তুমি আমার জন্য কেঁদো না’। পরীমণির পৈত্রিক ভিটা যশোরের নড়াইলে হলেও শিক্ষা ও বড় হয়েছেন দাদার বাড়ি বরিশালে। আবদুল গফ্ফর চৌধুরীর বাড়িও বরিশালে। পরীমণিকে নিয়ে আবদুল গফ্ফর চৌধুরীর কবিতাটি পাঠকের জন্য হুবহু তুলে ধরা হল।
পরীমনি, তুমি আমার জন্য কেঁদো না
তুমি আমার জন্য কেঁদেছ, শরতের আকাশের
চুপিসারি কান্না,
যা শিশির হয়ে টুপটাপ ঝরে।
আমি রোগশয্যায় শুয়ে শুনেছি সেই রোদন
তুমি কেন আমার জন্য কাঁদলে
আমি টেলিফোনে শুনেছি তোমার সেই কান্না
নায়াগ্রায় দাঁড়িয়ে যে জলপ্রপাতের
শব্দ শুনেছিলাম
তোমার কান্না সেই শব্দের সংগীতকে স্তব্ধ করেছে।
এখানে বড় ঠান্ডা, সেই ঠান্ডায় তোমার কান্না
উষ্ণ জলপ্রপাতের কাজ করেছে
আমার হৃদয়ে।
পরীমনি, তুমি আমার জন্য কেন কাঁদলে
কেন হৃদয় দিয়ে হৃদয় বাঁধলে
ওরা তোমাকে বলে চরিত্রহীনা, আকাশনীলা পাখি
আমি জানি, তুমি শরতের শিশির ধোয়া
শিউলির মতো সুচরিতা।
ছবি দেখেছি, জেল থেকে বেরিয়ে আসছো—
দুই হাত ঊর্ধ্বমুখী জোয়ান অব আর্কের মতো
ওরা তোমাকে পুড়িয়ে মারতে চেয়েছিল
তুমি স্ফিংসের মতো জেগে উঠেছ
দুই ডানায় আগুনের ফুল।
পরীমনি, ওরা তোমাকে দ্রৌপদী বানাতে চেয়েছিল
তুমি হয়ে গেলে দয়মন্তী।
তোমার কান্না আমার মগ্নচৈতন্যকে স্পর্শ করেছে
তোমার চোখের কান্নায় দেখেছি আমার মায়ের—
চোখের জল।
তুমি তেরো নদী সাত সমুদ্র পেরিয়ে
আমাকে সিক্ত করলে মায়ের সেই চোখের জলে।
তোমার কান্না আমার বেদনাকে
ছুঁয়ে গেছে।
তুমি স্কাইলার্কের গান শুনেছ
বিলাতের বসন্তের বাগানে?
সুন্দরী পাখিটির কণ্ঠে কান্নাই গান
তুমি ওই স্কাইলার্কের মতো
আমাকে তোমার কান্না শোনালে
কান্না নয় গান, চোখের জল নয়
হৃদয়ের প্লাবন।
ভারত মহাসাগর পেরিয়েছে
তোমার কান্না, বঙ্গোপসাগরেও
বনানীর জলপাই রঙের বাড়িটা ছেড়ে
চাঁদপুরের পুরোনো বন্দরটা পেরিয়ে
মেঘনার জলকে টেমসের সঙ্গে মিশিয়ে
কার্তিকের চাঁদ হয়ে ঝুলে আছে
আমার রোগশয্যার বারান্দায়।
পরীমনি, তুমি আমার জন্য কেঁদো না
মায়ের মতো ভালোবাসার
দুবাহু বাড়ায়ে দিয়ো না
ভালোবাসা বড় দুর্লভ সৌরভ
সুগন্ধির দোকানে কখনো পাবে না।
মাদক দ্রব্য আইনে করা মামলায় পরীমণি-সহ তিনজনকে গত মঙ্গলবার অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র পেশ করে সিআইডি। সিআইডির পরিদর্শক কাজী মোস্তাফা কামাল আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। সেখানে অভিযুক্ত করা হয়েছে পরীমণির ম্যানেজার আশরাফুল ইসলাম দীপু এবং কবির হোসেনকেও। গত ৪ আগস্ট ঢাকার অভিজাত পল্লি বনানীর বাড়িতে অভিযান চালিয়ে মাদকদ্রব্য-সহ পরীমণিকে গ্রেপ্তার করেছিল দেশের এলিট ফোর্স র্যাব। তার বাড়ি থেকে বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য বাজেয়াপ্ত করে র্যাব। অভিনেত্রীর বাড়ি থেকে গাড়ি, ল্যাপটপ, মোবাইল-সহ ১৬টি জিনিস বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল।
[আরও পড়ুন: Aryan Khan Drug Case: ফের আরিয়ানের জামিনের আবেদন খারিজ, জেলেই থাকতে হবে শাহরুখপুত্রকে!]