স্টাফ রিপোর্টার: এলিট, প্যারাডাইস, মালঞ্চ, পদ্মশ্রী। চারিদিকে যখন বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপাখ্যান। নতুন জামা গায়ে দিল মধ্য কলকাতার সুপ্রাচীন প্রেক্ষাগৃহ প্রাচী (Prachi Cinema)। লাল কার্পেটে মোড়া সিঁড়ির পাদানি, প্রেক্ষাগৃহের অন্দরে নতুন নরম আলো, ঝকঝকে মোড়কে ঢাকা বসার আসন। পুরনো সেই প্রাচীকে চেনা দায়।
লকডাউনে দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল সিনেমা প্রদর্শন। গুঞ্জন ছিল বাতাসে। মেট্রো, গ্লোবের পর প্রাচীও কি ‘বিক্রি’ হয়ে যাবে? কর্ণধার বিদিশা বসু জানিয়ে দিলেন, বিক্রি নয়। দীর্ঘদিন বন্ধ রাখা হয়েছিল মেকওভারের জন্য। প্রাচী এখন আরও বেশি সিনেমাবান্ধব। চলচ্চিত্রপ্রেমীদের আরও পছন্দের।
শিয়ালদহ স্টেশনের কাছে আইকনিক এই প্রেক্ষাগৃহ নতুন জীবন লাভে আপ্লুত চলচ্চিত্র জগতের সঙ্গে যুক্ত মানুষও। মঙ্গলবার সকালেই প্রাচী সিনেমার নতুন চেহারা নিজের ফেসবুকের দেওয়ালে শেয়ার করেছেন পরিচালক শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় (Shiboprosad mukherjee)। নবকলেবরের প্রাচীর ছবি দিয়ে পরিচালক লিখেছেন, ‘নতুন রূপে প্রাচী সিনেমা। সবাইকে আমন্ত্রণ জানাই।’ চলচ্চিত্র পরিচালক অরিন্দম শীলও অত্যন্ত খুশি এই খবরে। তিনি জানিয়েছেন, “দারুণ ব্যাপার। বাংলা সিনেমার ভাল হোক।” পরিচালক শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের ছবির তলায় নিজের খুশি ব্যক্ত করেছেন কবি সম্রাজ্ঞী বন্দ্যোপাধ্যায়ও। লিখেছেন, দারুণ একটা খবর।
[আরও পড়ুন: Cyber Crime: পুলিশকর্তার সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট Clone করে জালিয়াতি, রাজস্থান থেকে ধৃত যুবক]
৭৩ বছরের পুরনো এই সিনেমা হলের পরতে পরতে জড়িয়ে একাধিক ইতিহাস। শোনা যায় বাংলা চলচ্চিত্রের চিরকালীন জুটি উত্তম-সুচিত্রার অত্যন্ত পছন্দের প্রেক্ষাগৃহ ছিল প্রাচী। খোদ উত্তম কুমারের একান্ত অনুরোধেই প্রাচী সিনেমা হলের তৎকালীন কর্ণধার প্রথম হিন্দি সিনেমার প্রদর্শন করেছিলেন এই হলে। ১৯৬৭ সালে উত্তম কুমার অভিনীত প্রথম হিন্দি ছবি ছোটিসি মুলাকাত প্রদর্শিত হয়েছিল প্রাচীতে। অস্কারজয়ী সত্যজিৎ রায়ও অত্যন্ত পছন্দ করতেন এই সিনেমা হল।
বর্তমান কর্ণধার বিদিশা বসু জানিয়েছেন, এত বিখ্যাত মানুষের স্মৃতি জড়িয়ে এই প্রেক্ষাগৃহে। তা কি দুম করে বন্ধ করা যায়? শত প্রতিকূলতায়ও তাই বন্ধ হবে না ‘প্রাচী’। মাল্টিপ্লেক্সের দাপটের মাঝেও স্বমহিমায় ফিরে এল মধ্য কলকাতার ঐতিহ্যবাহী সিনেমা হল। প্রসঙ্গত ঘূর্ণিঝড় আমফানে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল প্রাচী ৷ তার উপর অতিমারী তো ছিলই ৷ কোভিডের দ্বিতীয় তরঙ্গের লকডাউন যখন চলছিল, তখনই প্রাচী প্রেক্ষাগৃহ সংস্কারের কাজে হাত দিয়েছিলেন কর্ণধার বিদিশা বসু। বিদিশার ঠাকুরদা জিতেন্দ্র বসুর হাত ধরে পথ চলা শুরু করেছিল এই প্রেক্ষাগৃহ। নতুন প্রাচীর সিঁড়িতে লাল গালিচা ৷ আসনে আরামদায়ক গদি ৷ ঝকঝকে নতুন স্ক্রিন।
এত দিন প্রাচীতে বাংলায় ছাপানো টিকিট ব্যবহার করা হত। এ বার থেকে যাঁরা অনলাইনে টিকিট কাটবেন ,তাঁরা মোবাইলের টিকিট দেখিয়েই হলে বসে ছবি দেখতে পারবেন।