সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: পরিবার পরিজনকে ছেড়ে রাস্তায় দিন কাটছে তাঁদের। পুজোর দিনগুলোও কেটেছে ধর্মতলা চত্বরের ধরনা মঞ্চে। বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীদের একটাই দাবি, নিয়োগপত্র হাতে না পেলে ধরনামঞ্চ থেকে সরব না। তাই রবিবার কোজগরী লক্ষ্মীপুজোর দিনে সেই ধরনামঞ্চে দেবী লক্ষ্মীর আরাধনা করলেন আন্দোলনকারীরা। কোথাও চাকরিপ্রার্থীকে জীবন্ত লক্ষ্মী সাজিয়ে দেবীর আরাধনা করলেন তাঁরা। কোথাও আবার সাদা কাগজ রেখে চলল পুজো। কেউ আবার দেবীর মৃন্ময়ী মূর্তি হাতে নিয়ে দিলেন ধরনা। সবমিলিয়ে দুর্গাপুজোর পর কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোতেও হৃদয় বিদারক দৃশ্য চোখে পড়ল ধর্মতলার ধরনা মঞ্চ চত্বরে।
ধরনার ৫৭৪ দিন কেটে গিয়েছে। আদালত রায় দিয়েছে। তবু হাতে আসেনি চাকরির নিয়োগপত্র। কেউ ৫ বছর তো কেউ তিন বছর ধরে চাকরি থেকে বঞ্চিত। নিয়োগপত্রের দাবিতে রোদ-ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে আন্দোলন করছেন যোগ্য চাকরিপ্রার্থীরা। তাঁদের মধ্যে কেউ বা প্রাইমারি টেট উত্তীর্ণ কারোর নাম রয়েছে নবম-দশম-একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষক নিয়োগের তালিকায়। বঞ্চিত এসএসসির গ্রুপ সি ও গ্রুপ ডির চাকরিপ্রার্থীরাও। কেউ গান্ধীমূর্তির পাদদেশে, তো কেউ মাতঙ্গিনী হাজরার মূর্তির পাদদেশে আন্দোলন করছেন। কোজাগরী লক্ষ্মী পুজোর দিনও ধরনা মঞ্চ ছাড়েননি তাঁরা। বরং এদিন ধরনামঞ্চগুলিতে চোখে পড়ল অন্য ছবি।
[আরও পড়ুন: প্রথমবার বাবা হলেন রাফায়েল নাদাল, ফুটফুটে সন্তানের জন্ম দিলেন স্ত্রী মেরি]
৪ ধরনামঞ্চে চাররকমভাবে আরাধনা হল ধনদাত্রীদেবীর। মাতঙ্গিনী হাজরার মূর্তির নিচে ধরনা দিচ্ছেন ২০১৪ সালের প্রাইমারি টেট উত্তীর্ণ নট ইনক্লুডেড চাকরিপ্রার্থীরা। কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোয় সেই ধরনামঞ্চেই লক্ষ্মীর আরাধনা করলেন তাঁরা। এদিন এক আন্দোলনকারীকে লক্ষ্মীবেশে সাজানো হয়। হাতে ছিল পদ্মফুল ও ধানের ছড়া। সমস্ত নিয়মনীতি মেনেই তাঁকে পুজো করা হল এদিন। হাতের প্ল্যাকার্ডেও ছিল অন্যরকমের স্লোগান। কোথাও লেখা, ‘এসো মা লক্ষ্মী বসো আমাদের ধরনামঞ্চে’। কোথাও আবার, মা লক্ষ্মীর কাছে নিয়োগপত্রে দাবি জানিয়ে লেখা হয়েছে প্ল্যাকার্ড। চাকরিপ্রার্থীরা সাফ জানানলেন, এবার নিয়োগপত্র না পেলে আমরণ অনশন নয়তো স্বেচ্ছামৃত্যুর আবেদনের পথে হাঁটবেন তাঁরা।
শুধু ২০১৪ সালের প্রাইমারি টেট উত্তীর্ণরাই নয়, ধনদেবীর আরাধনা করলেন এসএসসির গ্রুপ ডির বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীরাও। তবে তাঁদের মঞ্চে কোনও প্রতিমা ছিল না। সাদা কাগজের সামনে গাদা ফুল-মালা রেখে হল পুজো। বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীরা জানালেন, “আমাদের চাকরি নেই। তাই ধনসম্পদ চোখে দেখতে পাচ্ছি না। ধনদেবী আমাদের কাছে অদৃশ্য। মূর্তি কেনার টাকা নেই। অগত্যা সাদা কাগজে পুজো।” গ্রুপ সি ও ডি বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীদের ধরনামঞ্চে হয় কবিগানও।
[আরও পড়ুন: প্রথমবার বাবা হলেন রাফায়েল নাদাল, ফুটফুটে সন্তানের জন্ম দিলেন স্ত্রী মেরি]
SLST-র চাকরিপ্রার্থীদের অবস্থা আরও করুণ। এটা তাঁদের দ্বিতীয় কোজাগরী লক্ষ্মীপুজো, যেটা রাস্তায় কাটাচ্ছেন তাঁরা। হাতে একটি ছোট মূর্তি নিয়ে এদিনের ধরনা চালিয়ে যাচ্ছেন চাকরিপ্রার্থীরা। ধরে আসা গলায় এক আন্দোলনকারী জানাচ্ছেন, “এমনটা তো হওয়ার কথা ছিল না। পরিবারকে ছেড়ে দিনের পর দিন কাটাচ্ছি আমরা। এরপরও যদি প্রশাসনের হুঁশ না ফেলে তাহলে মৃত্যুর পথ বেছে নেওয়া ছাড়া উপায় নেই।” দুর্গাপুজোর লক্ষ্মীপুজোও পথের ধারে কাটালেন চাকরিপ্রার্থীরা। এদিনও বদলাল না রোজকার যন্ত্রণার ছবি।