সোমনাথ রায়: হোয়াটসঅ্যাপের সময় বলছে রাত একটা ১১। তাতে কী? সূর্যোদয়ের দেশে ঘুম থেকে উঠে তিনি মেসেজে উত্তর দিতে বসে পড়লেন। তিনি, কাটসুমি ইউসা। ২০১৫ সালের আই লিগ জয়ী মোহনবাগান (Mohun Bagan) টিমের অন্যতম সদস্য। যে টিম বেঙ্গালুরুর বিরুদ্ধে শেষ ম্যাচ ড্র করে চ্যাম্পিয়ন হয়। সেই কাটসুমি (Katsumi Yusa) সংবাদ প্রতিদিনকে যা লিখলেন…
সেটা সম্ভবত মোহনবাগানে আমার তৃতীয় মরশুম। ওএনজিসি থেকে যেদিন সবুজ-মেরুন জার্সি গায়ে তুলেছিলাম, সেদিন থেকে দু’টো কথা শুনতাম। সর্বত্র হারাতে হবে ইস্টবেঙ্গলকে। আর, চ্যাম্পিয়ন হতে হবে আই লিগ।
আজও চোখ বন্ধ করলে ভেসে ওঠে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরেরদিনের কথা। এয়ারপোর্টে যে কিছু একটা হতে চলেছে, খবর ছিল। কিন্তু তা যে এই আকার নেবে, স্বপ্নেও ভাবিনি। এয়ারপোর্ট থেকে ক্লাবে যেতে গোটা দিন লেগে গেছিল। এয়ারপোর্টের কাছেই এক জায়গায় স্টেজ করা ছিল। সংবর্ধনার জন্য। কিন্তু কোথায় কী? আমি, শিল্টন, কোচ আর বাপ্পাদা বোধহয় শুধু কোনওমতে স্টেজে উঠে একটু হাত নেড়েছিলাম। দেখছিলাম যেদিকে নজর যাচ্ছে শুধু সবুজ-মেরুন। কলকাতার সব বাইক যেন সেদিন ওই রাস্তায় ছিল। পাগলের মত জানলা থেকে ঝুলে ছবি তুলছিল গার্সিয়া। ফ্লাইং কিস করছিল দেবজিৎ। সেদিনের অভিজ্ঞতা ভাগ করার মত ক্ষমতা আমার নেই। তবে হ্যাঁ, কীভাবে আমরা চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলাম, সেটা বলতে পারি। সেবার আমাদের ড্রেসিংরুমের বন্ডিংটা ছিল অদ্ভুত। গায়ের রং আর চেহারার আদল বাদ দিলে আমাদের দেখে কেউ বলতে পারত না কে ভারতীয়, কে বিদেশি। যে কোনও সফল টিমের এটাই কিন্তু চাবিকাঠি। কোচ সঞ্জয় সেন ছিলেন বাড়ির বড় দাদার মত। সহকারি কোচ শঙ্করলাল কখনও দাদা, কখনও বন্ধু। তেমনই মালি, সাপোর্ট স্টাফরা। কর্মকর্তাদের কথাও না বললে অন্যায় হবে। সবাই মিলে একটা বিশাল পরিবার ছিলাম আমরা। আর ছিল বিশাল সমর্থককুল।
[আরও পড়ুন: ‘এই চ্যাম্পিয়ন আবার ঘুরে দাঁড়াবে’, পন্থের জন্য আবেগপ্রবণ পোস্ট যুবির]
সেবার শেষ কয়েক রাউন্ড আগে থেকেই হাইপ খুব বেড়ে গিয়েছিল। সবাই বিশ্বাস করতে শুরু করেছিল, এতদিনের খরা কাটিয়ে এবার আমরা চ্যাম্পিয়ন হব। আমরা কিন্তু কখনও তাতে নার্ভাস হইনি। উল্টে আত্মবিশ্বাস আরও বেড়েছে। মনে হত, এই লোকগুলো যারা অফিস, পড়া, পরিবার ফেলে আমাদের জন্য বাঁচে, তাঁদের জন্য এইটুকু করতে হবে।
হয়তো কলকাতা থেকে অনেকদুরে আছি। কিন্তু বিশ্বাস করি, এখনও সমর্থকরা ঠিক ওভাবেই পাগল হয়ে আছে। প্রীতমরা যেন এবারও সেবারের মতই ঝাঁপায়। প্রীতম ওই টিমে ছিল। ওর অভিজ্ঞতা যেন সবার সঙ্গে ভাগ করে নেয়। প্রত্যেকটা বলের জন্য প্রতিপক্ষের উপর এমনভাবে ঝাঁপাক, যেন এটাই ওদের জীবনের শেষ ম্যাচ। আর কী? জিতে ফিরুক মোহনবাগান।