অভিরূপ দাস: আলোচনাতেও গলল না বরফ। কমিশনের জারি করা অ্যাডভাইসরি মানতে নারাজ রাজ্যের বেসরকারি হাসপাতালগুলি। ১৫০ বা তার অতিরিক্ত বেডের হাসপাতালের ক্ষেত্রে রেডিওলজিকাল এবং প্যাথোলজিকাল স্বাস্থ্য পরীক্ষার খরচ বেঁধে দিয়েছিল স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রক কমিশন (State Health Commission)। রাজ্যের বেসরকারি হাসপাতালের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অফ হসপিটাল অফ ইস্টার্ন ইন্ডিয়া (Association of Hospital of Eastern India) বৃহস্পতিবার জানাল, এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে তারা অসম্মত।
কারণ হিসেবে অ্যাসোসিয়েশন অফ হসপিটাল অফ ইস্টার্ন ইন্ডিয়ার সভাপতি রূপক বড়ুয়া জানিয়েছেন, বেসরকারি হাসপাতালে এভাবে রেট বেঁধে দেওয়া যায় না। প্রতিটি বেসরকারি হাসপাতালে আলাদা আলাদা পরিকাঠামো। সপ্তাহের সাত দিন ২৪ ঘন্টাই খোলা থাকে হাসপাতালগুলি। অসংখ্য কর্মচারী কাজ করেন সেখানে। তাদের মাইনে ছাড়াও ৩৬৫ দিন কর্মকাণ্ড চালিয়ে নিয়ে যেতে এই হাসপাতাল চালানোর খরচ বিপুল। রূপক বড়ুয়ার কথায়, ইতিমধ্যেই কোভিড আবহে ক্ষতির মুখে পড়েছে একাধিক হাসপাতাল। তাও সেখানে কর্মী ছাটাই হয়নি। এরপরে কমিশনের বেঁধে দেওয়া রেট মানতে গেলে হাসপাতাল চালানো দুষ্কর।
[আরও পড়ুন: বাংলায় নয়া কর্মসূচি BJP-র, ‘শহিদ সম্মান যাত্রা’য় নিহত কর্মীদের বাড়ি যাবেন মন্ত্রীরা]
প্রসঙ্গত জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহেই রাজ্য স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রক কমিশন অ্যাডভাইসরি জারি করে জানিয়েছিল, ৫টি রেডিওলজিক্যাল এবং ১৫টি প্যাথোলজিকাল টেস্টের ক্ষেত্রে কমিশনের বেঁধে দেওয়া রেটই নিতে হবে দেড়শো বেড অথবা তার বেশি ক্ষমতা সম্পন্ন হাসপাতালগুলিকে। সেই টেস্টের তালিকায় ছিল ফেরিটিনিন, ডি ডাইমার, প্রোক্যালসিটোনিন, সিবিসি, সিআরপি, ইলেকট্রোলাইটের মতো গুরুত্বপূর্ণ টেস্ট। কমিশনের জারি হওয়া সেই অ্যাডভাইসরি নিয়ে আলোচনা করতে বৃহস্পতিবার নানান হাসপাতালের প্রতিনিধিরা একত্রে আলোচনায় বসেন। স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রক কমিশনের পক্ষ থেকে চেয়ারম্যান প্রাক্তন বিচারপতি অসীমকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ও ছিলেন সেই বৈঠকে। আলোচনায় অ্যাপোলো হাসপাতালের পক্ষ থেকে রানা দাশগুপ্ত, উডল্যান্ড হাসপাতালের সিইও ডা. রূপালি বসু, বেলভিউ হাসপাতালের সিইও প্রদীপ ট্যান্ডন, মেডিকা সুপারস্পেশালিটি হাসপাতালের চেয়ারম্যান অলোক রায়ও ছিলেন। বৈঠক শেষে কমিশন চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, দু’তিনটি হাসপাতালের আপত্তি রয়েছে। সিংহভাগ হাসপাতালই কমিশনের অ্যাডভাইসরি মেনে নিয়েছে। অ্যাডভাইসরি প্রত্যাহার করার কোনও প্রশ্নই নেই।
কমিশনের ব্যাখ্যা, হাসপাতাল বাঁচলে তবেই সাধারণ মানুষ বাঁচবে। স্বাস্থ্য কমিশন যে টাকা বেঁধে দিয়েছে তা মারাত্মক কিছু নয়। কোভিড আবহে দেখা গিয়েছে অনেক মানুষ বিল দিতে না পেরে পালিয়ে এসেছেন। কমিশন চেয়ারম্যানের বক্তব্য, কোনও মানুষই চায় না বিল না দিয়ে চলে আসতে। কিন্তু কপর্দক শূন্য হয়ে পড়লে কিছু করার থাকে না। সাধারণ মানুষ বিল পরিশোধ করতে পারলে তবেই তো হাসপাতাল চলবে। সামান্য এই বিলের টাকা নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে কর্তৃপক্ষ দেখুক কীভাবে মানুষকে আরও উন্নততর পরিষেবা দেওয়া যায়। যদিও বরফ গলেনি এতে। নিজেদের মনোভাবে অনড় অ্যাসোসিয়েশন অফ হসপিটাল অফ ইস্টার্ন ইন্ডিয়া।