বুদ্ধদেব সেনগুপ্ত, নয়াদিল্লি: আপাতত দিল্লিতে রয়েছেন বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁকে নিয়ে উড়ে আসা বাংলাদেশ সেনার বিমানটি ফিরে গিয়েছে ঢাকায়। নিরাপত্তার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে রাজধানীর একটি গোপন ডেরায় রাখা হয়েছে হাসিনাকে। আপাতত তাঁকে কিছু দিন সময় দিয়েছে ভারত। দিল্লির সর্বদল বৈঠকে এমনটাই জানিয়েছেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শংকর। তবে মঙ্গলবার তাঁর সঙ্গে দেখা করতে আসেন দিল্লি নিবাসী মেয়ে সাইমা ওয়াজেদ পুতুল।
জানা গিয়েছে, এদিন সকালেই দেশবাসী ও আন্দোলনরত ছাত্রদের জন্য একটি লিখিত বার্তা দিয়েছেন বাংলাদেশের সদ্যপ্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী হাসিনা। বার্তায় কোন পরিস্থিতিতে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন সেই কথা জানিয়েছেন তিনি। তবে হাসিনার নামে আসা লিখিত বার্তাটির সত্যতা যাচাই করেনি সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল। ঠিক কী বলেছেন বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী?
অসমর্থিত সূত্রে পাওয়া খবর, হাসিনা বার্তায় লিখেছেন, 'আমি পদত্যাগ করেছি, শুধুমাত্র লাশের মিছিল যেন না দেখতে হয় তার জন্য। তোমাদের (ছাত্রদের) লাশের উপর দিয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার চেষ্টা হয়েছিল। আমি হতে দিইনি, ক্ষমতা দিয়ে এসেছি। ক্ষমতায় আমি থাকতে পারতাম যদি সেন্ট মার্টিন আর বঙ্গোপসাগর আমেরিকার কাছে ছেড়ে দিতাম। অনুরোধ রইল তোমরা ব্যবহৃত হয় না। আমি বলে এসেছি আমার সোনার সন্তানদের যারা লাশ করে ঘরে ফিরিয়েছে তাদের যেন বিচার হয়।'
[আরও পড়ুন: সেনাশাসন নয়, ‘দেশ গড়তে’ ইউনুসকেই চাইছে বাংলাদেশের আন্দোলনকারীরা]
ছাত্রদের পাশাপাশি আওয়ামি লিগের নেতা কর্মীদের উদ্দেশে হাসিনা লেখেন, 'আমার কর্মীরা যাঁরা আছেন, কেউ মনোবল হারাবেন না। আওয়ামি লিগ বার বার উঠে দাঁড়িয়েছে। আপনারই দলকে দাঁড় করিয়েছেন। তাই আশাহত হবেন না। আমি শীঘ্রই ফিরব। ইনশাআল্লাহ। পরাজয় আমার হয়েছে কিন্তু জয়টা আমার বাংলাদেশের মানুষের হয়েছে। যে মানুষের জন্য আমার বাবা, আমার পরিবার জীবন দিয়েছে। খবর পেয়েছি ইতিমধ্যে অনেক নেতা কর্মীকে হত্যা করার হয়েছে ও বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।'
তবে ভারত ছাড়ার পর কোন দেশে পাকাপাকিভাবে আশ্রয় নেবেন হাসিনা ও তাঁর বোন রেহানা এখনও স্পষ্ট নয়। এই বিষয়ে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে দৌত্য চালিয়ে যাচ্ছে বিদেশ মন্ত্রক। বিষয়টি যেহেতু খুবই গোপনীয়তার মধ্যে রয়েছে, তাই হাসিনার বর্তমান আশ্রয়স্থল ও গতিবিধি সম্পর্কে কোনও খবর পাওয়া যাচ্ছে না। ফিনল্যান্ড বা জার্মানিতেও তিনি যেতে পারেন বলে সূত্রের খবর। এইসব দেশের সঙ্গে কথাবার্তা চালাচ্ছে ভারতের বিদেশ মন্ত্রক।
উল্লেখ্য, হাসিনা ও তাঁর বোন রেহানা এনিয়ে দ্বিতীয়বার ভারতের শরণাপন্ন হলেন। ১৯৭৫ সালে তাঁদের বাবা মুজিবুর রহমান হত্যার সময় তাঁরা জার্মানির বার্লিন থেকে গোপনে এসে ভারতে আশ্রয় নিয়েছিলেন। পান্ধারা রোডে ভারতীয় গোয়েন্দা বাহিনীর সেফ হাউসে তৎকালীন ইন্দিরা গান্ধী সরকারের অতিথি হয়ে প্রায় বছর ছয়েক ছিলেন তাঁরা। এদিকে, হাসিনা অন্য কোনও দেশে যাবেন নাকি ভারতেই থাকবেন, তা নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছে বিদেশমন্ত্রক। হাসিনা দিল্লির কাছে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছেন কিনা বা তাতে কেন্দ্র সম্মতি দিয়েছে কিনা তা এখনও জানা যায়নি।