সুব্রত বিশ্বাস: মুখ দেখলেই বুঝে যান কে টিকিট কেটেছে। আর কেই বা ফাঁক তালে কেটে পড়ছে। অনেকটা স্কুলের ডাকসাইটে শিক্ষকের মতো। এমন টিকিট পরীক্ষককেই ফের নিয়োগ করতে চাইছে রেলমন্ত্রক। কারণ তাদের হাতেই রেলের ভাঁড়ারে রাজস্ব ফুলে ফেঁপে ওঠে। তাই অবসরপ্রাপ্তদেরই ফের টিকিট পরীক্ষক হিসেবে নিয়োগ করতে চাইছে রেল। যদিও রেলের এই নীতির প্রতিবাদ করেছে রেলের কর্মী সংগঠনগুলি।
এই ধরনের অবসরপ্রাপ্তরা ‘পুরনো চাল ভাতে বাড়ার মতোই’ বলে মনে করেছেন মধ্য রেলের জিএম। গত ১৬ নভেম্বর জিএম নরেশ লোনানি রেলবোর্ডকে লিখিতভাবে জানিয়েছে, গত অর্থ বর্ষে তাদের রেল টিকিট চেকিং থেকে সর্বাধিক আয় করেছে ৩০৩.৯১ কোটি টাকা। যা আগের বছরের তুলনায় ৪১.৭৪ শতাংশ বেশি। ওই রেলের ২৩ জন টিকিট পরীক্ষক প্রত্যেকে কোটি টাকার বেশি আয় দিয়েছে চেকিং থেকে।
[আরও পড়ুন: পাচারের সময় মধ্য কলকাতা থেকে উদ্ধার হাওয়ালার ৭৯ লক্ষ টাকা! গ্রেপ্তার দুই]
এই তথ্যের পাশাপাশি জিএম জানিয়েছেন, ওই রেলে ৬৮৮ টি টিকিট পরীক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। যা অবসর প্রাপ্তদের পুনরায় নিয়োগ করে পূরণ করা হোক। পাশাপাশি একটি গুরুত্বপূর্ণ চিঠির উল্লেখ করেন তিনি। মহারাষ্ট্রের ডিজিপির দেওয়া চিঠির বয়ান উল্লেখ করে জানান, রিপোর্টে ডিজিপি জানিয়েছেন, বিনা টিকিটে ধরা পড়াদের ৮০-৯০ শতাংশ অপরাধী। তারা বিভিন্ন অপরাধ করতে স্টেশন বা ট্রেনে চড়ে। চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, মহিলাদের শ্লীলতাহানির উদ্দেশ্যে বলে দেখা গিয়েছে। জিএম দাবি করেছেন, রেলে অপরাধ কমাতে রেলের টিকিট চেকিং বাড়ানোর দরকার। নতুনভাবে নিয়োগ করা হলে সেই সব কর্মীরা ট্রেনের ডিউটিতে চলে যাবে। সেক্ষেত্রে অবসরপ্রাপ্তদের নেওয়া হলে, তাঁদের দিয়ে স্টেশনে টিকিট চেকিং করানো যাবে। আর এখন যাঁরা স্টেশনে কর্তব্যরত, তাঁদের ট্রেনে পাঠানো যাবে।
পুরনোদের নিয়োগের ক্ষেত্রে তিনি মতও দিয়েছেন। রেকর্ড ঘেঁটে দেখতে হবে, কাজের মান ভালো, ঘুষ খাওয়া থেকে অন্য ধরনের কোনও অভিযোগ নেই, তাঁদের রি এনগেজমেন্ট করা হোক। নর্দান রেলের জিএমের এই চিঠিকে গুরুত্ব দিয়ে বোর্ডে একাধিক আলোচনা হয় বলে জানা গিয়েছে। অবসরপ্রাপ্তদের রি এনগেজমেন্ট করার নিয়ম থাকলেও তা বন্ধ করে দিয়েছিল রেলবোর্ড। এই ধরনের কর্মীদের অনেকেই উপযুক্ত মানের সততা দেখাতে পারেননি। পাশাপাশি পুরনোদের নিয়োগের বিরোধীতা করেছে কর্মী সংগঠনগুলি। পূর্ব রেলের মেনস ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক অমিত ঘোষ প্রতিবাদ করে বলেন,” খরচ করে পুরোনো ঘোড়া পুষে লাভ কী? বেকাররা চাকরি থেকে বঞ্চিত হবে। তীব্র প্রতিবাদ হচ্ছে। আরও বাড়ানো হবে এই প্রতিবাদ।” কিন্তু অবসরপ্রপ্তদের নিয়োগের পদ্ধতি ফের চালুর জন্য অবেদন করেন সেন্ট্রাল রেলের জিএম।