shono
Advertisement

Breaking News

ক্ষোভে ফুঁসছে শ্রীলঙ্কা, ‘চিনপন্থী’রাজাপক্ষেদের বাড়ি জ্বালিয়ে দিল উন্মত্ত জনতা

শাসকদলের বহু নেতা-মন্ত্রীর বাড়িতেও হামলা।
Posted: 08:30 AM May 10, 2022Updated: 08:36 AM May 10, 2022

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মুখে ক্ষোভে ফুঁসছে শ্রীলঙ্কার (Sri Lanka) জনতা। খাবার, ওষুধ ও জ্বালানির চরম অভাব দেখা দিয়েছে দেশজুড়ে। এহেন দুর্দিনের ‘চিনপন্থী’ প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া ও প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপক্ষের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিল উন্মত্ত জনতা। পালটা বাড়ির ভেতর থকে গুলি ছোঁড়া হয় বলে অভিযোগ।   

Advertisement

[আরও পড়ুন: অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মুখে ইস্তফা দিলেন শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপক্ষে]

গতকাল প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন মাহিন্দা রাজাপক্ষে। তবুও রাগ পড়ছে না আমজনতার। দেশজুড়ে কিছুতেই থামছে না বিক্ষোভ মিছিল। এহেন ডামাডোলে সোমবার বন্দর শহর হামবানটোটায় প্রভাবশালী রাজাপক্ষেদের পৈতৃক বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা। শুধু তাই নয়, দেশের শাসকদল ‘শ্রীলঙ্কা পদুজানা পেরামুনা’র নেতা তথা প্রাক্তন মন্ত্রী কেহেলিয়া রামবুকওয়েল্লার ক্যান্ডির বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। হামলা হয়েছে শাসকদলের সাংসদ প্রসন্ন রণতুঙ্গা, প্রাক্তন স্বাস্থ্যমন্ত্রী চান্না জয়াসুমন, অরুন্ডিকা ফরনান্দ-সহ বেশ কয়েকজনের বাড়িতে। সূত্রের খবর, গতকাল রাজধানী কলম্বোয় শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদীদের উপর চড়াও হয় শাসকদলের সমর্থকরা। তারপরই হামলা শুরু হয় শাসকদলের নেতাদর বাড়িতে।

এদিকে, শ্রীলঙ্কায় হিংসাত্মক ঘটনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আমেরিকা। গতকাল মার্কিন বিদেশ দপ্তর জানিয়েছে, দেশটির পরিস্থিতির উপর নজর রাখছে তারা। বলে রাখা ভাল, রাজাপক্ষেদের উত্থান শ্রীলঙ্কার রাজনীতিতে একটি নতুন যুগের সূচনা করেছিল। যেখানে সিংহলি জাতীয়তাবাদ তার চূড়ান্ত আধিপত্যের জায়গায় রয়েছে। কিন্তু আর্থিক সংকট রাতারাতি শ্রীলঙ্কাবাসীকে রাজাপক্ষেদের বিরুদ্ধে পথে নামিয়ে দিয়েছে। প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষের সরকারে শুধু তাঁর নিজের পরিবারের সাত সদস‌্য ছিলেন। গোতাবায়ার ভাই মাহিন্দা রাজাপক্ষে ছিলেন প্রধানমন্ত্রী পদে। পশ্চিমি সংবাদমাধ‌্যমে শ্রীলঙ্কার এই সংকটের জন‌্য চিনের দিকে আঙুল তোলা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, চিনই ঋণের জালে ফাঁসিয়েছে শ্রীলঙ্কাকে।

বিশ্লেষকদের মতে, শুধু চিনা ঋণ নয়, শ্রীলঙ্কার দুর্দশার জন্য দায়ী রাজপক্ষে পরিবারের অপশাসন, করোনা মহামারী ও সন্ত্রাসবাদের মতো ইস্যুগুলিও। ২০১৯-এর এপ্রিলে কলম্বোর একাধিক চার্চ ও হোটেলে ধারাবাহিক বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। যাতে মৃত্যুসংখ‌্যা ২৫০ ছাপিয়ে যায়। এই ধারাবাহিক বিস্ফোরণই একধাক্কায় কলম্বোয় বিদেশি পর্যটক ৭১ শতাংশ কমিয়ে দেয়। ২০১৯ জুড়ে ধারাবাহিকভাবে দ্বীপরাষ্ট্রে বিদেশি পর্যটকের সংখ‌্যা কমতে থাকে। ২০২০-র অতিমারী পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে। ২০১৮-য় শ্রীলঙ্কা যেখানে পর্যটন থেকে ৪৪০ কোটি ডলার আয় করেছিল, ২০১৯-এ সেটা নেমে আসে ৩৬০ কোটি ডলার, ২০২০-তে তা আরও কমে দাঁড়ায় মাত্র ৬ কোটি ৮২ লক্ষ ডলারে। ২০২১-এ তা কমতে কমতে এসে ৫ কোটি ৩৪ লক্ষ ডলারে দাঁড়িয়েছে। একদিকে বিদেশি মুদ্রার যোগান কমছে, অন‌্যদিকে ঋণের ভার ও আমদানির খরচ বাড়ার জন‌্য বিদেশি মুদ্রার চাহিদা বাড়ছে। তৈরি হয়েছে এক অভূতপূর্ব সংকট।

২০১৯-এর নভেম্বরে ভোটের আগে গোতাবায়া রাজাপক্ষে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি দেন ভোটে জিতলে কর কমাবেন এবং কৃষকদের নানারকম ছাড় দেবেন। ভোটে জেতার পর রাজাপক্ষে দেশে ভ‌্যাটের হার ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৮ শতাংশ করে দেন। সমস্ত পণ‌্য পরিষেবার উপর শ্রীলঙ্কা ২ শতাংশ ‘নেশন বিল্ডিং ট‌্যাক্স’ গ্রহণ করত। সেটাও তিনি তুলে দেন। শেয়ার বাজারের মূলধনী আয়ের উপর করের হারও কমানো হয়। সবমিলিয়ে রাজাপক্ষর করনীতি ভাঁড়ারে টান ফেলে। অন‌্যদিকে, বিদেশি মুদ্রার সংকট আমদানিতে প্রভাব ফেলে। কোভিড সংকটে সরকারের খরচও বেড়ে যায়। কোষাগার ঘাটতি জাতীয় উৎপাদনের ১০ শতাংশ ছাড়ায়। আমদানি খরচ কমাতে গিয়ে রাজাপক্ষে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক দ্রব‌্য আমদানি নিষিদ্ধ করে দেন। ২০২১-এর তিনি ঘোষণা করেন, দেশের সব চাষ হবে জৈব সার দিয়ে। উন্নত দেশগুলিতে যেখানে চাষযোগ‌্য জমির মাত্র ৯ শতাংশ জৈব সারের উপর নির্ভরশীল, সেখানে রাজাপক্ষ একমাসের মধ্যে দেশের ১০০ শতাংশ কৃষিযোগ‌্য জমি জৈব সারের উপর নির্ভরশীল করে দেন। এর ব‌্যাপক প্রভাব পড়ে গত কৃষি মরশুমের উৎপাদনে। ধান উৎপাদন ৩০ শতাংশ কমে যায়। কমে যায় চা-কফি উৎপাদনও। কৃষি উৎপাদনের পতন একদিকে খাদ্য সংকট এবং অন্যদিকে বৈদেশিক বাণিজ্যে সংকট তৈরি করে।

[আরও পড়ুন: হংকংয়ের প্রধান নির্বাহী নির্বাচিত চিনপন্থী জন লি, স্বশাসিত প্রদেশে আরও মজবুত বেজিংয়ের রাশ]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement