সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: দেবী জগদ্ধাত্রী হলেন মহাশক্তি দুর্গারই এক বিশেষ রূপ। তাঁর আবির্ভূতা হওয়ার পেছনে দুটি প্রধান পৌরাণিক কারণের উল্লেখ পাওয়া যায়। প্রথম ও বহুল প্রচলিত কাহিনিটি উপনিষদ এবং কাত্যায়নী তন্ত্রে বর্ণিত।
মহিষাসুরকে বধ করার পর দেবতারা অত্যন্ত অহংকারী হয়ে ওঠেন। তাঁরা ভাবতে শুরু করেন, অসুর বধের সমস্ত কৃতিত্ব তাঁদেরই। কারণ দেবী দুর্গা তাঁদের সম্মিলিত শক্তির প্রকাশ। দেবতাদের এই দর্প বা অহংকার চূর্ণ করার জন্যই দেবী তাদের সামনে আবির্ভূতা হন। তিনি দেবতাদের শক্তি পরীক্ষা করতে একটি সামান্য তৃণখণ্ড তাঁদের দিকে ছুড়ে দেন। দেবতারা হাজার চেষ্টাতেও সেই তৃণ সরাতে পারেননি। ইন্দ্র বজ্র দিয়ে সেই তৃণ ধ্বংস করতে ব্যর্থ হন। অগ্নিদেব সেই তৃণটিকে দগ্ধ করতে করতে পারলেন না। বায়ুদেব তৃণটিকে উড়িয়ে ফেলতে অসফল হলেন। এমনকী বরুণদেবও তৃণটিকে জলস্রোতে ভাসাতে পারেননি। দেবতারা তখন বুঝতে পারেন যে, তাঁদের শক্তিও দেবীর থেকেই এসেছে। এই ঘটনার পরেই তাঁদের সামনে চতুর্ভূজা জগদ্ধাত্রী রূপে প্রকাশিত হন পরমেশ্বরী। তিনি প্রমাণ করেন, তিনিই এই জগতের ধারিণী বা পালিকা শক্তি।
আরেকটি মত পাওয়া যায় শ্রীশ্রীচণ্ডীতে। এই মত অনুসারে, যুদ্ধের সময় মহিষাসুর হাতির রূপ ধারণ করেছিল। সংস্কৃতে হাতির আরেক নাম 'করী'। হস্তীরূপী এই অসুরকে বধ করার জন্যই দেবী চতুর্ভুজা মূর্তিতে আবির্ভূতা হন। তিনি তাঁর চক্র দিয়ে সেই হাতির শুঁড় ছেদন করেন। দেবীর এই রূপটিই জগদ্ধাত্রী নামে পরিচিত। সেই কারণে দেবীর বাহন সিংহ একটি মৃত হাতির (করীন্দ্রাসুর) উপর দাঁড়িয়ে থাকে। তাই দেবীর আরেক নাম হল করীন্দ্রাসুরনিসূদিণী।
জগদ্ধাত্রী শব্দের আভিধানিক অর্থ হল— জগৎ (ত্রিভুবন) ও ধাত্রী (ধারণকর্ত্রী)। অর্থাৎ, যিনি এই সমগ্র জগতকে ধারণ করে রাখেন। তিনি সত্ত্ব গুণের প্রতীক। মূলত অহংকার নাশ এবং জগতের রক্ষণ ও পোষণের জন্যই তিনি আবির্ভূতা হয়েছিলেন।
