সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: তিনি দশমমহাবিদ্যার প্রথম দেবী। খড়গহস্ত, নরমুণ্ডধারী উগ্ররূপী তিনি। সময়, মৃত্যু,পরিবর্তনের প্রধান কর্তা মা কালী। প্রাচীন বাংলার ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায় ডাকাতদের একমাত্র দেবী হিসাবে পূজিত তিনি। গ্রাম বাংলার নিশ্বাসে জড়িয়ে কালী। তবে খাস কলকাতাতেও রয়েছে এমন কয়েকটি কালীবাড়ি যার পরতে পরতে লুকিয়ে ইতিহাস ও অলৌলিক গল্প। আজকের প্রতিবেদনে রইল কলকাতার সেই তিনটি কালীবাড়ির হদিশ।
ডাকাত কালী মন্দির: বাংলার কোণায় কোণায় ডাকাতদের কালীপুজোর ইতিহাস অনেকেরই জানা। তবে খাস কলকাতায় ডাকাত কালীবাড়ি! উত্তর নয় দক্ষিণ কলকাতার চেতলা বাজার সংলগ্ন এলাকায় রয়েছে ডাকাত কালী মন্দির। সুউচ্চ মুক্তকেশী কালী প্রতিমা পুজো করা হয় এখানে। অদ্ভূত বিষয়, দেবী এখানে বাঁধা শিকলে। হ্যাঁ, চারটি হাতই বাঁধা থাকে। কিন্তু কেন? বিশ্বাস করা হয় মা খুব চঞ্চল। দেবী নাকি চলাফেরা করে বেড়াতেন। তাই এ মন্দিরে মা কালীকে মোটা লোহার শিকলে বেঁধে রাখা হয়।
আরও জানা যায়, এই পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে তারকেশ্বরের দুই ডাকাত নীলু, ভুলুর ও মা সারদার নাম। কথিত আছে, এক সময়ে সারাদা দেবী তারকেশ্বরে যাত্রা করেন। দুই ডাকাত তাঁকে অপহরণ করে এই স্থানে নিয়ে আসে। পরে মা সারদার মধ্যে তারা নাকি মা কালীর রূপ দেখতে পান। এর পরই তাঁকে ছেড়ে দেয় দুই ডাকাত। তবে এই মন্দির কে, কবে প্রতিষ্ঠা করেছেন সেই বিষয়ে স্পষ্ট কিছু জানা যায় না। ডাকাত কালী নাম অনুসারে বিশ্বাস কোনও ডাকাত এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিল।
তারাশংকরী পীঠ: উত্তর কলকাতার শ্যামবাজার থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে বেলগাছিয়া অঞ্চলে তারাশংকরী পীঠের দেবীর রূপ ও মন্দির শৈলী বড় অদ্ভূত। মায়ের চোখে উগ্রতা, দাঁত প্রকটভাবে দৃশ্যমান এবং রক্তস্নাত। শুধু মা কালী নয় সঙ্গে পূজিত কালভৈরব ও যশমাধব। পুজোর নিয়মেও রয়েছে অদ্ভূত রীতি। তন্ত্রমতে সারা বছর পুজোর পাশাপাশি শ্মশানের চিতা পোড়ানো কাঠ জ্বলতে থাকে এখানে। মন্দির তৈরির সময় নাকি বারাণসীর মণিকর্ণিকা শ্মশান থেকে এক সধবার চিতার আগুন নিয়ে আসা হয়। সেই থেকে মন্দিরের গর্ভগৃহে আগুন নেভেনি।
মায়ের ভিন্ন পুজো রীতি ছাড়া পূজিত হন কালভৈরব। এই মন্দির নেপাল ব্যতীত ভারতের একমাত্র স্থান যেখানে কালভৈরবের মূর্তি রয়েছে। যে মূর্তি পুজো করা হয় তা নাকি ভারতের কোথাও নেই।
চাইনিজ কালী মন্দির: সময়টা ১৮০০ দশক। ভারতে আসতে থাকে চিনা নাগরিকরা। বসতি গড়ে ওঠে তপসিয়ার ট্যাংরা এলাকায়। বাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গে মিলেমিশে যায় হিউয়েন সাঙের দেশের লোকেরা। বাঙালির পুজোগুলো থেকেও নিজেদের দূরে রাখতে পারেনি তারা। ট্যাংরার চিনা পাড়াতে শুরু হয় কালীপুজো। নাম হয় চাইনিজ কালী মন্দির।
এই মন্দিরের আর্কষণ মাকে ভোগে দেওয়া হয় চাউমিন, স্টিকি রাইস, সবজি। এছাড়া অশুভ আত্মা দূর করতে হাতে তৈরি কাগজ পোড়ানো হয়। পুজোর সময় মন্দিরে এক বিশেষ ধূপকাঠি জ্বালানো হয়। যা চিনা ধূপকাঠি নামে পরিচিত।