সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: মনসা পূজা। সাপের ভয়, সাপ বিপদে মুক্তি থেকে শুরু করে প্রজনন! একাধিক কারণে এই দেবীর পুজো করা হয় হলেই প্রচলিত রয়েছে। কিন্তু মনসা দেবীর আরাধনার আসল কারণ হিসেবে কী বলছে পুরাণ? কেন দেবী ইতিহাসে বরাবর বঞ্চিত মনসা! প্রশ্ন ওঠে নিরন্তর। পুরাণচর্চার অন্দরেই ভিড় করে মনসার দেবীকথন।
পুরাণে বলা হয়, সর্পদংশনের ভয় থেকে মানুষকে বাঁচানোর জন্য প্রজাপতি ব্রহ্মা কশ্যপমুনিকে একটি মন্ত্র আবিস্কার করার আদেশ দেন। ব্রহ্মার আদেশে ঋষি কশ্যপ শুরু করেন সেই চেষ্টা। ঠিক যখন এই বিষয়ে চিন্তা করছেন তিনি, এমন সময় তাঁর ‘মননক্রিয়া’ থেকে আবির্ভূতা হন স্বর্ণবর্ণের এক দেবী। মন থেকে তাঁর জন্ম হওয়ায়, মনসা নাম পান তিনি। কিন্তু মনসার জন্ম তো বটেই, মনসার জীবন নিয়েও কথকতা রয়েছে বহু।
[আরও পড়ুন: শুধুই সর্পভীতি! আসলে মনসা দেবীর পূজার নেপথ্যে রয়েছে অন্য কারণ, জানেন কী]
মধ্যযুগীয় বাংলা সাহিত্যে বারবার উঠে এসেছেন দেবী মনসা। বাংলা ভাষায় মনসা নিয়ে লিখেছেন কেতকা দাস, নারায়ণ দত্ত, বিজয়গুপ্ত, কানাহরি দত্তরা। এঁদের লিখিত পদ্মপুরাণ বা মনসামঙ্গলে দেবীর চরিত্রচিত্রণ করা হয়েছে নানান ভাবে। যেমন মনসামঙ্গল কাব্যে বলা হয়, চাঁদ সওদাগরের কাছ থেকে পুজো পাওয়ার বাসনায় একের পর এক সমস্যা তৈরি করেন দেবী মনসা। তাঁর পুত্র লখিন্দরের প্রাণ সর্পাঘাতে হরণ করেন দেবী। তারপর বেহুলার কৃতিত্বে ফেরে লখিন্দরের প্রাণ। এরপর মর্ত্যে দেবী হিসেবে পুজো পান মনসা।
[আরও পড়ুন: ঠিক কোন সময়ে জন্মাষ্টমী পালনে মিলবে অগাধ পুণ্যফল?]
আবার কোনও কোনও ক্ষেত্রে তথাকথিত ‘নিকৃষ্ট জীবে’র দেবী হিসাবে বর্ণিত হন মনসা। উঠে আসে তাঁর স্বর্গে স্থান পাওয়ার লড়াই নিয়েও। বলা হয়, শিবের স্ত্রী দেবী চণ্ডী মনসাকে ঘৃণা করতেন! একটা সময় চণ্ডী মনসাকে নিজের মেয়ের স্বীকৃতি দিলেও মনসা-চণ্ডীর বিভেদ রচিত হয় বারবার। এমনকী মনসার চোখ অন্ধের কারণ এই বিবাদ, বলা হয় এমনও। আবার কোনও কোনও ক্ষেত্র থেকে জানা যায়, মহাদেব নন, ঋষি কাশ্যপই আসলে দেবী মনসার বাবা! পুরাণ মতে, মনসা শিবের মানসকন্যা আবার জরৎকারুর স্ত্রী। এই জরৎকারু দেবী মনসাকে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন, স্বামীর ঘর করতে পারেননি তিনি। আস্তিকমুনি মনসার সন্তান হিসাবেও দাবি করা হয় পুরাণে।
বরাবর মা, বাবা আবার দেবতাকূল। সর্বত্র মনসার বিচরণে উঠে এসেছে অবহেলার প্রসঙ্গ।শিবের অন্য কন্যাদের অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন না উঠলেও মনসার ক্ষেত্রে ঘটে সমস্যা। মনসার বন্ধু হয়েছেন সমাজের নিম্নস্তরের কেউ। একাধিক বার এক প্রতিহিংসাপরায়ণ নারী হিসেবেই বর্ণিত হয়েছেন তিনি। তবুও লড়াই করেছেন মনসা। চাঁদ সওদাগরের বাম হাতের পুজো পেয়েও নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার লড়াই লড়েছেন এই সাহসী দেবী।