অর্ণব দাস, বারাকপুর: বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ। বছরভর নানা উৎসব আর উদযাপন। তেমনই একটা ‘দণ্ড উৎসব’। ৫০০ বছরেরও বেশি পুরনো এই উৎসব মূলত বৈষ্ণবদের। কিন্তু কালে কালে তাতে সমস্ত সম্প্রদায়ের মানুষজনই যোগ দিয়েছেন। ‘দণ্ড উৎসব’ হয়ে উঠেছে সকলের আপনার। লোকমুখে তা হয়ে গিয়েছে ‘দই-চিঁড়ে উৎসব’। তবে এবছর এই আনন্দের উৎসবই হয়ে উঠল অভিশপ্ত। উত্তর ২৪ পরগনার পানিহাটিতে (Panihati) দণ্ড উৎসবে যোগ দিতে গিয়ে প্রবল গরমে মৃত্যু হয়েছে ৩ জনের। একলহমায় আনন্দ বদলে গিয়েছে শোকের পরিবেশে।
পানিহাটি অঞ্চলের ঐতিহ্যশালী উৎসব ‘দণ্ড উৎসব’। প্রায় পাঁচশো বছর ধরে এই ঐতিহ্যশালী উৎসব হয়ে আসছে পানিহাটির গঙ্গার তীরবর্তী মহোৎসবতলা ঘাটে। পাঁচদিন ধরে চলে এই উৎসব। লক্ষ লক্ষ মানুষ বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এই উৎসবের দিন শামিল হন পানিহাটিতে। কথিত আছে, প্রায় পাঁচশো বছর আগে এই দিনেই চৈতন্যদেব (Chaitanya) দণ্ড দিয়েছিলেন রঘুনাথ দাসকে। তারপর থেকেই চলে আসছে এই রীতি। করোনা অতিমারীর কারণে গত ২ বছর ন্যূনতম রীতি মেনে পালিত হয় এই উৎসব। এবছরও আরম্ভর কমিয়ে পানিহাটি পুরসভার উদ্যোগে পালিত হল দন্ড উৎসবের।
[আরও পড়ুন: পরপর সম্মান-সংবর্ধনাই কেরিয়ারের উন্নতির পথে বাধা! বিস্ফোরক লভলিনা বরগোঁহাই]
পানিহাটি বহু প্রাচীন একটি বৈষ্ণব তীর্থক্ষেত্র। ১৫১৪ সালে নদীপথে নীলাচল যাওয়ার পথে রাঘব পণ্ডিতের অনুরোধে চৈতন্যদেব বিশ্রাম নিয়েছিলেন গঙ্গার তীরবর্তী পানিহাটির অঞ্চলে। সেই সময় এই অঞ্চলের জমিদার ছিলেন গোবর্ধন দাস। তাঁর ছেলে রঘুনাথ দাস ছিলেন চৈতন্যদেবের ভক্ত। চৈতন্যদেবের আগমনের কথা জানতে পেরে রঘুনাথ দাস তাঁর সঙ্গে দেখা করতে আসেন। দীর্ঘদিন বাদে দেখা হওয়ার পর রঘুনাথ চৈতন্যদেবের কাছে দণ্ড ভোগ করতে চান। তখন উপস্থিত নিত্যানন্দ প্রভু দণ্ড হিসাবে রঘুনাথকে উপস্থিত সকল ভক্তদের মধ্যে দই, চিঁড়ে এবং বিভিন্ন ফল বিতরণ করার জন্য আদেশ দেন।
[আরও পড়ুন: ২ টাকায় নতুন জীবন পেল ৭ বছরের শিশু, নজির গড়ল SSKM]
এরপর থেকেই পানিহাটিতে প্রতি বছর জৈষ্ঠ মাসের শুক্লা ত্রয়োদশী তিথিতে আড়ম্বরের সঙ্গে পালিত হয় দণ্ড উৎসব। অনেকে আবার এই উৎসবকে দই- চিঁড়ের মেলাও বলে থাকেন। মূল প্রসাদ হিসেবে এখানে দই আর চিঁড়ে বিলি করা হয়। এহেন ইতিহাস বিজড়িত দণ্ড উৎসব এখানে পালিত হয় মহাধুমধামে। তবে এ বছর যা ঘটল, তারপর কলঙ্কের দাগ রইল নিঃসন্দেহে।