সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: হিরো-হিরোইন সুলভ চেহেরার প্রচলিত ধ্যারধারণা গ্ল্যামারদুনিয়ায় নতুন নয়! সুঠাম, সুদর্শন হলেই সিনেমায় নায়কের চরিত্র। কিংবা সিনেমা হিট করতে ছিপছিপে গড়ন, গ্ল্যামারাস নায়িকার কাস্টিং... এই তো চিরাচরিত সিনে-ব্যাকরণ! তবে 'লুক' দিয়েই যে বিশ্বজয় হয় না, সেটা আরও একবার প্রমাণ করলেন কলকাতা-কন্যা অনসূয়া সেনগুপ্ত (Anasuya Sengupta)। বাঙালি মেয়ের কান সাফল্যে যখন গোটা দেশ মাতোয়ারা, তখন সিনেদুনিয়ার কাস্টিং প্রথা নিয়ে কিছু প্রশ্ন এসেই যায়। সোশাল পাড়ায় ফলোয়ারের সংখ্যা, জনপ্রিয়তা দেখে কোনও শিল্পীর দক্ষতা বিচার করা হোক বা কাস্টিংয়ের মার্কশিটে নম্বর বসানোর রীতি বহুদিন ধরেই নির্মাতারা বজায় রেখেছেন। সেই প্রেক্ষিতেই এবার নেটবাসিন্দারা হইহই করে প্রশ্ন রেখেছেন, শিল্পীসত্ত্বা বা দক্ষতা, নিষ্ঠার কি কোনও দামই নেই, সবটাই 'লুক' সর্বস্ব? বঙ্গকন্যা অনসূয়ার বিশ্বজয় যেন সেই প্রচলিত 'প্র্যাকটিসে' কষিয়ে চড় মারল। সেই প্রেক্ষিতেই ঋদ্ধি সেনও (Riddhi Sen) প্রশ্ন রাখলেন, "এখনও সোশাল মিডিয়ার ফলোয়ার দেখে কাস্টিং চলবে?"
পরিচালক কিউয়ের আক্ষেপ, "বাংলা ইন্ডাস্ট্রি অনসূয়ার দাম দেয়নি।" 'ম্যাডলি বাঙালি'র সময় অঞ্জন দত্ত আবিষ্কার করেছিলেন, অনসূয়ার মধ্যে অভিনয়ের খিদে। তৎসত্ত্বেও সেই অভিনেত্রীকে কেন আর বাংলার সিনেপর্দায় দেখা গেল না? এই প্রশ্ন অনেকেরই। বরং ভিনদেশী পরিচালক খনি থেকে খুঁজে হিরে পেলেন। কেউ বা আবার আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন, এরকম অনেক অনসূয়াই হারিয়ে যাচ্ছেন সঠিক প্ল্যাটফর্মের অভাবে। সোশাল পাড়ার এহেন মতামতের মাঝেই ঋদ্ধি এদিন ফেসবুকে লিখেছেন, "অনসূয়া সেনগুপ্ত নিঃসন্দেহে ইতিহাস তৈরি করেছেন। আমাদের সকলের জন্য গর্বের মুহূর্ত। কিন্তু সেই সঙ্গে ওঁর এই সাফল্য আমাদের কাছে একটা প্রশ্নও রাখল, এখনও কি শিল্পীর দক্ষতা কিংবা কঠোর পরিশ্রমের পরিবর্তে সোশাল মিডিয়ায় ফলোয়ারের সংখ্যা দেখে কাস্ট করা হবে? যাঁরা নিজেদের বিশাল তারকা মনে করেন (যেটা আসলে তাঁরা নন), সেই বস্তাপচা ধ্যানধারণা নিয়েই কাস্টিং চালিয়ে যাব আমরা?"
এরপরই অভিনেতার সংযোজন, "নাকি এখনও বারবার সেসব তারকাদের সুযোগ দিয়ে ওদের অভিনয়ের অক্ষমতাকে আড়াল করে যাব? আর বলব- আহা, এইবয়সেও চেহারাটা কীরকম ধরে রেখেছে দেখো? এবার প্রশ্ন হল, "আমরা কবে এই নিরাপদে খেলার প্রবণতা থেকে কবে বেরিয়ে আসব আর ঝুঁকি নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা বোধ করব?" ঋদ্ধির পোস্টে সায় জানিয়েছেন অনেকেই। মূলত সিনেইন্ডাস্ট্রিতে লুক নিয়ে যে হইচই, সেটাতেই কুঠারাঘাত করেছেন অনেকে।
[আরও পড়ুন: FTII-এর বিদ্রোহী পড়ুয়া থেকে কান জয়, গজেন্দ্র চৌহানের বিরুদ্ধে কেন রুখে দাঁড়িয়েছিলেন পায়েল?]
মুম্বইয়ে মূলত প্রোডাকশন ডিজাইনারের কাজ করেন অনসূয়া সেনগুপ্ত, থাকেন গোয়ায়। তবে এবার সেরা অভিনেত্রী হিসেবে কানের ‘Un Certain Regard’ বিভাগের পুরস্কার পেলেন বাংলার মেয়ে। অনসূয়া কাজ করেছেন সৃজিত মুখোপাধ্য়ায়ের ‘রে’ সিরিজেও। বুলগেরিয়ান পরিচালক কনস্ট্যানটিন বোঁজ্যনভের ছবি ‘দ্য শেমলেস’-এর সুবাদেই কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে কলকাতা কন্যার হাতে এসেছে সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার। 'দ্য শেমলেস' ছবিতে উঠে এসেছে একজন যৌনকর্মীর কথা। তিনি দিল্লির একটি পতিতাপল্লীতে একজন পুলিশকে খুন করে পালান। নেটফ্লিক্সের ২০২১ সালের সত্যজিৎ রায়ের সংকলন ‘ফরগেট মি নট’ এবং ‘মাসাবা মাসাবা’র প্রোডাকশন ডিজাইনার হিসেবেও কাজ করেছেন অনসূয়া।