নির্মল ধর: ছায়াছবির সামনের জগৎ এবং নেপথ্যের দুনিয়া নিয়ে তো বটেই, সেই সঙ্গে বাল্যপ্রেম, নিরুচ্চার ভালবাসা, পরকীয়া প্রেম এবং সুন্দর ও ভয়াল প্রকৃতি নিয়ে বেশ জমাটি কায়দাতেই ব্যবসায়িক সফল হওয়ার ইচ্ছে নিয়ে কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় তৈরি করেছেন ‘ছায়া ও ছবি’। নামটাও যথোপযুক্ত। ছায়ায় ঘেরা ছবির প্রধান চারটি চরিত্র- নায়ক অরিন্দম (আবির), স্টার নায়িকা রাই (কোয়েল), তাঁর ড্রাইভার কাম গাইড কাম (এটা বলা বারণ) জিতু (ঋত্বিক) এবং উঠতি নায়িকা মৌ (প্রিয়াঙ্কা)। অবশ্য ছবির মধ্যে নির্মীয়মাণ ছবির পরিচালক মায়া (চূর্ণী) এবং প্রযোজক বাবাও (বরুণ চন্দ) আছেন।
[আইনি গেরোয় এবার ফাঁসলেন রানি মুখোপাধ্যায়]
মূল কাহিনি আবর্তিত প্রথম চারজনকে নিয়ে। দার্জিলিংয়ের লোকেশনে চূর্ণীর ছবির শুটিং চলছে, নায়ক-নায়িকা আবির এবং কোয়েল, পার্শ্বনায়িকা প্রিয়াঙ্কা। বলা যেতে পারে শুটিং চলতে থাকা ছবির গল্পের সঙ্গে প্রায় সমান্তরালভাবে একই ধরনের গল্প তৈরি হতে থাকে। বিয়ের জন্য অরিন্দম-রাইয়ের আংটি বদলও হয়ে গিয়েছে। অরিন্দমের কথায় দার্জিলিংয়ের এই আউটডোর তাঁদের ‘প্রিম্যারেজ হানিমুন’। আর ড্রাইভার জিতু নায়িকা রাইয়ের মস্ত ফ্যান। তাঁর ঘরের দেওয়াল সাজানো রাইয়ের ছবির কাটিং দিয়ে। বুকের ওপর রাই-এর নামও ট্যাটু করা। স্বপ্নের নায়িকা শুটিংয়ে আসছে জেনে, রাইয়ের গাড়ির ড্রাইভার হয়েছে জিতু। গল্পের মধ্যে দু-দুটি ত্রিকোণ প্রেমের ঘটনা আছে। চারজনের কে কোন কোণে সেটা বলছি না। এই রহস্যটা চিত্রনাট্যে কৌশিক প্রায় শেয পর্যন্ত জিইয়ে রাখতে পেরেছেন। এবং সেজন্য মৌ-এর মোবাইল চুরি হওয়া এবং চোর হিসেবে জিতুকে অনুমান করে তাঁকে হেনস্তা করার অতিনাটকও আছে। শেষপর্যন্ত অবশ্য প্রকৃত প্রেমেরই ‘জয়’ হয়। ছবির জগতের নাটক হার মানে। ছবিতে একটি সংলাপ আছে- জীবনের ‘নাটক’ অনেক সময়েই সিনেমার চাইতেও বেশি ‘ মেলো’।
[নিজের প্রথম বাংলা গান নিয়ে কী বললেন আতিফ?]
সম্ভবত কৌশিক এই ছবিকে পরিচ্ছন্ন ব্যবসায়িক পরিকাঠামোয় গড়তে চেয়েছেন। চলতি কোনও ফর্মুলার আশ্রয়ও নেননি। ‘বাস্তুশাপ’ ছবিতে যেমন চার পাঁচটি চরিত্রের পারস্পরিক সম্পর্কের কাটাকুটি নিয়ে খেলা করেছিলেন, এই ‘ছায়া ও ছবি’ ওই গল্পেরই অন্য একটি সংস্করণ। সামাজিক দায়বোধ, বক্তব্য প্রকাশের কোনও গুরুভার কৌশিক এই চিত্রনাট্যে নেননি। ঘরোয়া বাঙালি মেজাজের বাইরে,প্যানপ্যানে পারিবারিক সোপ অপেরাকে এড়িয়ে তিনি রহস্য-রোম্যান্স এবং ছবি বানানোর নেপথ্যের অজানা গল্প নিয়ে জনমুখী হওয়ার চেষ্টা করেছেন। সেই চেষ্টা কতটা সফল হল, তা দর্শক বলবেন।
তবে তাঁর সিনেমা ব্যকরণে কোনও ব্যাত্যয় ঘটেনি এখানে। গোপী ভগতের ক্যামেরা, ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্তের সুরে, অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়ের গাওয়া গানটি শুধু নয়, ‘আমার হারিয়ে যাওয়া ড্রয়িংখাতা’ গানটিও ছবির প্রায় থিম সং হয়ে ওঠে। আর আছে অভিনয়। আবির, কোয়েল, চূর্ণী, প্রিয়াঙ্কা, বরুণ চন্দ তো আছেনই, কিন্তু নজর কেড়ে নিয়েছেন ঋত্বিক চক্রবর্তীই। নায়কোচিত হাবভাবে আবির অবশ্যই সেই ‘অরা’ তৈরি করেছেন। স্টার রাই হয়েছেন কোয়েল। দারুণ সুন্দর লেগেছে তাঁকে দেখতে। অভিনয়েও তিনি এখন বেশ পোক্ত। রাইয়ের বেদনা ও পুরনো প্রেমের চাপা প্রকাশে এই কোয়েল একেবারেই নতুন। চূর্ণী পরিচালকের চেয়ারটি যেভাবে সামলেছেন, ঠিক একইভাবে শুটিংয়ের বাইরে ইউনিট মেম্বার ও সকলের সঙ্গেই বেশ সম্ভ্রম ও ব্যক্তিত্ব নিয়েই অভিনয় করেছেন। প্রিয়াঙ্কাও খুব ভালো। আর ঋত্বিককে বলতে ইচ্ছে করছে ‘সত্যিই আপনি শুয়ো… বাচ্চার মতো অভিনয় করেছেন’। ওঁর জন্যই দর্শক দু’বার হলে ঢুকতে পারেন। ঋত্বিকই ছবির মেরুদণ্ড।
The post কৌশিকের ‘ছায়া’ ঘেরা এ ছবির মেরুদণ্ড ঋত্বিকই appeared first on Sangbad Pratidin.