shono
Advertisement
Cartridge case

বৈধ অস্ত্রের দোকানের আড়ালে কীভাবে সক্রিয় অসাধু চক্র? সংবাদ প্রতিদিন-এর হাতে বিস্ফোরক তথ্য

দোকান কর্তৃপক্ষের মতে, আসলে লাইসেন্সের তথ্যগুলি ভুয়ো হয়।
Published By: Paramita PaulPosted: 05:23 PM Feb 18, 2025Updated: 05:25 PM Feb 18, 2025

অর্ণব আইচ: দোকান বৈধ। দোকানে মজুত করা যত অস্ত্র আর কার্তুজ রয়েছে, বৈধ তা-ও। কিন্তু সেগুলি কেনার জন্য অস্ত্র পেশ করা হচ্ছে জাল লাইসেন্স। আর জাল লাইসেন্সের মাধ্যমেই বৈধ দোকান থেকে বাইরে অস্ত্র পাচার করছে অসাধু চক্র। তবে এই জাল লাইসেন্সের প্রায় কোনওটাই এই রাজ্যের নয়। কিছু জাল লাইসেন্স জম্মু ও কাশ্মীরের, আবার কিছু জাল লাইসেন্স মণিপুর, নাগাল্যান্ড-সহ উত্তর-পূর্ব ভারতের কয়েকটি রাজ্যের। আবার বিহার বা উত্তরপ্রদেশের যে লাইসেন্স পেশ করে কলকাতার দোকানগুলি থেকে অস্ত্র কেনা হয়, সেগুলির মধ্যে কতগুলি বৈধ, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে গোয়েন্দা পুলিশেরও। কারণ, পুলিশের তদন্তেও ধরা পড়েছে যে, ভিনরাজ্যে বহু ভুয়ো লাইসেন্স তৈরি হয়েছে ওই রাজ্যের বিভিন্ন জেলার প্রশাসনিক কর্তাদের সই ও সিল জাল করে। এমনও দেখা গিয়েছে যে, যাদের নামে অস্ত্রের লাইসেন্স তৈরি হয়েছে, তাদের কোনও অস্তিত্ব নেই। অথবা, এক ব্যক্তির নামে অস্ত্র কেনার আবেদন জানিয়ে, তার লাইসেন্সে অন্য ব্যক্তি অস্ত্র সংগ্রহ করেছে, এমন তথ্যও মিলেছে। 'সংবাদ প্রতিদিন'-এর অন্তর্তদন্তে উঠে এসেছে বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য।

Advertisement

মধ্য কলকাতায় যে লাইসেন্সপ্রাপ্ত অস্ত্রের দোকানগুলি রয়েছে, সেগুলি থেকে শুধু কলকাতা বা রাজ্যের বাসিন্দারা অস্ত্র কেনেন, এমন নয়। এই দোকানগুলি থেকে লাইসেন্স দেখিয়ে বিভিন্ন রাজ্য থেকে অস্ত্র ও বুলেট কিনতে আসেন বহু মানুষ। আর সেখানেই কারচুপি হয়। দোকান কর্তৃপক্ষের মতে, আসলে লাইসেন্সের তথ্যগুলি ভুয়ো হয়। কিন্তু কোনও দোকানের পক্ষে সম্ভব হয় না, ভিনরাজ্যের কোনও জেলার প্রশাসনিক কর্তার সই বা সিল জাল কি না, সেগুলি যাচাই করা। তাই লাইসেন্স দেখিয়ে যখন কেউ অস্ত্র, বিশেষ করে বুলেট কিনতে আসেন, তখন আইন মতোই ব্যবসার খাতিরে তা তাঁরা বিক্রি করেন। তবে সন্দেহ হলে দোকানের পক্ষ থেকে বিষয়টি লালবাজারকেও জানানো হয়।

মূলত অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি থেকে দোকানগুলি বুলেট কেনে। কলকাতার দুটি সরকারি অস্ত্র কারখানা তৈরি করে বিভিন্ন ধরনের পিস্তল, দোনলা বন্দুক। এ ছাড়াও বন্দুক তৈরি হয় জম্মুর কয়েকটি কারখানায়। অস্ত্র কারখানা থেকে বৈধ ডিলাররা সেগুলি পাঠান দোকানে। কলকাতার প্রায় সব বৈধ অস্ত্র দোকানগুলিতে একনলা ও দোনলা বন্দুক বিক্রি হয়। যদিও পিস্তল সবাই বিক্রি করে না। তবে এখন ক্রেতাদের চাহিদা ৭.৬৫ এমএম ও ৯ এমএম পিস্তল। বিক্রেতাদের ধারণা, ছোট ও 'ইউজার ফ্রেন্ডলি' হওয়ার কারণেই এই চাহিদা। এমনকী, মধ্য কলকাতার কয়েকটি দোকান থেকে রাজনৈতিক নেতা-সহ বহু বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বই সুরক্ষার কারণে কেনেন লাইসেন্সপ্রাপ্ত অস্ত্র।

এ ছাড়াও দোনলা ও একনলা বন্দুকেরও চাহিদা রয়েছে বাজারে। এই বন্দুকের জন্যই প্রয়োজন ১২ বোর ক্যালিবার কার্তুজের। আর পিস্তলের জন্য প্রয়োজন হয় ৭.৬৫ ও ৯ এমএম বুলেট। পাহারার কাজে নিয়োগ হওয়া অনেকেই কেনেন বন্দুক। তাই শুধু বৈধ পথে নয়, চোরাপথেও চাহিদা বাড়ছে দোনলা বন্দুকের। দোকান থেকে ঘুরপথে অস্ত্র ও বুলেট হাতবদল হলেই লাফিয়ে বাড়ে তার দাম। এমনও খবর, দোকানে একটি বন্দুকের দাম ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা হলে তা দালাল বা মিডলম্যানের কাছে বিক্রি করা হয় অন্তত ৫০ হাজার টাকায়। আবার দালালরা অবৈধ ক্রেতাদের তা বিক্রি করছে ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকায়। আবার একশো টাকার বুলেট চারশো থেকে পাঁচশো টাকায় বিক্রি হয় বাইরে। সম্প্রতি বিবাদী বাগের অস্ত্রের দোকান থেকে অস্ত্র পাচারের কিনারা করতে গিয়ে এই তথ্য পেয়েছেন রাজ্য পুলিশের এসটিএফের গোয়েন্দারাও। ওই দোকানটি পুলিশ 'সিল' করেছে। কিন্তু মধ্য কলকাতার অন্য কোনও দোকান থেকে যে অস্ত্র বা বুলেট পাচার হচ্ছে না, এমন সম্ভাবনা উড়িয়ে দেননি গোয়েন্দা আধিকারিকরাও। সম্প্রতি দক্ষিণ ২৪ পরগনার জীবনতলা থেকে অস্ত্র ও গুলি উদ্ধারের পর এই প্রসঙ্গগুলি এড়ানোর চেষ্টা করেছে বেশিরভাগ অস্ত্রের দোকান।

তবে রাজ্য পুলিশের এসটিএফ আধিকারিকদের কাছেও খবর যে, জাল লাইসেন্সগুলি মূলত তৈরি করে কয়েকটি চক্র। ভিনরাজ্যের ওই চক্রের সদস্যদের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে এই রাজ্যের মিডলম্যানরাও।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • মধ্য কলকাতায় যে লাইসেন্সপ্রাপ্ত অস্ত্রের দোকানগুলি রয়েছে, সেগুলি থেকে শুধু কলকাতা বা রাজ্যের বাসিন্দারা অস্ত্র কেনেন, এমন নয়।
  • এই দোকানগুলি থেকে লাইসেন্স দেখিয়ে বিভিন্ন রাজ্য থেকে অস্ত্র ও বুলেট কিনতে আসেন বহু মানুষ।
  • দোকান কর্তৃপক্ষের মতে, আসলে লাইসেন্সের তথ্যগুলি ভুয়ো হয়।
Advertisement