সুকুমার সরকার, ঢাকা: জঙ্গিপনায় অশান্তি বাঁধাতে না পেরে এবার ধর্মের প্রতি আক্রমণ শুরু করেছে বাংলাদেশের (Bangladesh) মৌলবাদীরা। ফের বন্দরনগর চট্টগ্রামে ভাঙচুর করা হল দেবী সরস্বতীর মাটির মূর্তি। আসন্ন সরস্বতী পুজো উপলক্ষে গড়া প্রতিমাগুলি ভাঙচুর করেছে দুষ্কৃতীরা। বোয়ালখালিতে অন্তত ৩৫টি সরস্বতী প্রতিমা ভাঙা হয়েছে। শুক্রবার গভীর রাতে উপজেলার পূর্ব শাকপুরার ঐতিহ্যবাহী লালার হাট আশ্রয়ণ প্রকল্পের পাশে এই কাণ্ড ঘটে। মৃৎশিল্পী বাসুদেব পাল এসব প্রতিমা বিক্রির জন্য তৈরি করেছিলেন। একশো বছর ধরে ওই এলাকায় প্রতিমা গড়ে আসছিলেন মৃৎশিল্পী বাসুদেব পালের পূর্বপুরুষরা। সেখানে এমন হামলায় স্তম্ভিত এলাকাবাসী। দোষীদের কঠোরতম শাস্তির দাবিতে সরব সকলে।
বাসুদেব পাল জানিয়েছেন, লালার হাটে প্রতি বছর তিনি প্রতিমা গড়ে আসছেন। আগামী ৫ ফেব্রুয়ারি, সরস্বতী পুজো উপলক্ষে প্রতিমাগুলো বানানো হচ্ছিল। উন্মুক্ত স্থানে বাঁশের বেড়ার মাধ্যমে ঘিরে সাদা পর্দায় ঢেকে তৈরি হওয়া প্রতিমাগুলো রাখা ছিল। শনিবার সকালে তাঁর গড়া ৩৫টি সরস্বতী প্রতিমাগুলি ভাঙা অবস্থায় দেখতে পান বাসুদেব। এর বেশিরভাগই অগ্রিম বায়না নেওয়া। আগে কোনও সময় এ ধরনের ঘটনা ঘটেনি বলেই জানান মৃৎশিল্পী।
[আরও পড়ুন: রেল লাইনে রাখা সিমেন্টের পিলারের সঙ্গে সংঘর্ষ রাজধানী এক্সপ্রেসের, অল্পের জন্য রক্ষা]
খবর পেয়ে চট্টগ্রামের অতিরিক্তি পুলিশ সুপার (উত্তর) মহঃ কবীর আহমেদ, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মহঃ আবদুল করিম ও বোয়ালখালি পুজো উদযাপন পরিষদের সদস্যসচিব অমিত লালা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এই ঘটনায় স্থানীয় বাসিন্দা সুদীপ্ত বিশ্বাস বিভু বলেন, ”বাসুদেব পাল আমাদের গ্রামে সরস্বতীর প্রতিমা গড়েন। ছোটবেলায় স্কুলে যাওয়ার পথে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঠাঁই দাঁড়িয়ে থেকে বাসুর প্রতিমা গড়া দেখতাম। সবাইকে বিশ্বাস করে বাসু প্রতিমাগুলো রাখেন উন্মুক্ত স্থানে। কখনো পাহারা দেওয়ার প্রয়োজন মনে করেননি। কে বা কারা রাতের আঁধারে ভেঙে দিয়েছে বাসুর গড়া সরস্বতী প্রতিমা।”
বোয়ালখালি পুজো উদযাপন পরিষদের সদস্য সচিব অমিত লালা বলেন, ”সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এই এলাকায় একটি কুচক্রী মহল পরিকল্পিতভাবে অশান্তি তৈরির ছক করছে। বাসুদেব পালের গড়া প্রতিমা ভাঙচুর করে দীর্ঘদিনের বিশ্বাসকে গুঁড়িয়ে দেওয়া হল। আমরা এর সুষ্ঠু তদন্ত চাই।”
[আরও পড়ুন: অভিমান! সীমিত ওভারের পর এবার টেস্টেও অধিনায়কত্ব ছাড়লেন কোহলি]
থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আব্দুল করিমের কথায়, ”কারখানা বলা হলেও রাস্তার পাশে উন্মুক্ত স্থানে অরক্ষিতভাবে প্রতিমাগুলো রাখা হয়েছিল। কেউ পরিকল্পিতভাবে প্রতিমাগুলো ভেঙেছে বলে মনে হয়নি। আশ্রয়ণ প্রকল্পের ছোট বাচ্চারা হয়তো খেলার ছলে বা ঠেলাগাড়ি, মিনিট্রাকে বাঁশ নেওয়ার সময় অন্ধকারে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তবে আমরা বিষয়টি তদন্ত করে দেখছি।” প্রতিমা রক্ষায় এখানে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হচ্ছে বলে তিনি জানান।
প্রসঙ্গত, গত বছর দুর্গাপুজোর সময় সাম্প্রদায়িক অশান্তিতে তপ্ত হয়ে উঠেছিল বাংলাদেশের কুমিল্লা, নোয়াখালি। দুর্গা মণ্ডপে ঢুকে ‘কোরান’ রাখা এবং তা নিয়ে বিতর্কের জেরে মণ্ডপ ভাঙচুরের মতো ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটে। আক্রান্ত হয়েছিল হিন্দুদের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানও। এরপর সরস্বতী পুজোর আগেও এই ঘটনায় সে দেশের সংখ্যালঘুরা বেশ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।