সদ্য ওটিটি প্ল্যাটফর্ম হইচই-তে মুক্তি পেল ‘ব্রহ্মদৈত্য’ ( Brombhodoitya Film Review)। রহস্য-রোমাঞ্চের মোড়কে ধোপদুরস্ত পশ্চিমী ভূতেদের ভিড়ে কতটা ভয় দেখাল বাঙালি অশরীরী? লিখছেন সন্দীপ্তা ভঞ্জ।
পরিচালক- অভিরূপ ঘোষ
অভিনয়ে- সায়নী ঘোষ, রুদ্রনীল ঘোষ, অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়
সাহেবি ভূত কিংবা পশ্চিমী সংস্কৃতির হ্যালোইন পার্টি নিয়ে আমরা যতটা মাতামাতি করি, আদৌ ভূত চতুর্দশী নিয়ে কি আমাদের ততটা মাথাব্যথা রয়েছে? রিভিউয়ের শুরুতেই এই প্রশ্নটা উত্থাপন করা জরুরী। কারণ, পরিচালক বাংলা লোকগাথার কালজয়ী অশরীরী চরিত্র ব্রহ্মদৈত্যকে নিয়ে ছবির গল্প বেঁধেছেন। সাসপেন্স, হরর, থ্রিল… এসব তো রয়েইছে, কিন্তু এর পাশাপাশি একটি বিষয় উত্থাপন করা খুব দরকার। সেটা হল, হলিউডি হরর জঁরের সিনেমা নিয়ে যতটা উন্মাদনা থাকে দর্শকদের মধ্যে, বাঙলি ভূতবংশ সেখানে অনেকটাই ব্রাত্য নয় কি? সেই আঙ্গিক থেকে পরিচালক অভিরূপ ঘোষের এই প্রয়াসকে সাধুবাদ জানাতেই হয়, যিনি কিনা শৈশবের বইয়ের পাতা থেকে ‘ব্রহ্মদৈত্য’কে তুলে এনে দর্শককে গা ছমছমে অনুভূতি দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। সিনেমা দেখতে দেখতে মাথায় যতই অবাস্তব, অতিপ্রাকৃতিক চিন্তাভাবনা ভিড় করুক না কেন, এটা কিন্তু অস্বীকার করার কোনও জায়গা নেই।
একটা সময়ে শৈশব কাটত ঠাকুমা-দিদিমাদের ঝুলি থেকে পিশাচ, ব্রহ্মদৈত্য, মামদো, শাকচুন্নীর গল্প শুনে। কিন্তু এখন যুগ বদলেছে। ভিডিও গেম, সুপারহিরোদের দৌরাত্ম্যে কোথায় যেন হারিয়ে গিয়েছে ভাতঘুম দেওয়া রাতদুপুরের সেসব বাঙালি ভূতেরা। সেই হারিয়ে যাওয়া শৈশবকেই পরিচালক ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেছেন ‘ব্রহ্মদৈত্য’র হাত ধরে।
[আরও পড়ুন: ‘তাসের ঘর’ রিভিউ: সুখী সংসারের অন্দরে নারীর একাকীত্বের গল্প, অনবদ্য স্বস্তিকা]
আজকের প্রজন্মের কথা মাথায় রেখে সমসাময়িক প্রেক্ষাপটেই ‘ব্রহ্মদৈত্য’র বুনন করেছেন অভিরূপ। সাসপেন্স, হরর, থ্রিলের পাশাপাশি এই ছবিতে রয়েছে এক ইমোশনাল জার্নির গল্প। কখনও কখনও শিশুদের যে বুলিংয়ের শিকার হতে হয়, পরিচালক সায়নী ঘোষের চরিত্রের মধ্য দিয়ে সেই বিষয়টি তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। রহস্য, রোমাঞ্চ, থ্রিল সবই আছে। তবে কোথাও কোথাও সিনেমার চরিত্রাভিনেতাদের আতিশয্যটা চোখে লাগে। আইটি সেক্টরে কর্মরতার জীবনে হঠাৎ আবির্ভাব হয় এক ‘ব্রহ্মদৈত্য’র। যিনি কিনা একেবারে রসিকতার ছলেই ‘ঘোস্টডটকম’ নামক এক ওয়েবসাইট থেকে অর্ডার করে সেই ভূত আনিয়েছেন। তারপর খুন, নানারকম অদ্ভূতুড়ে ঘটনার সাক্ষী হতে হয় তাঁকে। শুরু হয় উপদ্রব, প্রাণের ভয়…! পালিয়ে কী আর ঘাড় থেকে ‘ব্রহ্মদৈত্য’কে নামানো যায়? সেই গল্পই বলে এই ছবি।
মূল চরিত্র সায়নী ঘোষের পাশাপাশি স্বল্প সময়ে তান্ত্রিকের চরিত্রে নজর কেড়েছেন রুদ্রনীল ঘোষও। সবশেষে একটাই কথা, পরিচালকের এই ‘লেটস সেলিব্রেট বাঙালিভূত’ ভাবনাটা কিন্তু বেশ ‘আউট অফ দ্য বক্স’! ভূত, গা ছমছমে অনুভূতির আমেজে ভাসতে হলে ঘর অন্ধকার করে পপকর্ন, কোল্ডড্রিংকস নিয়ে বসতেই পারেন।
[আরও পড়ুন: সড়ক ২’ রিভিউ: গাঁজাখুরি প্লটে সিনেমার ভরাডুবি]
The post ‘ব্রহ্মদৈত্য’ রিভিউ: পশ্চিমী সংস্কৃতির হ্যালোইনের ভিড়ে গা ছমছম করা বাঙালি ভূতের গপ্পো appeared first on Sangbad Pratidin.