সোমনাথ রায়, নয়াদিল্লি: কলকাতা হাই কোর্টের দুই বিচারপতির বেনজির সংঘাতে সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপ। মেডিক্যালে ভর্তি দুর্নীতি মামলায় সিবিআই তদন্ত-সহ গোটা বিচার প্রক্রিয়ায় অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দিল আদালত। আগামী সোমবার মামলার পরবর্তী শুনানি। মামলাকারী, রাজ্য-সহ সব পক্ষকে নোটিস দিতে বলেছে সুপ্রিম কোর্ট। সেই সঙ্গে আপাতত এই সংক্রান্ত গোটা বিচার প্রক্রিয়া স্থগিত থাকবে।
আদালতের তরফে জানানো হয়েছে, আগামী সোমবার মামলার পরবর্তী শুনানি না হওয়া পর্যন্ত কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের সিঙ্গল বেঞ্চ কিংবা বিচারপতি সৌমেন সেনের ডিভিশন বেঞ্চ এই মামলায় কোনও পদক্ষেপ করতে পারবে না। কলকাতা হাই কোর্টের মামলাকারী ঈশিতা সোরেন চাইলে তাঁর মতামত জানাতে পারেন। তিনি চাইলে মামলায় পার্টিও হতে পারেন। রাজ্যের আইনজীবী কপিল সিব্বল সিঙ্গল বেঞ্চের নির্দেশ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি আদালতে বলেন, “ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশিকা কীভাবে খারিজ করে সিঙ্গল বেঞ্চ?” সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে স্পেশাল লিভ পিটিশন জমা দেওয়া হয়েছে।
কেন্দ্রের তরফে জানানো হয়, মেডিক্যাল মামলায় ডিভিশন বেঞ্চে আবেদন নিয়ে তারা লিখিত বক্তব্য জানাতে চায়। সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহেতা বলেন, ‘‘দুই বেঞ্চের কারও বিরোধিতা করা হচ্ছে না। তবে ডিভিশন বেঞ্চে যে আবেদন করা হয়েছে, সে বিষয়ে আমরা আমাদের বক্তব্য লিখিত আকারে জানাতে চাই। কীভাবে নোট ছাড়াই এহেন নির্দেশ দিল ডিভিশন বেঞ্চ?’’ এদিকে, এই মামলায় যুক্ত হতে চেয়ে আইনজীবী অভিষেক মনু সিংভির মারফৎ আবেদন জানিয়েছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। আইনজীবী সিংভি জানান, “বার বার অহেতুক এই মামলায় অভিষেকের নাম উঠেছে। তাই তাঁর (অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়) বক্তব্য শোনা হোক।”
[আরও পড়ুন: রেললাইনেই স্টোভ জ্বালিয়ে রান্না, চলছে পড়াশোনা! ভাইরাল ভিডিও ঘিরে বিতর্ক তুঙ্গে]
উল্লেখ্য, সংরক্ষিত আসনে অসংরক্ষিত পড়ুয়া ভর্তির অভিযোগে কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন এক ছাত্রী। এই মামলার তদন্তভার সিআইডিকে দেওয়া হয়। গত বুধবার এই মামলার শুনানিতে সিআইডির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেন। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে কলকাতা হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হয় রাজ্য। বিচারপতি সৌমেন সেনের ডিভিশন বেঞ্চ রাজ্যের মৌখিক আবেদনের নির্দেশে স্থগিতাদেশ দেয়। সে কথা বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়কে জানান রাজ্যের আইনজীবী। বিচারপতি মামলার লাইভ স্ট্রিমিং অথবা স্থগিতাদেশের কপি দেখাতে বলেন। লিখিত স্থগিতাদেশের কপি দেখাতে পারেননি রাজ্যের আইনজীবী। কোনও মামলার কপি দেখাতে না পারলে কি তা গ্রহণযোগ্য, পালটা প্রশ্ন তোলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। এর পরই সিবিআইকে বিচারপতি সমস্ত নথি নিয়ে তৎক্ষণাৎ এফআইআর করার নির্দেশ দেন।
পরদিন অর্থাৎ বৃহস্পতিবার বিচারপতি সৌমেন সেনের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ করেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁর দাবি, “বিচারপতি সৌমেন সেন স্পষ্টতই একটি রাজনৈতিক দলের হয়ে কাজ করছেন। মামলায় রাজনৈতিক স্বার্থ জড়িত থাকা ব্যক্তির মতো আচরণ করছেন। তাই সুপ্রিম কোর্টের উচিত তাঁর সমস্ত নির্দেশ খারিজ করা।” এমনকি বিচারপতি সেনের ডিভিশন বেঞ্চ যে নির্দেশ দিয়েছিল, তাও তিনি কার্যকর হবে না বলে জানিয়ে দেন। অর্থাৎ এই মামলায় সিবিআইকে তিনি তদন্ত এগিয়ে নিয়ে যেতে বলেন। দুই বিচারপতির এহেন বেনজির সংঘাতে শুক্রবার হস্তক্ষেপ করে সুপ্রিম কোর্ট। প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের বিশেষ বেঞ্চ গঠন করা হয়। ওই বিশেষ বেঞ্চে রয়েছেন বিচারপতি সঞ্জীব খান্না, বিচারপতি বি আর গাভাই, বিচারপতি সূর্যকান্ত, বিচারপতি অনিরুদ্ধ বসু। শনিবার ছুটির দিনে বিশেষ বেঞ্চের শুনানিতে গোটা বিচারপ্রক্রিয়ায় স্থগিতাদেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট।