সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: সাক্ষী মাঠাবুরু। সেই পাহাড়তলিতে ৮৫ ফুটের ঝুলন্ত ক্যানভাস। রং-তুলি দিয়ে সেই ক্যানভাসকে প্রাণ দিলেন রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা ২০ জন শিল্পী। তাদের শিল্পকলায় রঙিন হল পুরুলিয়ার মাঠা বনাঞ্চলের মাঠাবুরু পাহাড়তলি। শনি ও রবিবার পরপর দু'দিন প্রদর্শনী ও কর্মশালায় যেমন ফুটে উঠল অরণ্য বাঁচাও-এর বার্তা। তেমনই নারীর ক্ষমতায়ন।
ফি বছর শহর পুরুলিয়ার কেতকার একটি শিল্প সংস্থা ছবি আঁকার প্রদর্শনী ও কর্মশালা করে থাকেন। কোনও কোনও বার হস্তশিল্পকেও তুলে ধরেন। গতবার টেরাকোটাকে সামনে রেখে দুই বাংলা মিলে মিশে যায়। এবার ষষ্ঠতম বর্ষে প্রকৃতির কোলে ৮৫ ফুটের ক্যানভাস। যেখানে প্রকৃতি মাকে তুলে ধরা হয়।কোন শিল্পী ওই ঝুলন্ত ক্যানভাসে ফুটিয়ে তোলেন একের পর এক গাছ কেটে দেওয়ায়, জঙ্গল সাফ হয়ে যাওয়ায় প্রকৃতি মা কষ্টে রয়েছেন। আবার কোন শিল্পীর ভাবনায় ফুটে ওঠে প্রকৃতি মা একেবারে শীর্ষে বিরাজ করছেন। গাছপালা, পরিবেশকে ধরে রেখেছেন। কেউ আবার ওই ক্যানভাসে রং-তুলিতে বার্তা দিয়েছেন 'গাছ প্রাণের আলো'। সেই সঙ্গে তো রয়েইছে 'একটি গাছ একটি প্রাণ'-র ভাবনা।
প্রতিদিন চিত্র
এছাড়া এই অরণ্য সুন্দরীর কথাও। একইভাবে রবিবার পুরুলিয়া শহরের কেতকায় স্টুডিওতে নারী শক্তির কথা ক্যানভাসে তুলে ধরেন শিল্পীরা। এই কর্মশালা ও প্রদর্শনীর আহবায়ক তথা শিল্পী ভাস্কর ঘোষ বলেন, "ফি বছরই আমরা এই ধরনের অনুষ্ঠান করে থাকি। কয়েক বছর ধরে আমরা স্টুডিওর বাইরে গিয়ে প্রকৃতির কোলে এই ধরনের প্রদর্শনী করছি। গতবার বাঘমুন্ডির টুরগাতে হয়েছিল। এবার মাঠা বনাঞ্চলের মাঠাবুরু পাহাড়ে। শুধু যে শিল্পীদের সাড়া পেয়েছি তা নয়।পর্যটক থেকে সাধারণ মানুষজনও আমাদের এই কর্মসূচিকে আরও রাঙিয়ে তুলেছেন।"
প্রতিদিন চিত্র
পুরুলিয়ায় এখন হালকা শীত। সেই শীতে এই অরণ্যভূমি তার আলাদা রূপ মেলে ধরেছে। আর সেই রূপেই প্রকৃতির কোলে ক্যানভাসে অরণ্য বাঁচানোর বার্তায় নিজের ভাবনা রাঙিয়ে দেন শিল্পীরা। আর তাতে পুরুলিয়ার ল্যান্ডস্কেপ যেন আরও রঙিন হয়ে গেল। তা দেখে অভিভূত মাঠা বনাঞ্চলে আসা পর্যটকরা। দক্ষিণ ২৪ পরগনার সুন্দরবন থেকে সাইকেল করে আসা নিত্যকুমার বসু বলেন, "মাঠাতে এসে অসাধারণ অভিজ্ঞতা হল। শুধু পুরুলিয়ার সৌন্দর্য নয়। এই সৌন্দর্যের মধ্যেই খোলা আকাশের নিচে ছবি আঁকার প্রদর্শনী। যেখান থেকে অরণ্য বাঁচানোর বার্তা।" সত্যি অরণ্যে দাঁড়িয়ে অঙ্কনের মাধ্যমে অরণ্য বাঁচানোর অঙ্গীকার যেন আলাদা বার্তা রাখল মাঠা বনাঞ্চলে। এই কর্মশালায় অংশ নেওয়া সবচেয়ে ছোট শিল্পী দ্বাদশ শ্রেণীর পুরুলিয়া জেলা স্কুল মোড়ের বাসিন্দা প্রগতি কুণ্ডু বলেন, "প্রকৃতির কোলে খোলা আকাশের নিচে এমন ছবি আঁকার অভিজ্ঞতা ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। আমি আমার ক্যানভাসকে প্রকৃতি মাতাকে সামনে রেখে তুলে ধরেছি। যেখানে প্রকৃতি মাতা ভীষণ কষ্টে রয়েছেন একের পর এক জঙ্গল সাফ হয়ে যাওয়ায়।" এই কর্মশালা ও প্রদর্শনীতে কলকাতা, উত্তর ২৪ পরগনা, নদিয়া, হুগলি, পূর্ব বর্ধমান, পশ্চিম বর্ধমান সেই সঙ্গে পুরুলিয়ার শিল্পীরা অংশ নেন।
প্রতিদিন চিত্র
প্রথম দিন ২০ জন শিল্পী তাদের ক্যানভাসকে রাঙিয়ে তুললেও দ্বিতীয় দিন স্টুডিওতে ছিলেন ৩০ জন শিল্পী। এই প্রদর্শনী ও কর্মশালায় নজর কাড়েন বিশেষভাবে সক্ষম শিল্পী অনুষ্কা সুমন। শহর পুরুলিয়ার শরৎ সেন কম্পাউন্ডের এই শিল্পী খোলা আকাশের নিচে ক্যানভাসে যেমন অরণ্য বাঁচানোর বার্তা দেন। তেমনই স্টুডিওতে তুলে ধরেন নারী শক্তিকে। তিনি ভালো করে কথা বলতে না পারলেও তার ভাবনা, তার শিল্পকলা ক্যানভাসকে সাজিয়ে তোলে। যা আলাদাভাবে চোখ টানে এই কর্মশালা ও প্রদর্শনীতে।