সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: কীসের বদলা নিচ্ছে প্রকৃতি? বিশ্বজুড়ে মহামারীর মাঝেই একের পর প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে বিপর্যস্ত বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত। এবার সুমেরু এলাকার বনাঞ্চলে ‘জোম্বি ফায়ার’। পুড়ে খাক হয়ে যাচ্ছে গোটা বনাঞ্চল। আর নির্গত হচ্ছে বিপুল পরিমাণ কার্বন-ডাই-অক্সাইড। যা মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে সুমেরুর বরফের চাদরে।
এ বছরও ভয়ংকর দাবানলের মুখে পড়ছে উত্তর মেরুর সর্বশেষ অঞ্চল। রিপোর্ট বলছে, এই দানবীয় অগ্নিকাণ্ডের কারণে গত বছরের তুলনায় এ বার এক-তৃতীয়াংশ বেশি কার্বন-ডাই-অক্সাইড বায়ুমণ্ডলে নির্গমন হয়েছে। ইউরোপের কোপারনিকাস বায়ুমণ্ডল পর্যবেক্ষণ পরিষেবা (Atmosphere Monitoring Service) বা CAMS জানিয়েছে, ২০২০ সালের প্রথম ছ-মাসে সুমেরু বৃত্ত এলাকায় ২৪৪ মিলিয়ন টন কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গত হয়েছে। ২০১৯ সালে সারা বছরে নির্গত কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ ছিল ১৮১ মিলিয়ন টন। গ্লোবাল কার্বন প্রোজেক্টের সর্বশেষ রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০১৮ সালে ইউরোপের একাধিক দেশ জীবাশ্ম জ্বালানি পুড়িয়ে যে পরিমাণ কার্বন-ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ করেছে, সুমেরুতে এই অগ্নিকাণ্ডের জেরে চলতি বছরে সেই পরিমাণ কার্বন বাতাসে মিশেছে। বেশিরভাগ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে রাশিয়ার সাখা প্রজাতন্ত্রে। সাইবেরিয়ার আগুনের জেরে হাজার হাজার কিলোমিটার জুড়ে ধোঁয়া ছড়িয়েছে। গত বছর শুধু জুন মাসে ১০০টি জায়গায় বনভূমিতে আগুন লেগেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিমে এখনও একাধিক জায়গায় আগুন জ্বলছে। কলোরাডোতে আগুনের তীব্রতা মারাত্মক। এদিকে ক্যালিফোর্নিয়াতেও কিন্তু আগস্টের মাঝামাঝি থেকে অগ্নিকাণ্ডের জেরে কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গমন শুরু হয়েছে। কিন্তু এত ঘনঘন দাবানলের ঘটনা ঘটছে সুমেরু বৃত্তে?
[আরও পড়ুন : পাল্লা দিয়ে গলছে বরফের চাদর, আন্টার্কটিকার পরিস্থিতিতে মাথায় হাত বিজ্ঞানীদের]
উত্তর মেরুর তাপমাত্রা হঠাত্ অনেকটা বেড়ে যাওয়ায় এই ‘জোম্বি ফায়ার’-এর আশঙ্কা বিজ্ঞানীদের ছিলই। কী এই জোম্বি ফায়ার? ভূ-বিজ্ঞানীরা বলছেন, অত্যাধিক গরমে বন জঙ্গলে ‘দাবানল’ লাগে। বেশ কিছু ক্ষেত্রে দেখলে মনে হয় আগুন নিভে গিয়েছে। কিন্তু ভিতরে-ভিতরে তখনও পুড়তে থাকে। অনেক সময় আবার সেই শিখা মাটির নিচেও চলে যায়। রোদ-শীত কিছুতেই এই আগুন নেভে না। এই অবস্থাই হল ‘জোম্বি ফায়ার’।
সুমেরু বৃত্তে এই জোম্বি ফায়ার ভয় ধরাচ্ছে অন্য কারণে। সেখানে কয়েকশো ফুট গভীর বরফে জমাট বাঁধা। প্রতিবছর সুমেরু অঞ্চল গড়ে প্রায় ২১ হাজার বর্গমাইলের বরফ হারাচ্ছে। এ ভাবে চলতে থাকলে ২০৫০ সালের আগেই গ্রীষ্মকালে সুমেরু মহাসাগর সম্পূর্ণ বরফমুক্ত হয়ে পড়বে। ফলে প্রতিবছর অতিরিক্ত কয়েক’শো কোটি টন মিথেন ও কার্বন ডাই-অক্সাইড বাতাসে গিয়ে মিশবে।
[আরও পড়ুন : পিরামিডের দ্বিগুণ আকারের গ্রহাণু ধেয়ে আসছে পৃথিবীর দিকে, জানাল নাসা]
The post সুমেরুতে ‘জোম্বি ফায়ার’, ভয়াবহ পরিমাণে নির্গত হচ্ছে কার্বন, গলছে বরফ appeared first on Sangbad Pratidin.