ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: দু’মাসের লকডাউন কাটিয়ে ঠিক ছিল ২১ মে থেকে একে একে সব দোকান খুলবে। ব্যাপক ক্ষতির মুখে লক্ষ্মীবার বৃহস্পতিবার থেকেই নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখেছিল কলেজ স্ট্রিটের বইপাড়া। বেচাকেনা শুরু হবে। কিন্তু এ যে সর্বনাশের মাথায় বাড়ি।
প্রবল ঝড়বৃষ্টিতে লকডাউন শিথিল হওয়ার দিনেই ভাসিয়ে নিয়ে গেল বইপাড়াকে। বুধবার রাতভর তুমুল দুর্যোগ কাটিয়ে সকাল সকাল কলেজ স্ট্রিটে পা রেখেছিলেন ছোট–বড় ব্যবসায়ীরা। পা রাখার জায়গা মেলেনি। থইথই জলে ততক্ষণে ভাসছে অসংখ্য বই। যাঁদের গুমটি দোকান, তাঁদের তো যা সর্বনাশ হওয়ার হয়েছে। যাঁদের বাঁধানো পাকা ঘর, রেহাই মেলেনি তাঁদেরও। কয়েক ফুট সিঁড়ি ভেঙে উঠে যে দে’জ পাবলিশিংয়ের ঘর, সেই উঁচু দরজা ভেদ করে জল পৌঁছেছে বইখানায়। ভাসিয়ে বের করে এনেছে রাস্তায়। তবে একতলা বা দোতালার উপর যাঁদের প্রকাশনা সংস্থা, তাঁরা এ যাত্রায় রেহাই পেয়েছেন। “সে আর ক’খানা।”- দে’জ পাবলিশিংয়ের কর্ণধার শুধাংশু দে–র আক্ষেপ, “যা আছে, বেশিরভাগেরই সব রাস্তায়। ফল যা হওয়ার তাই হয়েছে।”
[আরও পড়ুন: আমফানের তাণ্ডবের প্রভাব হাই কোর্টেও, ইন্টারনেটের সমস্যায় বন্ধ জরুরি শুনানি]
নতুন বাঁধাই করা বই তো বটেই, নষ্ট হয়েছে একের পর এক ফর্মা। আসবাবের একটা বড় অংশ। আর বইয়ে একবার জল লাগলে তো সেসব আর বাঁচানো যাবে না। ক্ষতির পরিমাণ কি কিছু আন্দাজ করতে পারছেন? “লক্ষের উপর তো বটেই। দুর্যোগ কেটে গেলে তখন আসল হিসাব করতে পারব। এখন ক্ষতি দেখা আর বসে অপেক্ষা করা ছাড়া কিছুই করার নেই।”-বলছেন শুধাংশুবাবু।
একই অবস্থা কফি হাউসের পাশে তাদের দেব সাহিত্য কুটিরেরও স্টলেও। সেখানেও শাটারের নিচ থেকে সব ফর্মা, পাকা বাঁধাই করা বই টেনে বের করেছে জলের ঝাপট। ঝামাপুকুর লেনে তাঁদের অফিস। জায়গাটা সেখানে আরও ঢালু। যার ফলে সেখানেও জল ঢুকে বের করে এনেছে বই। সংস্থার কর্ণধার রূপা মজুমদার জানাচ্ছেন, “এখনই হিসাব কিছুই করা সম্ভব না। বই কিছু বাঁচাতে পারব কিনা সে কথা ভাবছি। যা ক্ষতি হল তা কবে পূরণ সম্ভব হবে কিছু বলা সম্ভব নয়।”
কফি হাউসের আশপাশে, সংস্কৃত কলেজের উলটো দিকে সোজা কলেজ স্কোয়ারের দিকের রাস্তা সবটা জলে ভাসছে। হাঁটুডোবা সেই জলেই ভাসছে মুখ থুবড়ে পড়া বই। সঙ্গে নতুন করে লড়াই শুরুর সব উদ্যম। বাস-ট্রাম-ট্রেন চলছে না বলে যে যেভাবে পারবে ঠিক ছিল এদিনই অল্প করে এসে পৌঁছবে দোকানের কর্মীরা। প্রত্যেকে এলেন। ভয়ে উদ্বেগে কিছুটা সকাল সকালই এলেন। কিন্তু ততক্ষণে জলে ভেসে গিয়েছে লকডাউন শিথিল পরবর্তী নতুন জীবনের সব উদ্যোগ।
[আরও পড়ুন: ‘ন্যূনতম’ থেকে ‘ব্যাপক’! প্রবল সমালোচনার মুখে আমফান নিয়ে নয়া বার্তা রাজ্যপালের]
The post কলেজ স্ট্রিট যেন নদী! আমফানের দাপটে রাস্তায় ভাসল বই appeared first on Sangbad Pratidin.