সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: এই মুহূর্তে তিনিই ভারতীয় কূটনীতির চাণক্য। পাকিস্তান ও চিনের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য কূটনীতির ময়দানে তিনিই হলেন মোদি সরকারের ‘বর্শার ফলা’। ‘তিনি’ হলেন ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এবং প্রাক্তন সফল গুপ্তচর অজিত কুমার দোভাল। ডোকালাম নিয়ে চিনের সঙ্গে চরম সংঘাতের আবহেই দু দিনের বেজিং সফরে গিয়েছেন তিনি। উপলক্ষ হল, ব্রিকস গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলির নিরাপত্তা অফিসারদের সঙ্গে বৈঠক। কিন্তু বেজিং সফরের মূল উদ্দেশ্য হল, ডোকালামে অচলাবস্থা ও চলতি জটিলতা নিয়ে চিনের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার সঙ্গে মুখোমুখি বৈঠক করে একটা কিছু সমাধান সূত্র বের করা। চিনা বিদেশমন্ত্রককে উদ্ধৃত করে চিনা সংবাদসংস্থা জিনহুয়া জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার চিনের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা (এনএসএ) ইয়াং জিয়েচির সঙ্গে ঘণ্টাখানেক বৈঠক হয় ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের।
রুদ্ধদ্বার এই বৈঠকে দ্বিপাক্ষিক, আঞ্চলিক, আন্তর্জাতিক ও বহুপাক্ষিক বিষয়ে তাঁদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। ডোকালাম বা ডোকা লা নিয়েও তাঁদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। ভারতের দাবি ও বক্তব্য পেশ করেছেন দোভাল। তেমনি চিন কী চায় তাও ভারতকে স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন ইয়াং জিয়েচি। কিন্তু তাঁদের মধ্যে কী কী বিষয়ে আলোচনা হয়েছে তা নিয়ে বিস্তারিতভাবে জানায়নি কোনও পক্ষই। কোনও যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনও করেননি দোভাল এবং জিয়েচি। সূত্রের খবর, শুক্রবারও বেজিংয়ে থাকবেন দোভাল। চিনা প্রতিনিধির সঙ্গে তাঁর ফের বৈঠক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এদিন বেজিংয়ে ব্রিকস গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলির (ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চিন ও দক্ষিণ আফ্রিকা) জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টারা বৈঠকে বসেন। সেখানে সন্ত্রাসবাদ দমন, গোয়েন্দা তথ্য আদানপ্রদান, পারস্পরিক কূটনৈতিক সহযোগিতা, আন্তর্জাতিক পরিস্থিত নিয়ে বেশ কিছুক্ষণ আলোচনা হয়। তারপরই দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বসেন দোভাল ও জিয়েচি। প্রসঙ্গত, ভারত-চিন সীমান্ত সমস্যা মোকাবিলায় যে বর্ডার মেকানিজম গঠন করা হয়েছে, দোভাল ও জিয়েচি দু’জনেই সেই মেকানিজমে বিশেষ প্রতিনিধি হিসাবে রয়েছেন। ফলে ডোকালাম নিয়ে একটা সমাধানসূত্র মিলতে পারে বলে আশা করছে দুই দেশের কূটনেতিক মহল।
গত দেড় মাস ধরে সিকিম সেক্টরে দুই দেশের সেনাদের মধ্যে সংঘাতের পরিবেশ বজায় রয়েছে। তার জেরে ভারত জুড়ে চিনা পণ্য বয়কট করার জোরদার প্রচার চলছে। ডোকালাম নিয়ে চলছে তুমুল চাপানউতোর। কিন্তু ডোভালের সফরের আগেই তাল কেটেছে চিনা মিডিয়া। সরকারি মুখপত্র গ্লোবাল টাইমস এবং পার্টির মুখপত্র চায়না ডেইলি অজিত দোভালকে নিয়ে কটাক্ষ করলেও ‘কৌশলগত কারণেই’ ভারত কোনও প্রতিবাদ জানায়নি। তবে কী হচ্ছে তার দিকে কড়া নজর রেখেছে সাউথ ব্লক। দোভালের সফরের আগে চিন সাফ জানিয়েছে, ‘দোভাল চিনে এসে কোনও সুবিধে আদায় করতে পারবেন না। ডোকালাম থেকে ভারতকে আগে সেনা সরাতে হবে। তবেই কোনও আলোচনায় বসবে চিন। সেনা না সরালে ভারতকে যুদ্ধের জন্য তৈরি থাকতে হবে।’ ভারতের সাফ জবাব, “ডোকালাম মালভূমি ভুটানের অবিচ্ছেদ্য অংশ। ভুটানের সার্বভৌমত্ব ও ভূখণ্ড রক্ষায় ভারত দায়বদ্ধ। কোনও চাপের মুখে ভারত কিছুতেই সেনা সরাবে না।”
অন্যদিকে, বৃহস্পতিবার, বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র গোপাল বাগলে বলেন, “চিন-ভারত দুই দেশের কূটনৈতিক চ্যানেল নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে৷ ‘আস্থানা’য় আয়োজিত চিন-ভারত দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে যে কথাবার্তা হয়েছে সেই বিষয়ের উপর জোর দিচ্ছে বেজিং ও নয়াদিল্লি।” তিনি বলেন, “ভারত ও চিন দুইদেশের সম্পর্কের মধ্যে বেশ কয়েকটি স্তর রয়েছে৷ যার মধ্যে বাণিজ্যিক বিষয়টিও রয়েছে। সেটিকেও গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত।” ভারত-চিন দুই দেশের মধ্যে সুসম্পর্ক থাকা এশিয়া মহাদেশ তো বটেই সারা বিশ্বের জন্য ভালো বলেও তিনি এদিন মন্তব্য করেছেন৷ তবে চিন নিয়ে ভারত যে নরমে-গরমে চলবে তা বুঝিয়ে দিয়েছে। গোপাল বাগলে যখন নরম সুরে কথা বলেছেন তখন গলা চড়িয়েছেন সুষমা স্বরাজ। এক প্রশ্নের লিখিত জবাবে বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ রাজ্যসভায় জানান, চিনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে আমি বা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যখনই সুযোগ পেয়েছি তখনই সাফ জানিয়ে দিয়েছি যে, অরুণাচল প্রদেশ হল ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ। সেখানকার বাসিন্দাদের চিন যে স্টেপল ভিসা দিচ্ছে তা ভারত মেনে নেবে না। লাদাখে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা পেরিয়ে চিনা সেনারা যেন অনুপ্রবেশ না করে। একইসঙ্গে আমরা এটাও চিন সরকারকে জানিয়ে দিয়েছি, তিব্বতে বৌদ্ধদের উপর অত্যাচার বন্ধ করতে হবে। তিব্বতিদের উপর অত্যাচার হলে ভারত চুপ করে বসে থাকবে না। ভারত এক চিন নীতিকে সমর্থন করে ঠিকই। কিন্তু তিব্বতে চিনা সেনাদের অত্যাচার হলে প্রতিবাদ করবেই।
The post চিনের চাপে মাথা নোয়াবে না ভারত, ডোকালাম থেকে সরবে না ভারতীয় সেনা appeared first on Sangbad Pratidin.