সারাদিন মোবাইল-কম্পিউটারে মুখ গুঁজে৷ ঘাড়ে, পিঠে যন্ত্রনা৷ শিরদাঁড়া সিধে না থাকলে হতে পারে প্যারালাইসিসও৷ অভ্যাস পালটানোর পরামর্শ দিচ্ছেন ফর্টিস হসপিটালের অর্থোপেডিক সার্জন ডা. রণেন রায়৷
মৌশাখী বোস
স্কুল ব্যাগের ভারে ঝুঁকে হাঁটে পড়ুয়া৷ বিলাসবহুল জীবনযাত্রায় অভ্যস্ত, মাথা নীচু করে মোবাইল-কম্পিউটার ঘাঁটছে সবাই৷ এখনই লাইফস্টাইল পরিবর্তন করুন৷ এইসব বদ অভ্যাস থেকে হতে পারে সার্ভাইকাল বা লাম্বার স্পন্ডিলোসিস৷ যা সঠিক সময় চিকিৎসা না করালে প্যারালাইসিস পর্যন্ত হতে পারে! অতএব মাথা সোজা রাখুন৷ শিরদাঁড়া সিধে করুন৷ না বেঁকে, না ঝুঁকে হাঁটুন গটমটিয়ে৷
সার্ভাইকাল স্পন্ডিলোসিস কী?
কোনও ব্যক্তির ঘাড়ে আর্থাইটিস হলে তাকে সার্ভাইকাল স্পন্ডিলোসিস বলে৷ এক্ষেত্রে ঘাড়ের ছোট ছোট জয়েণ্টগুলির মধ্যে কার্টিলেজ ক্ষয় হয়ে যায়৷ ফলে দুটি হাড়ে ঘষা লেগে ব্যথা হয়৷
কারণ:
- বয়স
- ঘাড়ের উপর অতিরিক্ত চাপ
- দীর্ঘক্ষণ ঘাড় গুঁজে লেখা
- ঘাড়ের এক্সারসাইজ না করা
- অতিরিক্ত ভারী ব্যাগ বা ওজন বহন করা
- ভিটামিন ডি-এর অভাব
কী দেখে বুঝবেন?
- ঘাড়ে অসহ্য যন্ত্রণা
- বেশিক্ষণ লেখাপড়া করলেই যন্ত্রণা বৃদ্ধি
- ঘাড় থেকে ব্যথা হাতে নামে
- হাত ঝিম ঝিম করা
- মাথা ঘোরা
- গা বমি ভাব কিংবা বমি হওয়া
- ভারসাম্যের সমস্যা
লাম্বার স্পন্ডিলোসিস
কোমরে যখন আর্থ্রাইটিস হয় তখন তাকে লাম্বার স্পন্ডিলোসিস বলে৷ এক্ষেত্রে কোমরের জয়েন্টের কার্টিলেজ ক্ষয় হয়ে অসহ্য ব্যথা হয়ে থাকে৷
কারণ:
- বয়সজনিত কারণ
- বিলাসবহুল জীবনযাত্রায় আসক্তি
- দীর্ঘক্ষণ বসে কাজ করা
- অতিরিক্ত ঝুঁকে ভারী জিনিস তোলা
- নিয়মিত শরীরচর্চা না করা
- অতিরিক্ত ওজন
- ভিটামিন ডি ও ক্যালসিয়ামের অভাব
- সঠিক পদ্ধতিতে না বসা
কোমরে আর্থাইটিসের লক্ষণ:
- অসহ্য কোমরে যন্ত্রনা
- ব্যথা সাধারণত কোমর থেকে পায়ের দিকে নামে
- হাঁটলে ব্যথা কিন্তু বিশ্রাম নিলে ব্যথা চলে যাওয়া
- হাঁটতে হাঁটতে হঠাত্ পা আটকে যাওয়া
- পা ঝিনঝিন করা
সার্ভাইকাল স্পন্ডিলোসিসে বিশ্রাম জরুরি৷ লাম্বার স্পন্ডিলোসিসের ক্ষেত্রে প্রাথমিক পরীক্ষা হল এক্স-রে৷ কিন্তু অনেক সময় এক্স-রে’র রিপোর্ট অনুযায়ী রোগীর শারীরিক অবস্থা বোঝা যায় না৷ তাই ঠিক কোন জয়েন্টে কতটা ক্ষয় হয়েছে তা জানতে এমআরআই স্ক্যান করাতে হয়৷
চিকিত্সা
- অসুখ প্রাথমিক পর্যায়ে থাকলে চিকিত্সক সাধারণত কিছু ব্যথার ওষুধ, অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটরি মেডিসিন দিয়ে এবং এক্সারসাইজ করতে বলে চিকিত্সা করেন৷ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ফিজিওথেরাপি এবং আল্ট্রাসাউন্ড থেরাপি কাজে লাগে৷
- কনজারভেটিভ চিকিত্সায় যদি ভাল কাজ না হয় তখন সার্জনকে দেখাতে হবে৷
- স্পাইনাল কিংবা লাম্বার স্পন্ডিলোসিসে ঘাড় বা কোমরের নার্ভের উপর যদি ক্রমশ চাপ পড়ে তাহলে সার্জারি করিয়ে নার্ভের উপর থেকে চাপ সরানো হয়৷ দীর্ঘদিন এই চাপ থাকলে রোগীর প্যারালাইসিস হয়ে যেতে পারে৷
স্পাইনাল, লাম্বার স্পাইন ফিউশন
এক্ষেত্রে জয়েন্টের কার্টিলেজ বেশি ক্ষয়প্রাপ্ত হলে এবং হাড় বেড়ে গেলে সার্জারি করে কেটেমেটাল প্লেট, স্ক্রু এবং রড দিয়ে হাড়ের জয়েন্ট ফিক্সেশন করা হয়৷ একে বলে স্পাইনাল বা লাম্বার স্পাইন ফিউশন৷
সিধে থাকতে
- পর্যাপ্ত পরিমাণ ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে (দুধ জাতীয় খাবার, সবুজ শাক সবজি, ফল)৷
- নিয়মিত শরীরচর্চা করা৷
- ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা৷
- একটানা ১ ঘণ্টার বেশি বসে কাজ না করা৷ মাঝে মাঝেই উঠে একটু পায়চারি করতে হবে৷
- অতিরিক্ত ভারী ব্যাগ বহন না করা৷
- পড়ার টেবিলে গোল হয়ে বসে পড়াশোনা করা উচিত৷
- শক্ত বালিশ ও বিছানা ব্যবহার করা।
- ঘাড়ে বা কোমরে ব্যথা হলে তা ফেলে না রেখে চিকিত্সকের পরামর্শ নিতে হবে৷
যোগাযোগ- ৯০৩৮০৩৮৯০৭
The post শিরদাঁড়া সোজা না রাখলে ঘনাবে বিপদ appeared first on Sangbad Pratidin.