স্টাফ রিপোর্টার: পাটনার পর বেঙ্গালুরুর মাটিতে বিরোধী জোটের দ্বিতীয় বৈঠক। আজ অর্থাৎ সোমবার থেকেই কার্যত তার সূচনা হয়ে যাচ্ছে। আনুষ্ঠানিক বৈঠক ১৮ তারিখ, মঙ্গলবার। সোমবার দুপুরেই বিমানে বেঙ্গালুরুর উদ্দেশে রওনা হচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। তাঁর সঙ্গে এবারও যাচ্ছেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee)। সন্ধে ছ’টার পর বেঙ্গালুরুর তাজ ওয়েস্ট ইন হোটেলে বিরোধী দলের নেতারা ঘরোয়া কথাবার্তায় মিলিত হবেন। তারপর কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধীর (Sonia Gandhi) আমন্ত্রণে ডিনার। সেখানে অবশ্য হাজির থাকবেন না তৃণমূল নেত্রী। তবে তাজ ওয়েস্ট ইন হোটেলের ঘরোয়া আলাপচারিতায় দীর্ঘ দু’বছর পর মুখোমুখি হবেন সোনিয়া ও মমতা। স্বভাবতই সেদিকে বাড়তি নজর থাকছে।
মমতার ফর্মুলা মেনে পাটনায় নীতীশ কুমার (Nitish Kumar) মহাজোটের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। পাটনায় সিদ্ধান্ত হয়েছিল পরের বৈঠক হবে সিমলায়। কিন্তু প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে তা সরিয়ে আনা হয়েছে বেঙ্গালুরুতে (Bengaluru)। এবারের বৈঠকের নেতৃত্বে কংগ্রেস। কিছুদিন আগেই কর্নাটকে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে কংগ্রেস (Congress) ক্ষমতায় এসেছে। বিজেপি প্রবল ধাক্কা খেয়েছে। সেই কারণে কর্নাটকের মাটিতে বিরোধীদের এই বৈঠকের তাৎপর্য অন্যরকম। আর বাড়তি মাত্রা বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধীর উপস্থিতি।
[আরও পড়ুন: ‘বাংলায় বোমা সস্তা, অন্য জায়গায় দামি’, বিস্ফোরক অর্জুন সিং, জানালেন বোমাবাজি বন্ধেরও আহ্বান]
এবারের বৈঠকে আরও ৮টি দল নতুন করে জোটে যোগ দিচ্ছে। অর্থাৎ সব মিলিয়ে ২৪টি দল একজোট হচ্ছে এই বৈঠকে। দীর্ঘ টালবাহানার পর রবিবার আপ ঘোষণা করেছে, তারা বৈঠকে যোগ দেবে। কংগ্রেসের সঙ্গে দিল্লি অর্ডিন্যান্স নিয়ে আপের যে বিরোধ পাটনার বৈঠকে প্রকাশ্যে এসেছিল, তা মিটেছে। পাটনার বৈঠকেই আপ ও কংগ্রেসের ঝগড়া মেটাতে হস্তক্ষেপ করেছিলেন তৃণমূল নেত্রী। এরপরেও মমতা ফোন করে কথা বলেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গের সঙ্গে। মমতার সেতুবন্ধনে ফল মিলেছে।
[আরও পড়ুন: নদিয়ায় চরমে তৃণমূল বিধায়ক ও নেত্রীর কোন্দল, অশান্তিতে ‘ভণ্ডুল’ ২১ জুলাইয়ের প্রস্তুতি সভা]
আগের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছিল জোট গঠন প্রক্রিয়া নিয়ে। কেন বিজেপিকে হারাতে সমস্ত বিরোধী দলকে জোট বাঁধতে হবে, তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছিল। এবারের বৈঠকে নীতি নির্ধারণ নিয়ে আলোচনা হতে পারে। কী ফর্মুলায় জোট হবে, কীভাবে আসন ভাগ হবে, এই আলোচনা হতে পারে। কীভাবে জোট এগোবে, কী হবে জোটের নামকরণ – এসব দ্বিতীয় বৈঠকে ঠিক হবে। যদিও আগেই ঘোষণা হয়েছে যে, রাজ্যে রাজ্যে পরিস্থিতি দেখে আসন ভাগের বিষয়টি চূড়ান্ত হবে। রাজ্যভিত্তিক আলোচনা করে আসন ভাগের বিষয়টি নির্ধারণ হবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন যে, ‘ওয়ান ইজ টু ওয়ান’ লড়াই চাই আর যে যেখানে শক্তিশালী, সেখানে তাকে গুরুত্ব দিতে হবে। কার্যত মমতার ফর্মুলাই আগের বৈঠকে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এই প্রথম বিজেপির বিরুদ্ধে এত বড় এক বৈঠকে রণকৌশল স্থির হতে চলেছে। যার ফলে বিজেপিও খানিকটা চিন্তায়। সেই জন্য তারা এনডিএ শরিকদের সমবেত করে ১৮ তারিখ বৈঠক ডেকেছে যেখানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি উপস্থিত থাকবেন।
এতগুলো বিরোধী দল একজোট। ফলে বিজেপি যে চিন্তায় পড়ে গিয়েছে সেটা স্পষ্টতই বোঝা যাচ্ছে। সবমিলিয়ে আজ সব নজর বেঙ্গালুরুর দিকে। মমতা বিকেলেই পৌঁছে যাবেন। এ রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রচারের সময় কপ্টার দুর্ঘটনায় চোট পেয়েছেন নেত্রী। এখনও তাঁর ফিজিওথেরাপি চলছে, শরীর পুরোপুরি সুস্থ নয়। কিন্তু বিজেপি-বিরোধিতার তাগিদেই তিনি এই বৈঠকে যাবেন এবং সোনিয়া গান্ধীর মুখোমুখি হবেন। মমতা এবং অভিষেক দু’জনেই বলেছিলেন, বিজেপির বিরুদ্ধে এককাট্টা লড়াই চাই। সেদিক থেকে এই বৈঠকের গুরুত্ব অত্যন্ত বেশি।