কৃশানু মজুমদার: তিনি ঘোষিত লিও মেসি-ভক্ত। রবিবারের ফাইনাল হয়তো দেখবেন কাতারের বিমানবন্দরে বসে। মেসির খুব কাছে, তবুও কাছে নয়। এত পর্যন্ত পড়ার পরে অনেকেরই মনে হতে পারে কে তিনি? তিনি জাহানারা আলম (Jahanara Alam)। বাংলাদেশের মহিলা ক্রিকেটার।
এই মুহূর্তে বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড (Bangladesh-New Zealand) সিরিজ চলছে কিউয়িদের দেশে। সেখান থেকেই সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটালকে বাংলাদেশের দ্রতগতির বোলার বলছেন, ”আমরা এখন নিউজিল্যান্ডে রয়েছি। ১৮ তারিখ দেশে ফেরার বিমান। সব ঠিকঠাক থাকলে কাতার বিমানবন্দরে বসেই হয়তো ফাইনাল ম্যাচ দেখবো। আর তা না হলেও বিমানে বসেই খেলা দেখবো। এই ম্যাচ কি ছাড়া যায়?” সেই সময়ে লুসাইল স্টেডিয়ামে মেসি সৃষ্টিসুখের আনন্দে মাতবেন। এমবাপের দৌড় আগুন ধরাবে। কিন্তু মাঠে বসে সেই হাইভোল্টেজ ম্যাচের উত্তেজনা পাবেন না জাহানারা। তিনি বলছেন, ”কাছে এসেও কাছে নয়।”
[আরও পড়ুন: ‘দলের স্বার্থেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম’, চাকরি ছেড়ে বিস্ফোরক রোনাল্ডোর কোচ]
কিউয়ি মহিলাদের বিরুদ্ধে তিন ম্যাচের ওয়ানডে ও তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলতে বাংলাদেশ দল গিয়েছে মার্টিন ক্রোর দেশে। শনিবার সিরিজের শেষ ওয়ানডে ম্যাচ। নিউজিল্যান্ড থেকে জাহানারা বলছেন, ”কাতার ও নিউজিল্যান্ডের সময়ের বিস্তর ব্যবধান। যে সময়ে বিশ্বকাপের ম্যাচগুলো হচ্ছে, তা নিউজিল্যান্ডের সময়ে ভোর চারটে। আমাদের ক্রিকেট দলের অনেকেই ভোর চারটেয় উঠে খেলা দেখেছে। সেই খেলা নিয়ে আমরা ব্রেকফাস্ট টেবিলে বসে আলোচনা করেছি। আমাদের দলে বিভিন্ন দেশের সমর্থক রয়েছে। কেউ উরুগুয়ের, কেউ ফ্রান্স, কেউ ব্রাজিল আবার কেউ আর্জেন্টিনার। মেসিরা ফাইনালে পৌঁছনোয় অনেকেই শিবির বদলাচ্ছে। আর্জেন্টিনার হয়ে গলা ফাটানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ওরা।”
২০০৬ সাল থেকে বিশ্বকাপের মহামঞ্চে লিও মেসি (Lionel Messi)। এবার নিয়ে ‘এলএম ১০’-এর এটা পঞ্চম বিশ্বকাপ। শেষ বিশ্বকাপে এসে কি কাপ উঠবে মহানায়কের হাতে? জাহানারা বলছেন, ”আমার বিশ্বাস. আমার মন প্রাণ বলছে মেসিই এবার বিশ্বকাপ জিতবে। যে ভাল মানুষ, ভাল খেলোয়াড়, তার জন্য সর্বশক্তিমান ঈশ্বর অন্য এক চিত্রনাট্য আগাম লিখে রাখেন। মেসির আরও আগে হয়তো বিশ্বকাপ জেতা উচিত ছিল। কিন্তু এবার আরও একবার সুযোগ এসে গিয়েছে তাঁর সামনে।”
আর্জেন্টিনার জাতীয় দলের জার্সি পরে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছবি পোস্ট করেছেন জাহানারা। কিন্তু দেশের হয়ে নিউজিল্যান্ডে খেলতে যাওয়ায় সেই নীল-সাদা জার্সি সঙ্গে আনা হয়নি। বাংলাদেশের মহিলা দলের তারকা ক্রিকেটার বলছেন, ”মেসি চ্যাম্পিয়ন হলে আমি আর্জেন্টিনার জার্সি পরে বন্ধুদের সঙ্গে চুটিয়ে আড্ডা দেব। সেই আড্ডায় স্পেশ্যাল কিছু খাবারও থাকবে। শেষটা রাঙিয়ে দেওয়ার দারুণ সুযোগ এখন মেসির সামনে।”
বিশ্বকাপ জেতা ফুটবলের শেষ স্টেশন। মেসির সেই স্টেশনে পৌছতে আর এক ধাপ বাকি। জাহানারা বলছেন, ”মেসিকে দেখে শচীন তেন্ডুলকরের কথা মনে পড়ছে। উনিও শেষ বিশ্বকাপে এসে সাফল্য পেয়েছিলেন। শচীন-স্যর মানুষ হিসেবে অনেক বড়, কঠিন পরিশ্রম করেছেন, ক্রিকেট মাঠে ছড়িয়ে দিয়েছেন কত মণিমুক্তো। মেসিও তেমনই। মানুষ হিসেবে খুব ভাল। এরকম একজন ক্রীড়াব্যক্তিত্বের হাতেই তো বিশ্বকাপ দেখতে চান সবাই। আমিও চাই।”
মেসির নাম অনুরণিত হচ্ছে তাঁর হৃদয়ে। একই সঙ্গে ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর জন্য মনে ঝড় ওঠে তাঁর। মেসি-রোনাল্ডো ফুটবল বিশ্বের হিরে-জহরত। বিশ্বকাপ জেতার স্বপ্নে বিভোর মেসি। রোনাল্ডো আগেই চোখের জলে বিদায় নিয়েছেন। জাহানারা বলছেন, ”মেসির মতোই রোনাল্ডোও মেগাস্টার। ফুটবল মাঠে কত জাদু ছড়িয়ে দিয়েছেন, তার ইয়ত্তা নেই। রোনাল্ডো বিদায় আমারও চোখে জল এনেছে। শূন্য হাতে ওকে ফিরিয়ে দিয়েছে বিশ্বিবকাপ।”
বিশ্বকাপ পৌঁছে গিয়েছে শেষ প্রান্তে। বুয়েনোস আইরেসে কাউন্টডাউন শুরু হয়ে গিয়েছে। ফ্রান্স টানা দু’ বার বিশ্বকাপ জেতার সন্ধিক্ষণে। বাংলাদেশের আর্জেন্টিনা-ভক্তরাও মেসিদের জন্য প্রার্থনা শুরু করে দিয়েছেন। মেসির কাছে জাহানারার অনুরোধ, ”মেসি, আপনি আমাদের সমৃদ্ধ করেছেন। সবুজ মাঠের আনাচকানাচে কত ইতিহাসই না তৈরি করেছেন। আরও একবার এমন ইতিহাস লিখে যান, যা কোনওদিনই আমাদের হৃদয় থেকে মুছে যাবে না।”
বাংলাদেশের মহিলা-ক্রিকেট তারকার কথা শুনে মনে পড়ছিল সেই বিখ্যাত লাইন, সেই ধন্য নরকুলে, লোকে যারে নাহি ভুলে। মেসিকে কি আদৌ ভোলা সম্ভব!