সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: গত সপ্তাহেই জানা গিয়েছে, ভারতের প্রথম ত্রৈমাসিকে জিডিপি (GDP) সংকুচিত হয়েছে ২৩.৯ শতাংশ হারে। আর্থিক বৃদ্ধির হার আরও নামতে পারে বলে এবার সতর্ক করে দিলেন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর রঘুরাম রাজন (Raghuram Rajan)। জিডিপির এই চিত্র ‘উদ্বেগজনক’ বলে উল্লেখ করে রাজন একটি প্রতিবেদনে লিখেছেন, সরকার ও তার আমলারা যেন আত্মসন্তুষ্টিতে না ভোগে। বর্তমান পরিস্থিতিতে ভয়ের যথেষ্ট কারণ আছে। এই ‘অবসন্ন, ঝিমিয়ে পড়া’ অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার জন্য এখনই ত্রাণ প্যাকেজ ঘোষণা করতে হবে। না হলে অর্থনীতির বিকাশ ধাক্কা খাবে ভীষণভাবে। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নরের ধারণা, সরকার এই পরিস্থিতিতে গুটিয়ে খোলসের ভিতরে আশ্রয় নিয়েছে।
ওই প্রতিবেদনে রিজার্ভ ব্যাংকের (Reserve Bank of India ) প্রাক্তন গভর্নর লিখেছেন, বৃদ্ধির হার দেখে প্রত্যেককে সতর্ক হতে হবে। তাঁর মতে করোনায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দু’টি উন্নত দেশের চেয়ে ভারতের অবস্থা খারাপ। সেসব দেশেও সংকোচন হয়েছে। আমেরিকা ও ইতালির সঙ্গে তুলনা করে রঘুরাম রাজন লিখেছেন, ‘ভারতে মহামারী এখনও বেড়ে চলেছে। তাই বিভিন্ন ক্ষেত্রে খরচ করছেন না মানুষ। বিশেষত রেস্তোঁরার মতো যে সমস্ত ক্ষেত্রে পারস্পরিক সংস্পর্শের সম্ভাবনা বেশি এবং এর সাথে যুক্ত কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রগুলি ভাইরাসের সংক্রমণ কম না হওয়া পর্যন্ত ঝিমিয়েই থাকবে। সরকারের দেওয়া ত্রাণ প্যাকেজ এক্ষেত্রে আরও গুরুত্বপূর্ণ।’ সরকার যে ২০ লক্ষ কোটির আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা করেছে, সেটা যথেষ্ট নয় বলেও মনে করেন অর্থনীতিবিদ রাজন।
[আরও পড়ুন: দেশে একধাক্কায় অনেকটা কমল দৈনিক করোনা আক্রান্তের সংখ্যা, বাড়ছে সুস্থতার হার]
বর্তমানে শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রাজনের মতে, ‘ভারতের অর্থনীতি উঁচু হারে বিকশিত হওয়া চাই। তবেই তরুণ প্রজন্মের আশা-আকাঙ্খা মেটানো যাবে। শত্রুভাবাপন্ন প্রতিবেশীকেও পরাস্ত করা যাবে।’ তাঁর মতে, সরকার ও তার আমলারা যথেষ্ট পরিশ্রমী। যথেষ্ট চেষ্টা করছে। কিন্তু তাঁরা যেন আত্মসন্তুষ্ট না হন। বর্তমান পরিস্থিতিতে উদ্বেগের যথেষ্ট কারণ আছে। সদর্থক, ইতিবাচক কাজ করতে হবে। সরকারের সমালোচনা করে অর্থনীতিবিদ রাজন বলেন, ‘সরকার এখন অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার জন্য বড় পদক্ষেপ করছে না। তারা সম্পদ জমিয়ে রাখছে। ভাবছে, আগামী দিনে বড় উৎসাহদান প্রকল্প ঘোষণা করা যাবে। এই কৌশলে কাজ হবে না। রাজন লিখেছেন, ‘আপনি যদি অর্থনীতিকে রোগীর সঙ্গে তুলনা করেন, তাহলে তার শরীরে একটাই ওষুধ প্রয়োগ করা যেতে পারে, তা হল সরকারি সাহায্য বা আর্থিক প্যাকেজ। তবেই সে সুস্থ হয়ে উঠবে। রোগের সঙ্গে লড়াই করতে পারবে। এই সাহায্য না পেলে অনেক পরিবার অভুক্ত থেকে যাবে। তাঁরা সন্তানদের আর স্কুলে পাঠাবেন না। তার বদলে কাজে বা ভিক্ষা করতে পাঠাবেন। ঘরের সোনাদানা বন্ধক রাখবেন। ঋণশোধ, ঘরভাড়া দিতে পারবেন না। আর্থিক সাহায্য না পেলে ছোট-মাঝারি সংস্থার হাল হবে শোচনীয়। কর্মীরা বেতন পাবেন না। মালিক ঋণ শোধ করতে পারবেন না। হয়তো সংস্থা চিরতরে বন্ধ করে দিতে বাধ্য হবেন।’ রাজনের মতে, আর্থিক সাহায্য একটা ওষুধের মতো। যদি রোগী ঝিমিয়ে থাকে, তাতে সাহায্য হবে। কিন্তু অবস্থা খারাপ হয়ে গেলে, রোগী মরণাপন্ন হলে ওষুধ কাজে লাগে না।
[আরও পড়ুন: বিফলে সাধুর মায়ের আবেদন, পালঘর মামলার তদন্তভার সিবিআইকে দিতে নারাজ মহারাষ্ট্র সরকার]
রাজন বলছেন, ‘সরকারের উচিত বুদ্ধি করে খরচ করা, যাতে অর্থনীতিতে সদর্থক গতি আসে। সরকারের এমন সব পদক্ষেপ করা উচিত যাতে অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়। বাড়তি, অপ্রয়োজনীয় খরচ যাতে না হয়। প্রথম দিকে তেড়েফুঁড়ে কাজ করলেও দুর্ভাগ্যজনকভাবে মনে হচ্ছে, সরকার যেন একটা খোলসের মধে্য ঢুকে গিয়েছে।’
The post ‘বড় পদক্ষেপ করছে না কেন্দ্র, চাই আর্থিক প্যাকেজ’, অর্থনীতির জন্য দাওয়াই রঘুরাম রাজনের appeared first on Sangbad Pratidin.