shono
Advertisement

কাচের জারে ভাসমান সিরিয়াল কিলারের মাথা! দু’শো বছরের ওপারে লুকিয়ে কোন রহস্য?

হিমশীতল চাহনির আড়ালে নৃশংসতার বীভৎস কাহিনি!
Posted: 11:05 PM Dec 25, 2020Updated: 12:11 AM Dec 26, 2020

বিশ্বদীপ দে: মানুষের মনের মধ্যে কোথায় রয়েছে হিংসার অন্ধকার রাজ্য? কী করে একজন মানুষকে খুন করার পর রিনরিনে সুখের ঢেউ বয়ে যেতে পারে কারও মনে? এনিয়ে চিন্তাভাবনার শেষ নেই আজও। আর সেই চিন্তারই ফসল কাচের জারে ডুবিয়ে রাখা একটা ধড়হীন মাথা! যার বয়স হতে চলল প্রায় দু’শো বছর। সেই কবে ১৮৪১ সালে যার মৃত্যু হয়েছে। তবু আজও সে মানুষের নৃশংসতার জলছাপ বয়ে বেড়াচ্ছে তার হিমশীতল চাহনির মধ্যে। কিন্তু কেন? কেন এভাবে রেখে দেওয়া হয়েছে এই মাথাটি? কী অপরাধ করেছিল সে?

Advertisement

আধুনিক সময়ে ‘সিরিয়াল কিলার’ (Serial killer) ব্যাপারটা আর কাউকে বুঝিয়ে দিতে হবে না। থ্রিলার সিনেমা, ওয়েব সিরিজ, উপন্যাস ছুঁয়ে যাওয়া মানুষেরা সকলেই জানেন, অকারণে একটা নির্দিষ্ট পারম্পর্য মেনে খুনের পর খুন অনায়াসে করে যেতে পারে যারা, তারাই সিরিয়াল কিলার। জারে ডুবিয়ে রাখা মাথাটা তেমনই এক ভয়ানক সিরিয়াল কিলারের। তার নাম দিয়েগো আলভেজ (Diogo Alves)। স্পেনে জন্ম নেওয়া পর্তুগিজ (Portugal) আলভেজের দু’হাতে মাখানো রয়েছে প্রায় সত্তরজন নিরীহ মানুষের রক্ত। অন্ধকার রাতে যাদের সামনে সে আচমকাই আবির্ভূত হয়েছিল সাক্ষাৎ মৃত্যু হয়ে।

‌[আরও পড়ুন:‌ OMG! স্লেজ গাড়ি বাদ দিয়ে প্যারাসুটে চেপে আসছেন সান্তা, কিন্তু মাঝপথে এ কী বিপত্তি!]

শুরু থেকে বলা যাক। ১৮১০ সালে জন্ম আলভেজের। কৃষক পরিবারের ছেলে আলভেজকে সংসারের হাল ধরতে খুব অল্পবয়সেই স্পেনের গালিসিয়া থেকে পর্তুগালের লিসবনে আসতে হয়েছিল। তখন সে মাত্র ১৯। কিন্তু স্বল্পশিক্ষিত এক ছোকরাকে কে আর কাজ দেবে? তবে কাজ সে পেয়েছিল। মূলত ধনী বাড়িতে ভৃত্যের কাজ। বা ওই ধরনেরই ফাইফরমায়েশ খাটার কাজ। নানা জায়গায় এলোমেলো ভাবে রুটিরুজির সন্ধান করতে করতে ক্রমে বখে যাওয়া শুরু। মদ ধরল সে। সঙ্গে জুয়া। বাড়িতে চিঠি লেখা ততদিনে বন্ধ। এক ছিন্নমূল মানুষ তখন আলভেজ। মাথার মধ্যে বিনবিনিয়ে ঘুরতে শুরু করেছে অপরাধের পোকা। সে ধরেই নিয়েছে, অপরাধের জীবন ঢের ঢের লাভজনক। অনেক সহজেই পকেট ভরে ওঠে যে!

তবে কি শুধুই পকেট ভারী হওয়া? তা নয় আসলে। তার অপরাধের ফিরিস্তি শুনলেই বোঝা যাবে মানুষকে কীটের মতো দলে মেরে ফেলতে দারুণ আমোদ হত তার। সে কাজ করত একটা বাড়িতে। আসলে সবটাই বাহানা। কারণ সেই বাড়ির একদম কাছে ছিল অ্যাকুইডাক্ট। মানে এমন এক দীর্ঘ জলাধার, যাকে সেতু হিসেবেও ব্যবহার করা হত। সেই সেতুর পাশেই রাতের দিকে ওত পেতে থাকত আলভেজ। ওখান দিয়েই বাড়ি ফিরত নিরীহ কৃষকরা। একা একা বাড়ি ফেরা সেই সব কৃষকদের উপরে হানা দিয়ে টাকাপয়সা সব ছিনতাই করে নিত সে। কিন্তু সেখানেই শেষ নয়। সেই মানুষটিকে মেরে আহত করে তারপর তাকে ২১৩ ফুট লম্বা সেতুর উপরে নিয়ে যেত। আর সেখান থেকে ছুঁড়ে ফেলে দিত অন্ধকার নদীর জলে। ১৮৩৬ সাল থেকে শুরু এই হত্যালীলার। তা চলে ১৮৩৯ সাল পর্যন্ত। এই তিন বছরে প্রায় সত্তর জনকে একই কায়দায় খুন করেছিল আলভেজ। বয়স তখনও তিরিশ ছোঁয়নি তার!

 [আরও পড়ুন:‌ মাত্র ৫ দিনের ব্যবধানে দু’‌জনকে বিয়ে! প্রতারণা সামনে আসতেই বেপাত্তা ইঞ্জিনিয়ার]

স্থানীয় পুলিশ অবশ্য বুঝতে পারেনি ব্যাপারটা। তারা ধরেই নেয় একের পর এক কৃষক আত্মহত্যা করতেই লাফ মেরেছে নদীর জলে। যে কারণে পরে ওই সেতুর উপর দিয়ে যাতায়াত বন্ধও করে দেওয়া হয়। যদিও ততদিনে ওই সেতুর কাছে থাকা স্থানীয় মানুষের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করছে অন্ধকার ফুঁড়ে বেরিয়ে আসা এক ভয়ংকর খুনির আবছায়া মিথ। অবশ্য পুলিশ সেসবে পাত্তা দেয়নি।

বেঁচে যায় আলভেজ। কিন্তু একবার খুনের নেশায় মেতে উঠলে সহজে নিস্তার নেই। এবার সে তৈরি করে ফেলে এক ডাকাতের দল। শুরু হয় লুঠতরাজ। তবে এভাবে আর বেশিদিন চলল না। আসলে একদিন না একদিন তো শেষ হতই ব্যাপারটা। এক ডাক্তারের বাড়ি ডাকাতি করতে গিয়ে চারজনকে খুন করার সময় সেখানে হানা দেয় পুলিশ। ব্যাস। আলভেজের অপরাধের ডায়রির সেটাই শেষ পাতা। বাকি যে ক’টা দিন সে বেঁচেছিল, তা বন্দি হয়েই। এরপর আদালতের নির্দেশে মৃত্যুদণ্ড হয় তার। ১৮৪১ সালেই পৃথিবী থেকে মুছে গেল আলভেজ। রয়ে গেল এক অমানুষিক খুনির গা ছমছমে কাহিনি।

কিন্তু না। মুছে তো যায়নি আলভেজ। আজও সে রয়ে গেছে এই আধুনিক সময়ের বুকে। সিরিয়াল কিলারের কথা উঠলেই ‘জ্যাক দ্য রিপার’-কে মনে পড়তে বাধ্য। কিন্তু সেক্ষেত্রে অপরাধীর কোনও সন্ধান মেলেনি। নানা জনে নানা কথা বললেও রক্তমাংসের জ্যাক চিরকালের জন্য অধরাই রয়ে গিয়েছে। এর ঠিক উলটো পিঠে থাকবে দিয়েগো আলভেজ। অধরা না হয়েই যেন সে রহস্যময় হয়ে উঠল আরও বেশি। সেই সময়ের বিজ্ঞানীরা তার মাথাটা কেটে ডুবিয়ে রেখে দিয়েছিলেন ফরম্যালিনের মধ্যে। উদ্দেশ্য, সেটার নিরীক্ষণ করে মানুষের খুনি প্রবৃত্তিকে খুঁজে বের করা। ঠিক যেমন ১৯৫৫ সালে অ্যালবার্ট আইনস্টাইনের মৃত্যুর মাত্র কয়েক ঘণ্টা পর তাঁর মস্তিষ্ক সংরক্ষণ করে রেখেছিলেন বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানী ও গবেষক টমাস হার্ভে। তবে আইনস্টাইনের ক্ষেত্রে বিচার্য ছিল তাঁর অসাধারণ মেধার উৎস খোঁজা। আর আলভেজের ক্ষেত্রে মানুষের মধ্যে লুকিয়ে থাকা দানবের হালহদিশ। 

তেমন কিছু অবশ্য বুঝে ওঠা হয়নি তাঁদের। অনেক চেষ্টা করেও আলাদা কোনও সত্যের খোঁজ মেলেনি আলভেজের কাটা মাথা থেকে। কিন্তু সেই থেকে লিসবন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাগারে জারের ভিতর দিয়ে তাকিয়ে রয়েছে আলভেজ। আজও যাকে দেখলে শিউরে ওঠে পড়ুয়ারা। ভিড় জমান ট্যুরিস্টরা। আর ভাবতে চেষ্টা করেন ওই শীতল চাহনির আড়ালে কোথায় লুকনো ছিল নৃশংসতার রাক্ষুসে প্রবৃত্তি? দু’শো বছর ধরে সেই প্রশ্নের উত্তর মেলেনি।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement
toolbarHome ই পেপার toolbarup অলিম্পিক`২৪ toolbarvideo শোনো toolbarshorts রোববার