সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: ফের বেফাঁস রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari)। জঙ্গলমহল পুরুলিয়ায় প্রায় ১০ বছর ধরে থাকা রাজ্য পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর (SI) পদমর্যাদার আধিকারিকদের ভোটের সময় ভিনরাজ্যে ‘গ্যারেজ’ করার হুঁশিয়ারি দিয়ে বিতর্কে জড়ালেন তিনি। বৃহস্পতিবার পুরুলিয়ার (Purulia) জয়পুরের আরবিবি স্কুল ময়দানে পুরুলিয়া সাংগঠনিক জেলার বর্ধিত কর্মী সভা থেকে এই হুঁশিয়ারি দেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা। ওই কর্মী সভার অধিকাংশ সময় জুড়ে রাজ্যের বিরুদ্ধে তোপ দেগে উত্তেজিত হয়ে পুলিশকে নিয়ে বেফাঁস মন্তব্য করে বসেন। যা নিয়ে পুলিশ মহলে ব্যাপক বিতর্ক তৈরি হয়েছে। বিরোধী দলনেতার এমন বক্তব্যে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি পুরুলিয়া জেলা তৃণমূল (TMC) নেতৃত্ব।
বৃহস্পতিবার কর্মিসভা থেকে ঠিক কী বললেন শুভেন্দু? তাঁর কথায়, “১০ বছর ধরে পুরুলিয়ায় পুলিশের বেশ কিছু সাব-ইন্সপেক্টর রয়েছেন। যারা টাকা তুলছে আর ভোট লুট করছে। তাদের তালিকা আমরা তৈরি করেছি। ভোটের আগে এদের রাজ্যের বাইরে গ্যারেজ করব।” ওই তালিকার কয়েকটি নাম এদিন পড়েও শোনান বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু। ওই বক্তব্যের প্রেক্ষিতে পুরুলিয়া জেলা তৃণমূলের সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়া বলেন, “অভিযোগ একেবারেই ভিত্তিহীন। ভিন রাজ্যে পাঠিয়ে দেওয়ার যে কথা বলেছেন তেমন কোনও বিধি নেই।”
[আরও পড়ুন: রেশন দুর্নীতি মামলা: ধান কেনাবেচায় ১ কোটি লেনদেন! অরণ্যভবনে ইডি অভিযানে উদ্ধার নথি]
এদিন কর্মী সভার প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত রাজ্য সরকার, সেইসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও নাম না করে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কেই আক্রমণ করে যান। ফলে কর্মীরা তেমন কোনও নির্দিষ্ট বার্তা না পেয়ে কার্যত হতাশ হয়ে পড়েন। পুরুলিয়া জেলা বিজেপির তথ্য অনুযায়ী, এই সাংগঠনিক জেলায় ১,৮৮২টি বুথ রয়েছে। কিন্তু সমস্ত বুথে বুথ কমিটি গড়তে পারেনি বিজেপি (BJP)। তা এদিনের কর্মী সভায় স্বীকার করে নিতে বাধ্য হন বিরোধী দলনেতা।
বিজেপির পুরুলিয়া জেলা সভাপতি বিবেক রাঙ্গা বলেন, “প্রায় ১৫০০ বুথে দশজন করে কর্মী এখানে এসেছেন। ওই বুথগুলো আমাদের সক্রিয় রয়েছে।” অথচ বিরোধী দলনেতার তথ্য অনুযায়ী, এই সাংগঠনিক জেলায় তাদের ১৭০০টি বুথ কমিটি তৈরি হয়েছে। তথ্যের এই ফারাক থেকেই স্পষ্ট জেলায় গেরুয়া সংগঠনের হাল। তবে এদিনের কর্মিসভা থেকেই শুভেন্দু নতুন বছরে এই জেলাকে গেরুয়া রঙে মুড়ে ফেলার নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, “আগামী ৬ জানুয়ারি আমি ঝালদায় আসব। তারপর ২৫ শে জানুয়ারি পাড়ায়। যে কথাগুলো এখানে বলতে পারলাম না। সেই কথা ওই দুই জায়গায় বলব।”
[আরও পড়ুন: বইমেলায় পার্কিং সমস্যা মেটাতে নয়া উদ্যোগ, ছুটির দিনে বিশেষ ব্যবস্থা]
এদিকে লোকসভা ভোট (Lok Sabha Election) আসতে আবারও তিনি দলের মত করেই দেশপ্রেম আবেগ উসকে দেন। তাঁর কথায়, “আফগানিস্তান, ইউক্রেন, ইজরায়েল, প্যালেস্টাইনে যে রক্তপাত হচ্ছে। তা এদেশের মানুষ চান না। দেশকে সুরক্ষিত রাখতে তাই মোদিকেই চান।” অন্যান্য বারের মতো এবারও পুরুলিয়ায় এসে প্রাক্তন মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো, প্রাক্তন সভাধিপতি তথা পুরুলিয়া জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায় ও বাঘমুন্ডির বিধায়ক সুশান্ত মাহাতোকে আক্রমণ করেন। সেই আক্রমণের তালিকায় এদিন যুক্ত হন তৃণমূলের জেলা সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়াও। এদিনের সভায় ছিলেন দলের রাজ্যের সাধারণ সম্পাদক তথা পুরুলিয়ার সাংসদ জ্যোতির্ময় সিং মাহাতো, দলের জেলা সভাপতি বিবেক রাঙ্গা, বিভাগ কনভেনার বিদ্যাসাগর চক্রবর্তী-সহ একাধিক বিধায়ক।