সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: কোভিডের সময়ে বাবাকে হারিয়েছেন স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়। বছর চারেক ধরে সেই স্মৃতি আগলেই জীবনযুদ্ধে লড়ে যাচ্ছেন অভিনেত্রী। প্রতিবারের মতো এবারেও বাড়িতে পুজো। কিন্তু বাবা নেই। মাথার উপর থেকে ছাতাটা সরে গেলে জীবনের বহু সমীকরণ বদলে যায়। স্মৃতি আঁকড়ে কেটে যায় বাকিটা জীবন। স্বস্তিকারও তাই। উৎসব-অনুষ্ঠান, নতুন ছবির রিলিজ, জীবনের প্রতিটা পদে বাবা সন্তু মুখোপাধ্যায়কে মিস করেন তিনি। পুজোর মরশুমেও অভিনেত্রীর পোস্টে মনখারাপের ভিড়।
বাবা যেভাবে স্টুডিও থেকে কাজ সেরে ফিরলে বাড়িময় তাঁর গন্ধ ছড়িয়ে পড়ত, শনিবার রাতে সেরকমই এক অনুভূতি হল স্বস্তিকার। সেই স্মৃতির সরণি বেয়ে কলম ধরলেন স্বস্তিকা। অভিনেত্রী তাঁর পোস্টে লিখেছেন, "কাল রাতে ঘুমটা হঠাৎ ভেঙে গেল। সেই চেনা গন্ধটা নাকে আসতেই উঠে পড়লাম। গন্ধটা পেয়ে জেগে গিয়েছিলাম, নাকি জেগে গিয়ে গন্ধটা পেলাম, ঠিক ঠাহর করতে পারলাম না। বাবা স্টুডিও থেকে বাড়ি ফিরলেই বাড়িটা যেমন ব্যস্ত হয়ে উঠত, কাল রাতে ঠিক তেমনটা হল। আর সেই ঘাম, পারফিউম, ইউ ডি কোলন মেশানো গন্ধ টা বাড়িময় ঘুরপাক খাচ্ছিল। আমি বালিশে মাথা রেখেই ভাবছি, আচ্ছা বাবা কি সত্যি বাড়ি ফিরেছে? মাসিকে ডেকে বলল, কিরে মামনী মাটিটা কেমন বালি বালি হয়ে আছে, সন্ধেবেলা ঠিক করে মুছিসনি? বাড়িতে ঘট বসে গেছে, আবার ঝাঁট দিসনি তো?"
স্মৃতি হাতড়ে স্বস্তিকা লিখলেন, তারপরই বাথরুম এ ঢুকলো বাবা, রোজ যেমন যেত পা ধুতে। জল পড়ার আওয়াজও পেলাম। ফুলকি পায়ে পায়ে ঘুরছিল বলে আবার ফুলকি কেও স্বভাববশত কত কিছু বলল। এমনিতে ফুলকি গলা দিয়ে নানান স্বর বের করে আদুরে ভাসায় কথা বলে, কিন্তু কাল রাতে বলল না, বা বলেছে হয়তো আমি শুনতে পেলাম না। আমি শুধু চেয়ে চেয়ে বাবার গলা টাই শুনছিলাম। গাঢ় গেরুয়া রং এর পাঞ্জাবিটা পরে ছিল বাবা। বাথরুম থেকে বেরিয়ে, দাঁড়া একটু বসতে দে, মামনী আমার বড় গ্লাস টায় জল দে তো, বলে নিজের ঘরে চলে গেল। আমি সেই একইভাবে ডান পাশ ফিরে বালিশে মাথা দিয়ে তাকিয়ে তাকিয়ে ভাবছি, আমি কখন বাড়ি ফিরেছি জিজ্ঞেস করল না তো? তাহলে কী ভুলে গেল যে আমি বাড়িতেই আছি? কত কিছু ভাবলাম, ওই চেনা গন্ধটা নাকে নিয়েই, কিন্তু ডান পাশ থেকে আর বা পাশে ফেরা হল না। বাড়িতে পুজো, সকাল সকাল উঠে পড়েছি, তখনও গন্ধটা নাকে লেগে আছে। আমি তো ঘুমোচ্ছিলাম না, আমার পরিষ্কার মনে আছে, আমি চেয়ে ছিলাম। খালি কোনও একটা অজ্ঞাত কারণে পাশ ফিরিনি, উঠেও যাইনি। ঘরের দরজা খোলা, তাকালেই বাবাকে দেখতে পেতাম কিন্তু তাকালাম না। অথচ পাঞ্জাবির রংটা তো ঠিক মনে আছে।
সকালে ঘুম ভাঙলেও সেই ঘোর কাটল না অভিনেত্রীর। সারাদিন একই কথা মনে ভিড় করেছে। স্বস্তিকার কথায়, "দিন গড়িয়ে সন্ধে নামার আগে ছাদে উঠে খুব মন দিয়ে ভাবলাম। রাত হতে চলল এখনও ভাবছি, একবার ঘুরে তাকালেই বাবাকে দেখতে পেতাম, কত বছর দেখিনি, তাকালাম না কেন? উঠে গেলাম না কেন? স্বপ্ন হলে সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে অবধি বাবার গায়ের গন্ধটা পেতাম? মাসিকে একটা কথাও জিজ্ঞেস করিনি। যদি মাসি বলে না কেউ আসেনি তো। কি জানি, পুজোর কটা দিন আমার কাছে থাকবে বলে বাড়ি ফিরল হয়তো। আবার যদি আসে, আমি যদি আবার দেখতে না পাই, যদি ডাকে শুনতে না পাই, এই ভয়ে ঘুমোতে পারি না। কত ওষুধ খাই তাও পারি না। যদি বাবা এসে ডাকে, আমি ভুলে গিয়েছি আর অপেক্ষা করি না ভেবে যদি সাড়া না পেয়ে চলে যায়? আর তো দেখতে পাব না। সবার বাবারা ভালো থাকুক। সন্তানেরা তাদের আগলে রাখুক। চলে গেলে সব ছাই।"