shono
Advertisement
Psoriasis

হঠাৎ করে র‌্যাশ বা চুলকানি, সোরিয়াসিস নয় তো?

গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানালেন বিশেষজ্ঞ।
Published By: Suparna MajumderPosted: 02:04 PM Nov 15, 2024Updated: 02:04 PM Nov 15, 2024

ত্বকের কিছু অসুখ প্রাথমিক পর্যায়ে র‌্যাশ বা চুলকানি হিসাবে দেখা দিলেও পরে তা আরও গভীরে গিয়ে জটিলতা তৈরি করতে পারে। সোরিয়াসিস এমনই একটি রোগ, যা সাধারণত চুলকানি দিয়ে শুরু হয় এবং ধীরে ধীরে পা থেকে মাথা পর্যন্ত ছড়িয়ে যায়। এই অসুখ কতটা মারাত্মক হতে পারে, এর পরিণতি এবং চিকিৎসার সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেছেন স্কুল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিনের চর্মরোগ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. গৌরব রায়

Advertisement

২০ বছর বয়সি যুবক আউটডোরে আসেন ত্বকের ছোট ছোট লাল র‌্যাশ নিয়ে। অসম্ভব চুলকানি ও তার সঙ্গে মাছের খোলসের মতো ছাল ওঠার সমস্যা। কখনও আবার এমন চুলকানি যে, রক্ত বেরিয়ে যাচ্ছিল। হঠাৎ করেই গত দু’মাস ধরে এই সমস্যা খুব বেড়ে যায়। এমনিতেই বয়স ও উচ্চতার তুলনায় রোগীর ওজন অস্বাভাবিক বেশি। কেন এমন হচ্ছে এটা নির্ণয় করতে গিয়ে দেখা যায় যুবকের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে সঙ্গে ডায়াবেটিস। ইনস্যুলিন নেয়। এছাড়াও আরও টেস্ট করে দেখা যা কোলেস্টেরলও বেশি। কিন্তু ত্বকের সমস্যা যেটা হচ্ছে সেটা নির্ণয় করে ধরা পড়ল সোরিয়াসিস।

হঠাৎ করেই এসবের সঙ্গে চামড়ার অসুখ কীভাবে শরীরে হল তা জেনে বেশ হতাশ হয়ে পড়ে রোগী ও তার পরিবার। কারণ কখনও কোনও অ্যালার্জি বা ইনফেকশন হয়নি। তাহলে? আসলে এই ধরনের ত্বকের অসুখের সঙ্গে মোটাবলিক ডিজিজেরও একটা যোগসূত্র আছে। কারণ এই অসুখগুলি রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয় ফলে ত্বকের এই অসুবিধাগুলি বৃদ্ধি পায়।

কেন হয়?
সোরিয়াসিস একটি দীর্ঘস্থায়ী ত্বক সংক্রান্ত রোগ, যা শরীরের ত্বকে সাদা বা রক্তবর্ণ চামড়া ওঠা, চুলকানি, বা ব্যথা সৃষ্টি করতে পারে। এটি একটি ইনফ্লেমেটারি ডার্মাটোসিস রোগ, যেক্ষেত্রে শরীরের সাইটোকাইনস (ইনফ্লেমেটারি মিডিয়েটর) বেশি পরিমাণে তৈরি হয়। যার ফলে চামড়া যে সময়ের মধ্যে সাধারণত তৈরি হয় সেই সময়ের আগেই তৈরি হতে শুরু করে। ফলে ত্বক জমতে থাকে ও ত্বকের ডেথ সেলগুলো ছালের আকারে ধীরে ধীরে উঠতে থাকে। সোরিয়াসিসের জন্য নির্দিষ্ট কোনও কারণ নেই, তবে বিভিন্ন পরিবেশগত এবং জেনেটিক উপাদান এতে ভূমিকা রাখতে পারে।

সোরিয়াসিস শরীরে প্রদাহ তৈরি করে। যার প্রভাব চামড়ায় পড়ে। তার সঙ্গে হাড়ের জয়েন্টেও এর প্রভাব পড়ে। প্রথমে ত্বকে লাল র‌্যাশ বের হয়, তারপর তা বাড়তে শুরু করে। সোরিয়াসিস সবচেয়ে বেশি দেখা যায় মাথার স্ক্যালে, কনুই, হাঁটু, হাতে বা পায়ে কিংবা হাতের গাঁটে গাঁটে। লাল র‌্যাশ, ছাল ওঠা দিয়ে সমস্যা শুরু হয়। এই সমস্যা খুব ঠান্ডা অথবা খুব গরমে বাড়তে পারে। কিছু সংক্রমণ যেমন সর্দি, কাশি হলে সোরিয়াসিস বাড়ে অথবা জেনেটিক কিছু ফ্যাক্টর থাকলেও এই অসুখ হয়। আসলে শরীরে সাইটোকাইনস অতিরিক্ত সক্রিয় হয়ে যাওয়ার জন্য এই রোগ মাথাচাড়া দেয়। এদেশে মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩-৪ শতাংশ মানুষ সোরিয়াসিসে ভোগেন।

কাদের হয়?
সাধারণত তিন ধরনের এজগ্রুপে এই ধরনের ত্বকের অসুখ হতে পারে। একেবারে শিশুকালে, যাকে বলা হয় চাইল্ডহুড সোরিয়াসিস। আর্লি অনসেট সোরিয়াসিস সাধারণত ১৫-২৫ বছর বয়সিদের হতে পারে। আর হয় বয়সকালে। হলে সারাজীবনই এই সমস্যা ভোগ
করতে হবে।

কোন লক্ষণ দেখলে সাবধান হবেন?
সোরিয়াসিসের উপসর্গ বিভিন্ন ধরনের হতে পারে, তবে সাধারণভাবে দেখা যায়:
চামড়া ওঠা: সোরিয়াসিসের সবচেয়ে সাধারণ উপসর্গ হল ত্বকে সাদা বা রক্তবর্ণ চামড়া বা খোলস ওঠা।
চুলকানি: আক্রান্ত ত্বক চুলকাতে পারে এবং মাঝে মাঝে ব্যথা বা রক্তক্ষরণও হতে পারে।
খসখসে ত্বক: আক্রান্ত এলাকায় ত্বক শুষ্ক এবং খসখসে হয়ে যেতে পারে।
নখের পরিবর্তন: সোরিয়াসিসের কারণে নখে ছোট ছোট গর্ত বা সাদা সাদা দাগ হতে পারে। তৈরি হতে পারে বা নখে সাদা দাগ পড়তে পারে।
হাড়ের সমস্যা: কিছু ক্ষেত্রে সোরিয়াসিস জেনেটিক ফ্যাক্টরের কারণে আথ্রাইটিস (হাত-পায়ের আঙুলের জয়েন্টে, হাঁটুর জয়েন্টে) তৈরি করতে পারে, যা ‘পসোরিয়াটিক আর্থ্রাইটিস’ হিসাবে পরিচিত।

চিকিৎসা কী?
যেহেতু সোরিয়াসিস একটি দীর্ঘস্থায়ী রোগ, তাই এর পূর্ণ নিরাময় সম্ভব নয়। তবে, সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে রোগের উপসর্গ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। মলম, শ্যাম্পু, ওষুধ এবং বিভিন্ন থেরাপি রয়েছে, যেগুলির প্রয়োগে সমস্যা প্রতিহত করা সম্ভব। কারও সোরিয়াসিস হলে ত্বকের চিকিৎসায় মলম ব্যবহার করা হয়। মাথার ত্বকে হলে, নির্দিষ্ট শ্যাম্পু ব্যবহার করা হয়। প্রয়োজনে ওষুধও খেতে দেওয়া হয়। এছাড়াও, সোরিয়াসিসের চিকিৎসায় বেশ কিছু আধুনিক পদ্ধতি রয়েছে। যেমন, বায়োলজিক থেরাপি, লাইট থেরাপি বা ইউ-ভি বি লাইট, এগজিমার লেজার থেরাপি করেও রোগকে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। তবে রোগী ও রোগের প্রকারের উপর নির্ভর করে কার কোন পথে চিকিৎসা হবে। যদি সোরিয়াসিস কোনও ইনফেকশন বা গলার ইনফেকশনের কারণে বৃদ্ধি পায় (গেটেড সোরিয়াসিস), তবে অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ করা হতে পারে।

যেগুলি না করাই ভালো
সাধারণত যাঁদের সোরিয়াসিস থাকে তাঁরা যদি ধূমপান ও মদ্যপান করেন, ওজন নিয়ন্ত্রণে না রাখেন তাহলে সমস্যা আরও বাড়তে পারে।
এছাড়া কিছু ওষুধ রয়েছে যেগুলি সেবন করলেও সোরিয়াসিসের প্রভাব বেড়ে যায়। যেমন- ম্যালেরিয়ার ওষুধ, অ্যান্টি ফাংগাল ওষুধ যেগুলি খাওয়া হয়, বিটাব্লকার যুক্ত রক্তচাপের ওষুধ সমস্যা বাড়ায়। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এসব ওষুধ খাওয়াই যাবে না।
এছাড়া কোনও সাইকোলজিক্যাল স্ট্রেস বা মানসিক চাপ থাকলে সমস্যা বাড়তে পারে।
যাদের সোরিয়াসিস থাকে দেখা যায় তাদের কোথাও কেটে গেলে বা ক্ষত হলে সেখানেও সোরিয়াসিস হতে শুরু করে। তাই এসব যাতে না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
সোরিয়াসিসের চিকিৎসার পাশাপাশি রোগীকে নিয়মিত ত্বক পরিচর্যা এবং সঠিক খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করা উচিত। স্ট্রেস কমানো, পর্যাপ্ত ঘুম ও হাইড্রেশন বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • সোরিয়াসিস একটি দীর্ঘস্থায়ী ত্বক সংক্রান্ত রোগ, যা শরীরের ত্বকে সাদা বা রক্তবর্ণ চামড়া ওঠা, চুলকানি, বা ব্যথা সৃষ্টি করতে পারে।
  • এটি একটি ইনফ্লেমেটারি ডার্মাটোসিস রোগ, যেক্ষেত্রে শরীরের সাইটোকাইনস (ইনফ্লেমেটারি মিডিয়েটর) বেশি পরিমাণে তৈরি হয়।
Advertisement