সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ‘আমরা মরতে চলেছি।’ ক্যাপ্টেন দেবীশরণের এই তিনটি শব্দে হাড়হিম হয়ে গেল অমৃতসর এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলারের। কারওরই আর বুঝতে বাকি রইল না যে কী হতে চলেছে। ততক্ষণে রানওয়ে দিয়ে চাকা গড়িয়েছে IC-814 বিমানের। ‘ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্স’-এর এই অভিশপ্ত যানটির ককপিটের দখল তখন ফিদায়েঁ জঙ্গিদের হাতে। বাকিটা ইতিহাস। ১৯৯৯ সালের কান্দাহার বিমান অপহরণ মামলার ক্ষতে এখনও প্রলেপ পড়েনি। আর সেই স্মৃতি উসকে দিয়ে আবারও আফগানিস্তান দখল করেছে তালিবান। ফলে ফের কান্দাহার বিমান হাইজ্যাকের মতো ঘটনা ঘটতে পারে বলেই আশঙ্কা নিরাপত্তা মহলে।
[আরও পড়ুন: Afghanistan crisis: কাবুলিওয়ালার দেশে ৩০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ ভারতের, তালিবান শাসনে কি জলে যাবে সব?]
আফগানিস্তানে তালিবান শাসনের দ্বিতীয় দিনে যে খবর আসছে তা বিশেষ আশা জাগানোর মতো নয়। মুখে নারী সুরক্ষা ও সন্ত্রাস রপ্তানি বন্ধ করার আশ্বাস দিয়েছে তালিবান মুখপাত্র জাবিউল্লা মুজাহিদ। কিন্তু কাবুলে ইসলামিক স্টেট, লস্কর ও জইশ জঙ্গিদের অবাধ প্রবেশ ও বিচরণ অন্য চিত্রই তুলে ধরছে। এটা স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে যে আফগানভূমে আবার শিকড় মজবুত করতে চলেছে ভারত বিরোধ ও পাকিস্তানের মদতপুষ্ট জঙ্গি সংগঠনগুলি। মনে রাখা দরকার, ১৯৯৯ সালে কান্দাহার বিমানবন্দরে অপহরণকরীদের জামাই আদর করেছিল তৎকালীন তালিবান সরকার। বিমানে পণবন্দি যাত্রীদের উদ্ধারে যাতে ভারতীয় কমান্ডোরা কোনও ‘অপারেশন’ চালাতে না পারে সেই ব্যবস্থা পাকাপোক্ত করতে IC-814 বিমানের চারিদিকে সাঁজোয়া গাড়ি মোতায়েন করেছিল তালেবরা। একপ্রকার বাধ্য হয়ে জইশ-ই-মহম্মদের প্রতিষ্ঠাতা ও মুম্বই হামলার অন্যতম চক্রী মাসুদ আজহার, মুস্তাক আহমেদ জরগার ও ওমর সইদ শেখের মতো তিন কুখ্যাত জঙ্গিকে মুক্তি দিয়েছিল ভারত। আর সেই সব দিনের সাক্ষী ছিলেন ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোর তৎকালীন প্রধান তথা ভারতের বর্তমান জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল। তিনি সাফ জানিয়েছিলেন যে অপহরণকারীদের মদত দিচ্ছিল আইএসআই। কান্দাহার বিমানবন্দরেও মজুত ছিলেন আইএসআই অফিসাররা। সেই ঘটনার পর প্রায় দু’দশক কেটে গিয়েছে। কাবুলে প্রতিষ্ঠিত হয় ভারতবন্ধু গণতান্ত্রিক সরকার। কিন্তু মার্কিন সেনা চলে যাওয়ার পরই পালটে গিয়েছে চিত্র। নয়াদিল্লিকে অথৈ জলে ফেলে ও পাকিস্তানের মুখে হাসি ফুটিয়ে আফগানিস্তানে রাজত্ব কায়েম করেছে তালিবান। ফলে আবারও ভারতীয় বিমান অপহরণ করে কান্দাহার বা কাবুল নিয়ে যাওয়ার পরকল্পনা করতেই পারে পাকপন্থী জঙ্গিরা। আর আইএসআইয়ের নির্দেশে আবারও কোনও কুখ্যাত জঙ্গির মুক্তির দাবি জানতে পারে জঙ্গিরা। ফলে সবদিক খতিয়ে দেখলে কাবুলে তালিবানের শাসন প্রতিষ্ঠায় কাশ্মীর নিয়ে সাউথ ব্লকের উদ্বেগ যে কয়েকগুণ বেড়ে গিয়েছে তা স্পষ্ট। আর ভবিষ্যতের গর্ভে কী লুকিয়ে আছে তা সময়ই বলবে।
যাই হোক, গল্প অসম্পূর্ণ রাখতে নেই। অমৃতসর বিমানবন্দর থেকে জ্বালানি না ভরেই লাহোরের উদ্দেশে রওনা দেয় এয়ারবাস এ-৩০০ বিমানটি। সেখান থেকে কান্দাহার বিমানবন্দরে পাড়ি দেয় সেটি। অবশ্য তার আগেই এক যাত্রীকে কুপিয়ে খুন করে জঙ্গিরা। ১৯৯৯ সালের ২৪ ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া এই বিভীষিকাময় অধ্যায় শেষ হয় ৩১ ডিসেম্বর। ভারতের মুক্তি দেওয়া তিন জেহাদিকে ও হাইজ্যাকারদের কোয়েটা পৌঁছে দেয় তালিবান। তারপর অন্য যাত্রীদের সঙ্গে মুক্তি পান অভিশপ্ত IC-814 বিমানের ক্যাপ্টেন দেবীশরণ। কিন্তু সেই ঘটনার ফল আজ ভোগ করতে হচ্ছে দেশকে। ২০০০ সালে জইশ প্রতিষ্ঠা করে কান্দাহারে মুক্তি পাওয়া মাসুদ আজহার। পাকিস্তানে ড্যানিয়েল পার্ল হত্যায় হাত ছিল জড়ায় ওমর শেখের। এবারেও কী তেমনই কোনও ঘটনা ঘটবে? আর দেশবাসীর প্রশ্ন একটাই, ফের যদি কান্দাহার বিমান অপহরণের মতো ঘটনা ঘটে, তা হলে কি মোদি সরকার তার জন্য প্রস্তুত। আপাতত উত্তর সময়ের গর্ভে।