সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ (The Kerala Story) নিয়ে উত্তাল গোটা দেশ। ছবি দেখে এবার মতামত প্রকাশ করলেন বাংলাদেশের বিতর্কিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন (Taslima Nasrin)। পরিচালক সুদীপ্ত সেনের ছবির সঙ্গে ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’-এর তুলনাও করলেন তিনি।
তসলিমা জানান, ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’ আর ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ দেখে তাঁর একই ধরনের অনুভূতি হয়েছে। “যেন মুসলমান মাত্রই বদের হাড্ডি, মুসলমান মাত্রই আতঙ্কবাদী”, এমনটাই লেখেন তিনি। লেখিকার কথায়, “পৃথিবীর প্রায় ১.৯ বিলিয়ন মুসলমান যদি জঙ্গি হতো, তাহলে পৃথিবীর কী হাল হতো, তা নিশ্চয়ই অনুমান করতে পারি। মুসলমানদের মধ্যে বেনামাজি, বেরোজদার বহুত, মুসলমানদের মধ্যে ধর্ম না-জানা, ধর্মের নানা রকম রুলস এবং রিচুয়ালস না-পালন করা লোকের সংখ্যাই, আমার বিশ্বাস, বেশি। মেয়েদের সমানাধিকারে আর মানবাধিকারে বিশ্বাস করা শিক্ষিত সভ্য লোকের সংখ্যাও এই সম্প্রদায়ে নেহাত কম নয়। এগনোস্টিক আর এথিস্টের সংখ্যাও তো বাড়ছে। এরা ধর্ম ঠিকঠাক না মানলেও এদের মুসলমান বলেই ডাকা হয়, যেমন ইহুদি, খ্রিস্টান, হিন্দু, বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ধর্ম না মানা লোকদেরও ইহুদি, খ্রিস্টান, হিন্দু, বৌদ্ধ বলে ডাকা হয়। এসব তাদের ধার্মিক পরিচয় নয়, এসব সাংস্কৃতিক পরিচয়।”
[আরও পড়ুন: ‘ওরা আমার মেয়েকেও ছাড়েনি!’ ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলসে’র স্মৃতি ফেরালেন বিবেক অগ্নিহোত্রী]
তসলিমার মতে ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ কোনওভাবেই উন্নতমানের সিনেমা নয়। এতে কিছু সত্যি, আর কিছু অতিরঞ্জন রয়েছে। মানবতা বিরোধী আর নারীবিরোধী শ্লোকগুলো বিভিন্ন কথোপকথনের গুঁজে দেওয়া হয়েছে। আর তাই সংলাপ স্বাভাবিক এবং স্বতস্ফূর্ত মনে হয়নি। ISIS-দের বর্বরতা আর বীভৎসতা নিয়ে বেশ কয়েকটি সিনেমা তৈরি হয়েছে। সেগুলি ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ থেকে ভাল বলেই মনে করেন তিনি। কেরালার ৩২০০০ মেয়ে ISIS-এ যোগ দিয়েছে এই তথ্য নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেছেন তসলিমা।
সবশেষে তসলিমা লেখেন, “‘দ্য কেরালা স্টোরি’ আমার পছন্দের সিনেমা নয়। তাই বলে আমি কিন্তু চাই না এই সিনেমা কোথাও নিষিদ্ধ হোক, কোথাও এর প্রদর্শনী কোনও কারণে বন্ধ থাকুক। এই সিনেমা হয়তো কিছু মানুষকে মুসলিমবিরোধী হতে উদ্বুদ্ধ করবে। অনেক শিল্প সাহিত্যেই কোনও দর্শনের বিপক্ষে, কোনও জাতি বা সম্প্রদায় বা ব্যক্তির কার্যকলাপের বিরুদ্ধে সমালোচনা থাকে, তাই বলে সেইসব শিল্প সাহিত্যকে ঝেঁটিয়ে বিদেয় করতে হবে কেন! দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের উপর তৈরি সিনেমাগুলো দেখে জার্মান জাতির ওপর দর্শকরা ক্ষুব্ধ হতে পারে, তাই বলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ওপর সিনেমা বানানো বন্ধ করতে হবে নাকি! ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ যারা নিষিদ্ধ করতে চাইছে, তাদের ক্ষোভের বারুদে আগুন নিক্ষেপ না করে বরং ‘দ্য ইউপি স্টোরি’ নামে সিনেমা বানান! কেউ তো বাধা দেয়নি।”